যাত্রীদের বিধিনিষেধ মানার কথা বলার পর তারা ‘খুবই সহজভাবে’ মেনে নিয়েছেন বলে জানালেন স্বেচ্ছাসেবীরা।
Published : 29 Dec 2022, 07:21 PM
প্রথমবার মেট্রোরেল চড়তে গিয়ে সাধারণ মানুষরা যে ‘আচরণ করেছেন’ তাতে মেট্রো স্টেশনে সহযোগিতার দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবীরাও ‘খুশি’।
উন্নত বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় গণপরিবহন মেট্রোরেল; তবে এদেশে এই পরিবহন নতুন। সেজন্য চলাচল শুরুর প্রথম দিনে যাত্রীদের দিক-নির্দেশনা ও সহযোগিতা দিতে দুটি স্টেশনে ৪০ জন ‘কাস্টমার ফ্যাসিলিটেটর অ্যাসিস্ট্যান্ট’ নিয়োগ দেয় কর্তৃপক্ষ।
এর দায়িত্বে থাকা কর্মীরা কনকোর্স ফ্লোরে যাত্রী ওঠার পর টিকেট কাউন্টার, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির টিকেট মেশিন, প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা কাউন্টার দেখিয়ে দিতে সহযোগিতা করেছেন।
এছাড়া টিকেট সংগ্রহের পর প্ল্যাটফর্মে ওঠার সিঁড়ি বা এস্কেলেটর, প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক যাত্রীদের লিফটের দিকে নিয়ে যাওয়াসহ সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছিলেন তারা।
বৃহস্পতিবার প্রায় তিন ঘণ্টা উত্তরা উত্তর স্টেশনে দায়িত্ব পালন করেন দিগন্ত স্কাউট গ্রুপের স্বেচ্ছ্বাসেবী নূর নবী।
বেলা ১১টার দিকে জানতে চাইলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “প্রথম দিকে আমরা ভয় পেয়েছিলাম সাধারণ যাত্রীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারব কি না। উল্টা-পাল্টা আচরণ করে কি না শঙ্কায় ছিলাম।
“আমাদের খুবই ভালো লাগছে যে, অনেকেই দিক-নির্দেশনা দেখে প্রয়োজনীয় সেবার দিকে এগিয়ে গেছে। আবার যাদের সমস্যা হয়েছে তারা খুব সহজেই আমাদের সহযোগিতা চেয়েছেন। আমরাও দ্রুত তাদের সহযোগিতা করতে পেরেছি।
“এতক্ষণ ধরে সাধারণ যাত্রীদের হ্যান্ডল করছি কেউ কোনও ধরনের সমস্যা করেনি। আমাদের যাত্রীদের এই ইতিবাচক আচরণ আমাদের খুবই ভাল লেগেছে।”
সরেজমিনে আগারগাঁও স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ৮টার আগেই বিপুল সংখ্যক যাত্রী মেট্রোরেল ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিতে হাজির স্টেশনে। একসঙ্গে অনেক যাত্রী কনকোর্স ফ্লোরে উঠলে চাপ সামাল দেওয়া কঠিন হতে পারে- সেই বিবেচনায় একসঙ্গে ৮ থেকে ১০ জন করে যাত্রীকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল। ফলে নিচে তৈরি হয়েছিল দীর্ঘ লাইন।
অপেক্ষার কষ্ট শেষে মেট্রোরেলে ১০ মিনিটের আনন্দ ভ্রমণ
আবার কনকোর্স ফ্লোরে একদিকে টিকেট কাটার মেশিন বিকল হয়ে যাওয়ায় কাউন্টার থেকে টিকেট নিতে হয়েছে; এতেও অনেকক্ষণ সময় লেগেছে। তবে এ নিয়ে তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার কথা শোনা যায়নি।
এসময় দেখা যায়, যাত্রী সহযোগিতায় নিয়োজিত কর্মীদের কেউ প্রতিবন্ধীকে, কেউ বৃদ্ধ, আবার কেউ নারী ও শিশুকে প্রয়োজনমত সহযোগিতা দিচ্ছেন।
আগারগাঁও থেকে উত্তরা যাওয়ার পথে কথা হয় ফ্রেন্ডস ওপেন স্কাউটস এর স্বেচ্ছাসেবী গোলাম সারওয়ারের সঙ্গে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে তিনি জানান, মেট্রোরেলের যাত্রীদের সেবা দিতে প্রায় ১৫০ জন স্কাউটসকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার সব মিলে ৪০ জনের মত দায়িত্ব পালন করেছেন তারা।
রেলকোচে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “মানুষের মধ্যে এক অদ্ভুত আনন্দ উচ্ছ্বাস দেখতে পাচ্ছি। কাউকে কোনও বিষয়ে সহযোগিতা বা বিধিনিষেধ যাই করা হচ্ছে- খুব সহজেই তা গ্রহণ করে মেনে নিচ্ছেন।
“সকাল থেকে আমি অনেককে অনেক ধরনের সহযোগিতা ও বিধিনিষেধ মানতে বাধ্য করেছি। সবাই খুবই সহজভাবে মেনে নিয়েছে। সামান্যটুকুও উল্টা পাল্টা করতে চাননি।”
একই স্টেশনে দেখা হয় আরেক স্বেচ্ছ্বাসেবী মহুয়া ইসলাম মিতুর সঙ্গে। তিনি বললেন, “ভালো লাগছে, যাত্রীরা সব ধরনের নির্দেশনা হাসিমুখে মেনে নিচ্ছেন।”
এদিকে দেশে প্রথম মেট্রোরেলের প্রথম দিনের যাত্রী হয়ে ইতিহাসের স্বাক্ষী হতে আগারগাঁও স্টেশনে এসেছিলেন ব্যবসায়ী মো. ওমর ফারুক। তিনি বলেন, আমি থাকি মিরপুরে, যাব উত্তরা।
“প্রায় সময় আমার উত্তরা যেতে হয়। এখন মেট্রোরেল হওয়াতে আমি খুবই উচ্ছ্বসিত। মাত্র ১৫ মিনিটে আমি আগারগাঁও থেকে উত্তরা চলে যাব, এটা ভাবতেই আমি খুবই আনন্দ পাচ্ছি।”