‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা।’— আর সেই চুলেই যদি হয় খুশকি, তাহলে জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’ হওয়ার স্বপ্ন হবে গুড়েবালি।
Published : 11 Mar 2014, 10:49 AM
খুশকির কারণে চুলের স্বাভাবিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। সুস্থ ত্বক ও সুন্দর চুলের জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন হাকীম সাঈদ ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রভাষক ডা. রাবেয়া তাপসী।
খুশকির কারণ
সাধারণভাবেই মাথার ত্বক থেকে শুষ্ক চামড়া উঠে। এর পরিমাণ যখন বেশি হয়ে যায়, তখনই সেটা খুশকির যন্ত্রণায় পরিণত হয়। মাথার তালুতে বৈদ্যুতিক তারের মতো ছড়িয়ে আছে অসংখ্য স্নায়ুপেশী ও ঘর্মগ্রন্থি। ধুলাবালির কারণে মাথার ঘর্মগ্রন্থির মুখগুলো বন্ধ হয়ে গেলে খুশকি ও ফুসকুড়ি দেখা যায়। মরা চামড়া উঠে যাওয়াকে খুশকি বলা হলেও এর পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে। ধুলাবালি, অপরিচ্ছন্ন থাকা ও নিয়মিত গোসল না করার ফলে চর্মরোগ ও খুশকি হতে পারে।
তৈলাক্ত ত্বক ও খোলা চুলে ঘুরে বেড়ালে এ সমস্যাগুলো দেখা যেতে পারে। খাবার হজম ও ঘুমের সমস্যা থেকেও এমন হতে পারে। এজন্য বাইরে বের হওয়ার সময় মাথায় ওড়না বা স্কার্ফ ব্যবহার করুন। এতে মাথার ত্বক ধুলাবালি থেকে রক্ষা পাবে।
চুলের ব্যাপারে কিছু বিষয় নজর না দিলেই নয়। প্রথমত মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখুন। ভেজা চুল বেঁধে রাখবেন না। গোসলের পর চুলের পানি শুকাতে হাত দিয়ে জোরে ঝাড়বেন না। এতে চুলের আগা ফেটে যেতে পারে।
যাদের ত্বকে তৈলাক্ত ভাব থাকে তারা একদিন অন্তর চুলে শ্যাম্পু করুন। খুশকি থেকে রক্ষা পেতে শ্যাম্পু ব্যবহারের সময় ‘অ্যান্টিড্যানড্রাফ’ শ্যাম্পু বেছে নিতে পারেন। কন্ডিশনার ব্যবহারের পর ভালোভাবে চুল ধুয়ে ফেলুন।
অন্যের চিড়ুনি ব্যবহার করা ঠিক নয়। এতে একজনের মাথার চর্মরোগ আরেকজনের মাথায় ছড়াতে পারে। বালিশ ও বিছানা পরিষ্কার রাখুন।
যাদের মাথা বেশি ঘামে তারা সবসময় চুল শুকনা রাখার চেষ্টা করবেন। মাথা ঘেমে গেলেই পাতলা রুমাল বা গামছা দিয়ে ভালোমতো মুছে ফেলুন বা পাখার নিচে শুকানোর চেষ্টা করুন।
মাথায় খুশকি হলে চুলকাবেন না। এতে রোগসঞ্চার হতে পারে।
খুশকি মুক্ত চুলের জন্য ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি বেশ উপকারী। এ জন্য যেসব উপকরণ প্রয়োজন তা হাতের নাগালেই রয়েছে।
পেঁয়াজের রস মাথায় লাগালে চুল শক্ত হয়। খুশকিও কমবে। এছাড়া সিদ্ধ নিমপাতার পানি দিয়ে গোসল করলে সবরকমের চর্মরোগের প্রকোপ কমবে। হার্বাল চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিভিন্ন রোগের ওষুধ বানাতে আমলকি ব্যবহার করা হয়। আমলকির রস ত্বকের জন্য খুবই উপকারি। সারা বছরই কাঁচা ও শুকনা আমলকি পাওয়া যায়। দামও সস্তা। রাতে আমলকিচূর্ণ ভিজিয়ে গোসলের আগে সে পানি মাথায় দিলে ত্বক পরিষ্কার হয়। এছাড়া সরিষার তেলের সঙ্গে মেথি মিশিয়ে মাথায় লাগাতে পারেন। মেথি ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।
রেশমি ও কোমল চুলের জন্য অনেকে ডিমের কুসুম মাথায় ব্যবহার করেন। সঙ্গে মধু মিশিয়ে নিলে উপকার বাড়বে। পাকা কলা চুলে লাগালে চুল রেশমি হয়।
খাবার-দাবার
শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার জন্য দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রায়ই দেখা যায় পর্যাপ্ত পানি পান না করার ফলে হজমে সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। এ থেকে অনেক ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। তাই পর্যাপ্ত পানি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
হজমজনিত সমস্যার কারণে ত্বকে ব্রণ বা ফুসকুড়ি দেখা যেতে পারে। তাই হজম সহায়ক খাবার খান। যে সব খাবার খেলে হজমে সমস্যা হয়, তা আপাতত কম খান। আর অধিক মশলাযুক্ত ও তেলেভাজা খাবার এবং ফাস্টফুড এড়িয়ে চলুন।
মৌসুমি ফল, মৌসুমি রোগ প্রতিরোধ করে। তাই ঘরে সবসময় কিছু দেশি ফল রাখুন। যত বেশি সম্ভব প্রকৃতির কাছাকাছি প্রাকৃতিক খাবার গ্রহণ করুন। প্রক্রিয়াজাত খাবার ও কোমল পানীয় হজমে সমস্যার কারণ হতে পারে।
ঘুম ঠিকমতো না হলে ত্বকে ব্রণ দেখা যেতে পারে। প্রতিদিন অন্তত নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান।
সবমিলিয়ে পরিচ্ছন্নতা, পাচক খাবার ও ঘুম— এ তিনের ব্যাপারে সচেতন হলে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।