জানুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ভারতীয় এই কোম্পানির দুটি কাশির সিরাপকে ‘নিম্নমানের’ অ্যাখ্যা দিয়ে সেগুলো খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছিল।
Published : 23 Mar 2023, 05:31 PM
উজবেকিস্তানে ১৮টি শিশুর মৃত্যুতে যে কোম্পানির কাশির সিরাপের নামে অভিযোগ এসেছে, সেই ম্যারিয়ন বায়োটেকের ওষুধ বানানোর লাইসেন্স বাতিল করল ভারত।
এ বছরের জানুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ভারতীয় এই কোম্পানির দুটি কাশির সিরাপকে ‘নিম্নমানের’ অ্যাখ্যা দিয়ে সেগুলো খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছিল।
ম্যারিয়ন বায়োটেক তাদের বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে, জানিয়েছে বিবিসি।
উজবেকিস্তানে শিশু মৃত্যুর সঙ্গে কোম্পানিটির নাম জড়িয়ে পড়ার পর পরই ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ম্যারিয়নের উৎপাদন সাময়িক বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল।
বুধবার কোম্পানিটি যে রাজ্যে অবস্থিত, সেই উত্তর প্রদেশের কর্তৃপক্ষ ম্যারিয়নের লাইসেন্স ‘স্থায়ীভাবে’ বাতিল করার কথা জানায়।
“নয়দা শহরভিত্তিক কোম্পানিটি এখন থেকে আর কোনো ওষুধ উৎপাদন করতে পারবে না,” হিন্দুস্তান টাইমসকে এমনটাই বলেছেন ওষুধ পরিদর্শক বৈভব বাব্বর।
বিবিসি এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া চেয়ে রাজ্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাৎক্ষণিকভাবে তাদের কাছ থেকে সাড়া পায়নি।
ম্যারিয়ন বায়োটেকও মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
ভারত জেনেরিক ওষুধের সর্ববৃহৎ রপ্তানিকারক, উন্নয়নশীল দেশগুলোর বেশিরভাগ ওষুধ তাদের কাছ থেকেই যায়।
তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অনেক ভারতীয় ওষুধ কোম্পানিই তাদের ওষুধের নিম্নমানের কারণে আলোচনায় এসেছে; বিশেষজ্ঞরা এখন দেশটিতে ওষুধ উৎপাদন ও সেখানে নজরদারি প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন।
ডিসেম্বরে সরকারি এক গবেষণাগারে হওয়া পরীক্ষায় ম্যারিয়ন বায়োটেকের কাশির সিরাপের ২২টি নমুনায় ‘ভেজাল’ শনাক্ত হয়; তারই ধাক্কায় এবার তাদের লাইসেন্সই বাতিল হল।
চলতি মাসের শুরুর দিকে উত্তর প্রদেশের পুলিশ ভেজাল পণ্য বিক্রির অপরাধে কোম্পানিটির তিন কর্মীকে গ্রেপ্তারও করেছিল।
বুধবার উত্তর প্রদেশের ওষুধ নিবন্ধক কর্মকর্তা এসকে চৌরাসিয়া বলেন, গবেষণাগারে তারা যা পেয়েছেন সে বিষয়ে ম্যারিয়নকে পাঠানো নোটিসের সন্তোষজনক জবাব দিতে কোম্পানিটি ব্যর্থ হয়েছে।
উজবেকিস্তানে ১৮ শিশু মৃত্যুর সঙ্গে যোগসূত্র পাওয়ায় ডব্লিউএইচও ম্যারিয়নের ডক-১ ম্যাক্স ও অ্যামব্রোনল কাশির সিরাপ নিয়ে বিশ্বজুড়ে সতর্কতা জারি করার পর ভারত কোম্পানিটির বিরুদ্ধে তদন্তে নামে।
উজবেকিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মান নিয়ন্ত্রণ গবেষণাগার ওষুধগুলোতে ‘অস্বাভাবিক মাত্রার’ ডাইইথিলিন গ্লাইকল ও ইথিলিন গ্লাইকল পেয়েছে বলে ডব্লিউএইচও সেসময় বলেছিল।
এই রাসায়নিকগুলো মানবদেহের জন্য বিষাক্ত এবং এটি সেবন মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
জানুয়ারিতে বিবিসির প্রশ্নের ইমেইলে দেওয়া জবাবে ম্যারিয়ন বলেছিল, তারা ডব্লিউএইচওর ভাষ্যের সঙ্গে একমত হতে পারছে না। ভারত সরকার এই ব্যাপারে যে তদন্ত করছে, তাতে সহযোগিতা করা হচ্ছে বলেও সেসময় জানিয়েছিল তারা।
কেবল ম্যারিয়ন বায়োটেকই নয়, ভারতের আরও কিছু ওষুধ কোম্পানির কাশির সিরাপ নিয়েও বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বিদ্যমান।
গত বছরের অক্টোবরে ডব্লিউএইচও গাম্বিয়ায় কিডনি জটিলতায় ৬৬ শিশুর মৃত্যুর সঙ্গে যোগসূত্র পেয়ে মেইডেন ফার্মাসিউটিক্যালসের চারটি কাশির সিরাপ নিয়ে বিশ্বজুড়ে সতর্কতা জারি করেছিল।
ওই চারটি কাশির সিরাপ নিম্নমানের, মেইডেন ফার্মাসিউটিক্যালস ও ভারত সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।