পিরিয়ডে সবেতন ছুটি দিতে আইন পাস স্পেনে

স্পেনে এই আইন অনুমোদনের মধ্যে দিয়ে পুরো ইউরোপে প্রথম ’মেন্সট্রুয়াল লিভ’ চর্চা শুরু হলো।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Feb 2023, 05:23 PM
Updated : 17 Feb 2023, 05:23 PM

মাসের বিশেষ দিনের রক্তপাতে যারা পেট ও কোমরের ব্যথায় কাতর হয়ে পড়েন, তারা এখন কর্মক্ষেত্রে ছুটি নিতে পারবেন। আর এজন্য তাদের বেতন কাটা হবে না এখন থেকে।

পুরো ইউরোপে স্পেনই প্রথম এমন আইন চালু করল।

বৃহস্পতিবার স্পেনের সংসদে এই আইন অনুমোদন পায় বলে জানাচ্ছে ইউরোনিউজ ডটকম।

ঋতুবতীদের মাসিকের সময় তিন দিনের ছুটির অধিকার দিয়েছে স্পেনের এই আইন। যাদের অসহ্য ব্যথা, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব এবং বমি হয় তাদের বেলা এই ছুটি পাঁচ দিন পর্যন্ত হতে পারে।

এই ছুটির জন্য অবশ্য চিকিৎসকের পরামর্শপত্র নিতে হবে। ঋতুবতী ব্যক্তির হয়ে খরচ বহন করবে স্পেনের পাবলিক সোশাল সিকিউরিটি সিস্টেম।

আইনে বলা হয়েছে, এর বাস্তবায়নে নারীর জীবনে পিরিয়ডকে ঘিরে নানা কুসংস্কার এবং অন্ধ বিশ্বাস মোকাবিলা করা সহজ হয়ে উঠবে।

স্পেনের ইকুয়ালিটি মন্ত্রী আইরিন মনতেরো নতুন আইন পাসের মুহূর্তকে ‘নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার অগ্রযাত্রায় এক ঐতিহাসিক দিন’ হিসেবে সাধুবাদ জানান।

তিনি বলেন, “এই আইন বাস্তবায়নে বাধা থাকবে, যে বাধা আগেও ছিল এবং আগামীতেও থাকবে যে কোনো নারীবাদী আইনের প্রয়োগের বেলায়।

প্রজনন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সংস্কার নিয়ে বড় পরিসরে কাজ করছে দেশটি। গত বছর এই আইনের খসড়া প্রকাশ পায় স্পেনের সংবাদমাধ্যমে।

ওই খসড়া তৈরিতে কাজ করেছেন নারীবাদী আইরিন মনতেরো।  

তখন তিনি বলেছিলেন, ”পিরিয়ডের যন্ত্রণা নিয়ে কাজে যাওয়ার দিনের অবসান হলো।”

বিশ্বে হাতে গোনা কয়েকটি দেশ মাসিকের দিনে কর্মক্ষেত্রে ছুটি দিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে জাপান, তাইওয়ান, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাম্বিয়া।

স্প্যানিশ গাইনোকলজি এবং অবস্টেট্রিকস সোসাইটি বলছে, মাসিক হচ্ছে এমন নারীদের প্রায় এক তৃতীয়াংশ অতিরিক্ত শারীরিক যন্ত্রণায় ভোগেন; এর নাম ডিসমেনোরিয়া।

এ সময় তারা পেটে তীব্র প্রদাহ, ডায়রিয়া, মাথাব্যথা এবং জ্বরে ভোগেন।

স্পেনে সমাজবাদীদের কেউ কেউ অবশ্য এই আইনের বিরোধীতা করছে।

তাদের ভাষ্য, পিরিয়ডে ছুটি নেওয়ার এই সুবিধা নারীর বিরুদ্ধেই যাবে; অনেক কর্মক্ষেত্র এখন হয়ত নারীকর্মী নিয়োগে পিছিয়ে আসবেন।

আবার স্পেনের কিছু ব্যবসায়ী সংগঠন এই মেস্ট্রুয়াল লিভ আইনটিকে সাধুবাদ জানিয়েছে। তবে আইনের বিস্তারিত নিয়ে তাদের উদ্বেগও রয়েছে।

ছুটি পেতে এন্ডোমেট্রিওসিস অথবা পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে ভোগা নারীকে শারীরিক যন্ত্রণার প্রমাণ দিতে হবে কি না সেই প্রশ্ন তুলেছে তারা।

নতুন এই আইনের অধীনে নারীস্বাস্থ্যের পরিচ্ছন্নতার পণ্যগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জেলখানায় বিনামূল্যে দেওয়ার কার্যক্রম হাতে নেবে দেশটি।

গর্ভপাতে কড়াকড়ি আরোপ করে ২০১৫ সালে দেশটি যে আইন করেছিল, তা এবার শিথিল করা হয়েছে।

এখন ১৬ বছর বয়সী কেউ যে কোনো সরকারি হাসপাতালে গর্ভপাত করাতে পারবে; এজন্য তার বাবা-মা অথবা আইনি অভিভাবকের অনুমোদন প্রয়োজন হবে না।