জরিপে অংশ নেওয়া অর্ধেকের বেশি সাংবাদিক নিজের কাজে এআই ব্যবহার করার কথা বলেছেন; কিন্তু বার্তাকক্ষে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এর ব্যবহার মাত্র ২০ শতাংশ।
Published : 26 Oct 2024, 07:40 PM
বাংলাদেশের সাংবাদিকদের অনেকে ব্যক্তিগতভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করলেও বার্তাকক্ষে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এর ব্যবহার এখনও বেশি নয়; আর এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমগুলো নীতিমালাও তৈরি করেনি বলে এক জরিপে উঠে এসেছে।
মিডিয়া রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের (এমআরডিআই) ওই জরিপ বলছে, ৫১ শতাংশ সাংবাদিক তাদের কাজের জন্য এআই ব্যবহার করেছেন। তবে নিউজরুমে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এর ব্যবহার ২০ শতাংশ।
এআই ব্যবহারকারী সাংবাদিকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় টুল চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করেন ৭৮ শতাংশ। এরপর গ্রামারলি ৫২ শতাংশ, গুগল ট্রান্সলেট ৪৪ শতাংশ, ক্যানভা ৩৭ শতাংশ, গুগল জেমিনি ১৯ শতাংশ, ডাল-ই ও অ্যাডোবি সেনসেই যথাক্রমে ১৫ শতাংশ, মিডজার্নি, টেবুলাও, ফ্যাক্টমাটা এবং টার্নিটিন প্রতিটির ব্যবহার ৭ শতাংশ। এছাড়া অন্যান্য টুল ব্যবহার করেছেন ১১ শতাংশ সাংবাদিক।
এর মধ্যে ব্যাকরণ ও লেখার ধরন উন্নত করার জন্য সংবাদমাধ্যমগুলো সমন্বিতভাবে এআই ব্যবহার করছে সবচেয়ে বেশি ৫২% শতাংশ। এর পাশাপাশি গবেষণা ও ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাইয়ে এআই ব্যবহারের হার ৪৮ শতাংশ।
এমআরডিআই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, দেশের ২৫টি সংবাদমাধ্যমের ৫৩ জন সাংবাদিকের ওপর পরিচালিত জরিপ এবং ১৩ জন সম্পাদক, সংবাদমাধ্যম সিদ্ধান্তগ্রহীতাদের নিয়ে ফোকাস গ্রুপ আলোচনা ও বিশেষজ্ঞের সাক্ষাৎকার নিয়ে করা মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
এমআরডিআইয়ের উদ্যোগে ‘ডিজিটালি রাইট’ এর সহযোগিতায় ‘মিডিয়া মেটামরফোসিস: এআই এবং বাংলাদেশি নিউজরুম ২০২৪’ শীর্ষক মূল্যায়নে অর্থায়ন করেছেন এশিয়া ফাউন্ডেশন। এর মাধ্যমে সংবাদমাধ্যমের এআই ব্যবহারের ধরন, নৈতিক চিন্তাভাবনা এবং সংবাদমাধ্যমে আরও বেশি এআই ব্যবহারে জন্য প্রয়োজনীয় কার্যাদি ও ঘাটতির বিষয়গুলো তুলে আনা হয়।
শনিবার ঢাকায় দ্য ডেইলি স্টার অফিসে এক অনুষ্ঠানে জরিপ ও মূল্যায়নের ফলাফল তুলে ধরেন ‘ডিজিটালি রাইট’ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালসের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মালিহা তাবাস্সুম।
সেখানে এমআরডিআইয়ের নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান বলেন, “গণমাধ্যমের ডিজিটাল রূপান্তরে সহায়তায় এই উদ্যোগটি এমআরডিআইয়ের কৌশলগত উদ্দেশ্যগুলোরই অংশ। সংবাদমাধ্যমে বর্তমানে এআই ব্যবহারের ধরন, কারা কী ধরনের এআই ব্যবহার করছেন এবং ভবিষ্যতে কী করা যেতে পারে, তা নিরূপণ করাই এই সমীক্ষার উদ্দেশ্য।”
মিরাজ আহমেদ চৌধুরী এআই ব্যবহারের নৈতিকতা ও দায়িত্বশীলতার গুরুত্ব, স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণে ডিসক্লোজারের ভূমিকা এবং এআই প্রয়োগের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক নীতিমালার ওপর জোর দেন। বাংলাদেশের নিউজরুমে এআইয়ের কাঠামোগত সংযোজনের অভাব এবং দৈনন্দিন কাজের প্রবাহে এআই সংযুক্ত করার সম্ভাবনা নিয়েও তিনি আলোচনা করেন।
জরিপে দেখা গেছে, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অংশগ্রহণকারী মনে করেন এআই ব্যবহারে তাদের দক্ষতা ও কন্টেন্টের মান উন্নত হয়েছে। ৫২ শতাংশ মনে করেন যে এটি তাদের কাজের চাপ কমিয়েছে। ভবিষ্যতে এআই সাংবাদিকতার মান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অর্ধেক অংশগ্রহণকারী।
আরও দেখা গেছে, এআই ব্যবহারে সাংবাদিকদের মধ্যে চাকরি হারানোর আশঙ্কা মাঝারি; তবে অতিরিক্ত নির্ভরতা সমালোচনামূলক চিন্তাধারার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং কন্টেন্টের বিশ্বাসযোগ্যতা কমাতে পারে।
সাংবাদিকরা প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের প্রতি বিশেষ করে এআইকে একটি হুমকি হিসেবেও দেখেন, যা তাদের উদ্ভাবনের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে বলে ফোকাস গ্রুপ আলোচনায় উঠে এসেছে।
এছাড়া এআই ব্যবহারের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখানো হয়েছে- বিষয় সংশ্লিষ্ট ধারণার অভাব, প্রক্রিয়ার পরিবর্তে ফলাফলের দিকে মনোযোগ, এআইকে কীভাবে কর্মপ্রবাহে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে ও এ সংক্রান্ত নির্দেশিকার বিষয়ে বোঝার ঘাটতি এবং ভুল করার ভয়, যা উদ্ভাবনের ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখে।
তবে বেশিরভাগ সাংবাদিকই এআইয়ের নৈতিক সচেতনতার বিষয়ে অসচেতন বলে জরিপে পাওয়া গেছে। এআই ব্যবহার সংক্রান্ত নৈতিকতার বড় বাধাগুলোর মধ্যে রয়েছে যথাযথ প্রশিক্ষণ ও সহায়তার অভাব (৮৫%), এআই সম্পর্কে ধারণার অভাব (৭৪%), বাজেট সীমাবদ্ধতা (৪৭%) এবং স্পষ্ট নৈতিক নির্দেশিকার অভাব (৪৫%)।
আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা এআই ব্যবহারের জন্য প্রকাশনীতি বাস্তবায়ন, অভ্যন্তরীণ নির্দেশিকা তৈরি, একটি ডেডিকেটেড পাঠ্যক্রম প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান বিশ্ববিদ্যালয় পাঠ্যক্রমে এআই বিষয়াবলি অন্তর্ভুক্ত করা এবং কন্টেন্ট তৈরি ছাড়াও ওয়েবসাইট ব্যবস্থাপনা, বিজ্ঞাপন এবং এসইও অপ্টিমাইজেশনের মত এলাকায় এআইয়ের সুযোগগুলো তুলে ধরার সুপারিশ করেন।