বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলছে, ‘সাধারণ ছাত্রদের ব্যানার’ ব্যবহার করে গণমাধ্যমের ওপর হামলা করা হয়েছে।
Published : 19 Aug 2024, 07:48 PM
বসুন্ধরা গ্রুপের মিডিয়া হাউজ ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপে হকিস্টিক ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে একদল লোক।
সোমবার দুপুর ২টার দিকে ৭০-৮০ জনের একটি দল মিছিল নিয়ে গিয়ে সেখানে হামলা চালায়। হামলাকারীদের অনেকের হাতে হকিস্টিকসহ লাঠিসোঁটা ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় পাশপাশি তিনটি ভবনে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের প্রতিষ্ঠান কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ডেইলি সান, বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, নিউজ টোয়েন্টিফোর, টি স্পোর্টস ও ক্যাপিটাল এফএম রেডিওর অফিস রয়েছে।
ওই গ্রুপের একজন সংবাদকর্মী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আকস্মিকভাবে ৭০-৮০ জনের একটি দল স্লোগান দিয়ে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ অফিসের সামনে আসে। তারা ভবনের সামনে রাখা অন্তত ২০টি গাড়িতে ভাংচুর চালায়। ভবনের সামনের কাচের দেয়াল ও দরজা ভাংচুর করে কিছুক্ষণের মধ্যে চলে যায়।”
নিরাপত্তা কর্মীদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, “মূল ফটকে থাকা ৭-৮ জন নিরাপত্তাকর্মীর বাধা উপেক্ষা করে তারা হামলা চালায়। হামলার আগে আশপাশের গলিতে তারা খণ্ড খণ্ড গ্রুপে জমায়েত হয়। পরে ৩০০ ফুট সড়ক থেকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় প্রবেশের প্রধান সড়কের দিক থেকে মূল মিছিলটি এলে ছোট গ্রুপগুলো মিছিলের সঙ্গে মিশে একসঙ্গে হামলা চালায়।”
এ সময় ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’; ‘খুনি হাসিনার বিচার চাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা যায় তাদের।
নিরাপত্তাকর্মীরা জানান, স্লোগান দিতে দিতে হামলাকারীরা জোর করে প্রধান ফটক খুলে ভেতরে প্রবেশ করে ভাংচুর শুরু করে। এ সময় তারা রেডিও ক্যাপিটালের ভেতরে ঢুকেও ভাঙচুর চালায়। সেখানে টেবিল, কম্পিউটার, এসি সবকিছুতে ভাঙচুর করা হয়।
অতর্কিত এ হামলায় কেউ হতাহত না হলেও পুরা কমপ্লেক্সে সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ সমন্বয়ক পরিচয়ে কয়েকজন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বিকেলে ঘটনাস্থলে যায় সেনাবাহিনীর টহল টিমও।
ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষার্থী তানজিবা এ সময় বলেন, “আমাদের মধ্যে প্রতিহিংসার কোনো জায়গা নেই। আমরা রাষ্ট্রের জন্য কাজ করছি, রাষ্ট্রের কোনো সম্পদের ক্ষতি হোক আমরা চাই না। রাষ্ট্রের গণমাধ্যম যারা আমাদের সংবাদ প্রচার করেছে, যারা আমাদের পাশে থেকেছে, রাষ্ট্রের অবস্থা সবার কাছে তুলে ধরছে, তাদের উপর এভাবে হামলা হোক আমরা কখনোই চাই না।
“আমরা গণমাধ্যমের পাশে আছি, যাতে এ ধরনের কাজ না হয়। দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করা হোক, আমাদের জানার দরকার আছে যারা এখানে এসেছে তারা ছাত্র কি-না। আমরা শতভাগ নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যারা এসেছে তারা ছাত্র না।”
অপর এক শিক্ষার্থী এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, “আমাদের সাধারণ ছাত্রদের ব্যানার ব্যবহার করে গণমাধ্যমের ওপর হামলা করা হয়েছে। অন্যান্য গণমাধ্যমকে বলব, যদি কেউ শিক্ষার্থী পরিচয়ে বা আমাদের ব্যানার ব্যবহার করে কেউ হামলা চালাতে চায় সেক্ষেত্রে তাদেরকে যথাযথ আইনের আওতায় নিয়ে আসবেন। আমাদের শিক্ষার্থীরা আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব গণমাধ্যমকে সহযোগিতা করার জন্য।
“আমাদের ট্যাগ ব্যবহার করে যারা হামলা চালাচ্ছে বা হামলা চালানের প্রস্তুতি নিচ্ছে তাদের হুঁশিয়ার করে বলতে চাচ্ছি, আপনারা এ দুর্বৃত্তপনা থেকে বেরিয়ে আসুন। গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি আহ্বান থাকবে, আমরা ছাত্রসমাজ আপনাদের পাশে আছি। আমরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মিলে এ দূর্বৃত্তপনাকে রুখে দেব।”
নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হাসনাত বলেন “একটা বিপ্লবকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য অনেক মহলই অনেক কিছু করে থাকে। কিছু মানুষ তাদের পার্সোনাল এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষার্থীদের নামটাকে বার বার ব্যবহার করে যাচ্ছে। এ ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই জড়িত না। মিডিয়ার সেইফটি সিকিউরিটির জন্য আমরা আলাভাবে কাজ করছি।
“দেশের অন্যান্য শিক্ষার্থীদেরও বলব, মিডিয়া হচ্ছে সমাজের আয়না, এ আয়নাটাতে যাতে কেউ দাগ লাগাতে না পারে সেজন্য আপনারা সবজায়গায় গণমাধ্যমের সাথে একাত্ততা করে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন।”