সঙ্গীকে নিয়ে রেস্তোরাঁয়: খরচ দেবে কে?

প্রচলিত ধারায় ‘ডেইট’ করতে গিয়ে ছেলেদেরই খরচ হয়। বিষয়টা আসলে কতটা যৌক্তিক!

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2020, 01:31 PM
Updated : 13 Oct 2020, 01:31 PM

‘ডেইট’য়ে যাওয়া মানেই বিভিন্ন ধরনের খরচ। আর এই খরচগুলো কে বহন করবে সেটা নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিতেই পারে।

কখনও একজনকেই সব খরচ করতে হয়। আবার কখনও দুজনের মধ্যেই বিল নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু হয়, দুজনই মনে করেন তার বিল দেওয়া উচিত।

খরচের এই বিষয়গুলো প্রতিটি যুগলের ব্যক্তিগত ব্যাপার হলেও সুস্থ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য আদর্শ উপায় হল, যে ‘ডেইট’য়ের আয়োজন করেছে, তারই উচিত খরচের দায়ভার নেওয়া। পাশাপাশি এতে সম্পর্কের প্রতি দুজনের আর্থিক দায়িত্বগুলো সম-বন্টন হয়।

সম্পর্ক-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের লেখক ও সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ কেভিন ডার্ন বলেন, “প্রথম ‘ডেইট’ হোক কিংবা দীর্ঘ সম্পর্কের মাঝে অসংখ্য ‘ডেইট’য়ের মধ্যকার একটি, যে ব্যক্তি ‘ডেইট’য়ের আমন্ত্রণ দিয়েছেন, খরচের গুরুদায়িত্বটা তার ঘাড়েই বর্তায়।”

“তারমানে এই নয় যে অপরপক্ষ খরচ করতে পারবে না। তবে তাকে আর্থিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। সঙ্গীকে ‘ডেইট’য়ের আমন্ত্রণ দিয়ে তার পয়সা খসানো অনৈতিক হয়ে যায়, তাতে সম্পর্ক যতই পুরানো হোক।”

সম্পর্কের মধ্যকার দায়িত্বগুলোর সমবন্টন সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ ক্যারোল রোডরিক, এমইডি, পিএইচডি বলেন, “সব যুগলের উচিত প্রতি মাসে ‘ডেইট’য়ের জন্য কিছু অর্থ আলাদা করে রাখা। এই অভ্যাস থেকে ভবিষ্যত সঙ্গীর আর্থিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। যে পক্ষের উপার্জন বেশি তার খরচের বড় অংশ সামলানোর প্রস্তুতি রাখা উচিত।”

‘এসএজিই’ সাময়িকীতে ২০১৫ সালে প্রকাশিত এক জরিপের তথ্যানুসারে, ৭৪ শতাংশ পুরুষ আর ৮৩ শতাংশ নারী মনে করেন একটি যুগলের উভয় পক্ষের উচিত ‘ডেইট’য়ের খরচ ভাগাভাগি করা। একজন মানুষের সঙ্গে ছয় মাস পর্যন্ত সম্পর্কে থাকার পর তেমনটাই তারা করেন।

তবে সিংহভাগ নারী ও পুরুষ জানিয়েছেন পুরুষই খরচ বহন করে বেশি।

জরিপে অংশ নেওয়া পুরুষদের দুই তৃতীয়াংশ মনে করেন নারীদের খরচের ভাগ আরও বেশি নেওয়া উচিত। ৪৪ শতাংশ পুরুষ বলেন, যে নারী কখনই খরচের ভাগ নেয় না তার সঙ্গে সম্পর্কই রাখতে চান না তারা। অপরদিকে ৭৬ শতাংশ পুরুষ বলেছেন, নারীদের হাত দিয়ে খরচ করাতে তারা অপরাধবোধে ভোগেন।

ওই জরিপের লেখকরা বলেন, “সম্পর্কে পুরুষকেই যখন রুজি রোজগারের দায়িত্ব নিতে হয় তখন সেখানে লিঙ্গ বৈষম্য, অপরপক্ষকে দমিয়ে রাখার প্রবণতা তৈরি হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। কয়েক যুগ ধরে চলে আসা এই প্রচলনের সঙ্গে কতজন মানুষ একমত আর দ্বিমত পোষণ করে সেটাই উঠে এসেছে আমাদের এই জরিপে।”

বিগত পাঁচ বছরে সমাজে অবশ্যই পরিবর্তন এসেছে। পাল্টেছে মানুষের চিন্তাধারা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার চিন্তাধারা থেকে মানুষ ক্রমেই সরে আসছে।

তাই রেস্তোরাঁয় বিল আসার সঙ্গে সঙ্গে পুরুষকেই তার পরিশোধ করার দায়িত্ব নেওয়াকে ভদ্রতা হিসেবে মনে করার ধারণা থেকে মানুষ বেরিয়ে আসছে আর সেটাই হওয়া উচিত।

যেকোনো ‍খরচের দায়ভার পুরুষের মাথা পেতে নেওয়াকে আপাতদৃষ্টিতে ভালো গুণ মনে হলেও, তা আসলে দীর্ঘমেয়াদে সম্পর্কের ক্ষতি করে।

ফোর্বস ম্যাগাজিনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, “একটি নির্দিষ্ট লিঙ্গের কাছ থেকে সবসময় একটা নির্দিষ্ট প্রত্যাশা তৈরি হওয়ার এই ব্যাপারটি আসলে নেতিবাচক। এই প্রচলনটা একজন আর্থিকভাবে নিরপেক্ষ নারী, যিনি পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জীবনযুদ্ধের লড়াইয়ে নামতে চান, তার মনবলের জন্য ধ্বংসাত্বক।”

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন