সঙ্গীকে ভয় পান? শ্রদ্ধা করেন? নাকি পাত্তাই দেন না তার কথা?
Published : 11 Oct 2023, 01:55 PM
সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কের মাত্রাটা কেমন- সেটা জানতে হলে নিজেদের মধ্যে অনুরক্ত থাকার বিষয়ে জানা থাকতে হবে।
ডা. আমির লেভিন এবং র্যাচেল হিলার’য়ের এই বিষয়ের ওপর লেখা ২০১০ সালে প্রকাশিত বই ‘অ্যাটাচড: দি নিউ সায়েন্স অফ অ্যাটাচমেন্ট অ্যান্ড হাও ইট ক্যান হেল্প ইউ ফাইন্ড-অ্যান্ড কিপ-লাভ’ বইয়ের বিক্রির ঢেউ সম্প্রতি দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রে।
সিএনএন ডটকম’য়ের একটি প্রতিবেদনে এই তথ্যের সাথে আরও জানানো হয়, বর্তমানে টিকটক’য়ে চলছে ‘অ্যাটাচমেন্টস্টাইল’ হ্যাশট্যাগের জোয়ার।
তাই এই সময়ের সঙ্গীর সাথে ‘অ্যাটাচমেন্ট স্টাইল’টা বোঝার জন্য কিছু বিষয় জানা থাকা দরকার।
নিরাপত্তামূলক বা সিকিউর অ্যাটাচমেন্ট
“সম্পর্কে যারা নিরাপত্তামূলক সংযুক্তি রাখতে পারে তারা সার্বিকভাবে সঙ্গীর কাছাকাছি থেকে স্বস্তি বোধ করে, যে কোনো প্রকার প্রয়োজন ও যোগাযোগ নিঃসংকোচে প্রকাশ করে”- বলেন লেভিন।
কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি’র মানোবিজ্ঞানের এই সহযোগী অধ্যাপক সিএনএন’য়ের প্রতিবেদনে আরও বলেন, “নিরাপদ মানুষরা সাধারণত ভালোবাসাপূর্ণ আর আন্তরিক হয়, ভয় ছাড়া সাধারণভাবে সঙ্গীকে বিশ্বাস করে। সাধারণত এই ধরনের সম্পর্কে থাকা মানুষেরা সুখী হয়।”
উদ্বিগ্ন বা অ্যাংশাস অ্যাটাচমেন্ট
লেভিন জানান- যেসব যুগল উদ্বিগ্ন হয়ে থাকেন সম্পর্কে তারা সাধারণত ঘনিষ্টিতা ও কাছে আসার খিদায় ভোগেন।
তারা দুশ্চিন্তায় ভোগেন, সঙ্গী তার সাথে থাকতে চায় কিনা, সেজন্য ঘন ঘন বিষয়টা যাচাই করেন।
সম্পর্কে তারা কোনো হুমকি বোধ করলে উদ্বিগ্ন হয়ে প্রতিবাদী আচরণ করে বসেন। যেমন- সঙ্গীর মনোযোগ কম মনে হলে তাকে ঈর্ষান্বিত করার জন্য নানান কিছু করে বা ছেড়ে যাওয়ার হুমকি দেয়।
যদিও এই ধরনের আচরণের মধ্যে আসলে সম্পর্কে পুনরায় যোগাযোগ স্থাপন করার চেষ্টা থাকে।
এড়ানো বা অ্যাভোয়েডেন্ট অ্যাটাচমেন্ট
যাদের মধ্যে এই ধরনের বিষয় কাজ করে তারা কাছাকাছি আসতে গিয়ে নিজের স্বাধীনতাকে বিসর্জন দেয়। ফলে কেউ তার সঙ্গ পেতে চাইলে বা বেশি মাত্রায় কাছে আসতে চাইলে নিজেকে গুটিয়ে নেয়।
এমন না যে তারা সম্পর্কে জড়াতে চায় না, তবে কাছে আসার বিষয়ের ক্ষেত্রে এক ধরনের আচ্ছন্ন বা মাতাল বোধ করে।
লেভিন বলেন, “কথায় আছে না- প্রেম সব কিছু জয় করতে পারে- কেউ যদি তোমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে, তবে সে তার সমস্ত শক্তি দিয়ে তোমার সাথে থাকার চেষ্টা করবে। তবে বিষয়টা আসলে একদমই সত্যি না।”
তোমাকে কেউ অনেক ভালোবাসতেই পারে, তবে তাদের ‘অ্যাটাচমেন্ট স্টাইল’য়ের জন্য নানান ভাবে ব্যাতিক্রমী আচরণ করবে।
ভীত বা ফিয়ারফুল অ্যাভোয়েডেন্ট অ্যাটাচমেন্ট
‘অ্যাংশাস’ এবং ‘অ্যাভোয়েডেন্ট অ্যাটাচমেন্ট’য়ের মিলিত অবস্থা হল ‘ফিয়ারফুল অ্যাভোয়েডেন্ট অ্যাটাচমেন্ট’- এজন্য একে অগোছালো বলা চলে। আর এই স্টাইল অন্য তিনটি অ্যাটাচমেন্টের চাইতে কম দেখা যায়।
এই ধরনের অ্যাটাচমেন্টে থাকা মানুষ কারও কাছে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বোধ করে, তবে কষ্ট পাওয়ার ভয়ে ভীত থাকে। ফলে সঙ্গীকে দূরে ঠেলে দেওয়ার প্রবণতায় ভোগে।
এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ম্যারেজ অ্যান্ড ফ্যামিলি থেরাপিস্ট’ জেসিকা ডা সিলভা বলেন, “পুরানো কোনো সম্পর্কের বিশ্বাসঘাতকতার ক্ষত থেকে যাওয়ার কারণে তাদের মধ্যে সাংঘাতিক মাত্রায় মানসিক আঘাত লেগে থাকে, ফলে তারা অন্যকে সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস করতে পারে না।”
এসব জানলে যা উপকার হয়
ডালাসে অবস্থিত ‘সাউদার্ন মেথোডিস্ট ইউনিভার্সিটি’র মেনোবিজ্ঞান বিভাগের করা গবেষণায় দেখা গেছে- এই চার ধরনের স্টাইল সম্পর্কে ধারণা থাকলে শুধু রোমান্টিক বা যুগল সম্পর্ক নয় বরং বন্ধু, পরিবার ও সহকর্মীদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
তবে এই বিষয়গুলো কড়াভাবে না ধরে সম্পূরক হিসেবে ধরার পরামর্শ দেন. ডা. লেভিন।
কারণ কারও মধ্যে হয়ত এগুলোর কোনো একটা খুব হালকাভাবে আছে আবার কারও মধ্যে আছে প্রচণ্ডভাবে। এছাড়া একেকজনের সম্পর্কের ধারা অনুসারে অ্যাটাচমেন্ট স্টাইল পরিবর্তিত হতে পারে।
একজন হয়ত তার সঙ্গীর ক্ষেত্রে ‘নিরাপত্তামূলক আচরণ’ করে- অন্যদিকে হয়ত সহকর্মীদের দেখে উদ্বিগ্ন হয়।
উদ্বিগ্ন, ভীত ও এড়ানোর মতো বিষয়গুলো ‘অ্যাটাচমেন্ট স্টাইল’ হিসেবে থাকলে মনে হতে পারে, হয়ত তার কোনো সমস্যা রয়েছে- তবে সেটা সত্যি নয়। আবার এটাও সত্যি না যে, উদ্বিগ্নতায় ভোগা সব মানুষ অভাবী হয় আর এড়িয়ে যাওয়া মানুষরা হয় নার্সিসিস্ট।
লেভিন বলেন, “এই অ্যাটাচমেন্ট স্টাইল আমাদের জীববিজ্ঞানের অংশ। হুমকির মধ্যে পড়লে বা স্বাধীনতা হারাতে বসলে আমরা সংবেদনশীল হই- আর সেটা বিবর্তন থেকেই প্রাধান্য পেয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আর যাই হোক এটা কোনো রোগ নয়। চরিত্রের নানান ধরন মাত্র।”
আর সম্পর্কের কথা বলতে গেলে, নানান গবেষণা প্রমাণ করে নিরাপত্তামূলক অনুভূতির উপকারিতা বেশি। তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
তবে অন্যান্য স্টাইলের বৈশিষ্ট্য থাকলে আশাহত হওয়ার কিছু নেই। চাইলেই এই অবস্থার উত্তরণ ঘটিয়ে সময়ের তালে নিরাপত্তামূলক সম্পর্কে চলে আসা সম্ভব।
সেজন্য বেশি বেশি ‘সিকিওর’ মানুষদের সাথে মেশার পরামর্শ দেন, লেভিন।
সম্পর্কে ‘অ্যাটাচমেন্ট স্টাইল’ শেষ কথা নয়। কোনো কোনো মনোবিজ্ঞানি ‘সেল্ফ-হেল্প’ বই পড়ার পরামর্শ দেন। এছাড়া থেরাপিও নেওয়া যেতে পারে। আর নিজের মধ্যে কোন স্টাইল আছে সেটা জানার জন্য সঙ্গীকে জিজ্ঞেস করাই শ্রেয় হবে।
আরও পড়ুন
সঙ্গীর প্রতি শারীরিক আকর্ষণ কাজ না করলে যা জানা উচিত