কোভিড-১৯ পরীক্ষা নিয়ে ভুল ধারণা

একবার ‘পজেটিভ’ আসলে সেটাই সঠিক হিসেবে ধরে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Sept 2020, 02:27 PM
Updated : 26 Sept 2020, 02:27 PM

একদিকে পরীক্ষা ছাড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আছে কি-না তা জানার যেমন কোনো উপায় নেই, অন্যদিকে পরীক্ষা করানোর পরও অনেকেই শিকার হচ্ছেন ‘ফলস পজেটিভ’ বা ‘ফলস নেগেটিভ’ দ্বন্দ্বে।

এমন ঘটনার বাস্তব উদাহরণ প্রায় সবার আশপাশেই আছে।

এই ‘ফলস পজিটিভ’ বা ‘ফলস নেগেটিভ’কে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের মাঝে বিভিন্ন মতামত প্রচলিত। যেগুলোর মধ্যে ভুল ধারণা থাকাটাই স্বাভাবিক।

এই বিষয়সহ কোভিড-১৯ পরীক্ষার আরও কিছু ভুল ধারণা সম্পর্কে স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে অস্ট্রেলিয়ার মহামারী বিশেষজ্ঞ গিডিয়েন ম্যারোয়েটজ-কাটজ বলেন, “জনমনে ব্যাপকভাবে যে ধারণাগুলো প্রচলিত তার মধ্যে অন্যতম হল, এখন পর্যন্ত যত মানুষের ‘কোভিড-১৯ পজিটিভ’ এসেছে তার মধ্যে সিংহভাগই নাকি ‘ফলস পজিটিভ’।”

“এমন ধারণায় বিশ্বাস করার পরিণতি বেশ ভয়ানক। কারণ তখন ওই ব্যক্তি বিশ্বাস করতে শুরু করবেন যে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আসলে তেমন বেশি সংখ্যক নয় এবং স্থানীয় সরকার মানুষকে ভুল তথ্য দিচ্ছে, যা পুরোপুরি সত্য নয়।”

পরীক্ষার পদ্ধতি সম্পর্কে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, “এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস শনাক্ত করার প্রধান পদ্ধতি হল ‘পলিমার্স চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর)’। এই পরীক্ষার জন্য একজন ব্যক্তির নাক অথবা গলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়, যার ভালো মন্দ দুটো দিকই আছে।”

“মন্দ দিক হল, কোনো ব্যক্তি ভাইরাস সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে আছে কি-না তা বোঝার উপায় নেই। কারণ এই পর্যায়ে সংগ্রহ করা নমুনায় শনাক্ত করার জন্য পর্যাপ্ত ভাইরাস পাওয়াই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ফলে যারা মাত্র দুতিন দিন আগেই সংক্রমণের শিকার হয়েছেন তারা পরীক্ষা করালেও ফলাফল ‘নেগেটিভ’ আসবে, যা আসলে ‘ফলস টেগেটিভ’।” 

“এভাবেই ‘পিসিআর কোভিড-১৯’ পরীক্ষায় ‘ফলস নেগেটিভ’য়ের সম্ভাবনা বেশি হয়। আমার ধারণা ৬০ শতাংশ ‘নেগেটিভ’ই হতে পারে ‘ফলস নেগেটিভ’। আর একারণেই হাসপাতালগুলো পরীক্ষার প্রাথমিক ফলাফল ‘নেগেটিভ’ আসলেও কিছুদিন পর আবার পরীক্ষা করে, বিশেষত উপসর্গ থাকলে।”

‘ফলস পজিটিভ’ সম্পর্কে কাটজ বলেন, “পিসিআর’ পরীক্ষার ক্ষেত্রে ‘ফলস পজিটিভ’য়ের সংখ্যা শনাক্ত করা সম্ভব। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তথ্য বিবেচনা করে আমরা বলতে পারি ‘ফলস পজিটিভ’য়ের সংখ্যা হবে প্রায় এক হাজার পরীক্ষায় মাত্র একটি। অর্থাৎ ‘পজিটিভ’ ফলাফল ‘ফলস পজিটিভ’ হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। আর সেই সম্ভাবনাকে আরও কমিয়ে দেয় একাধিকবার পরীক্ষা করে দেওয়া ফলাফল।” 

ব্যাপারটা সংখ্যার উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যাও করেন এই বিশেষজ্ঞ।

ধরে নেই এক হাজার জনসংখ্যার মধ্যে ৫০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। আর বাকি ৯৫০ জন সুস্থ এবং এদের সবার ‘পিসিআর’ পরীক্ষা করা হল।

যে ৯৫০ জন সুস্থ তাদের মধ্যে মাত্র একজনের ‘ফলস পজিটিভ’ আসা সম্ভব। আর যে ৫০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তাদের মধ্যে একজনের ‘ফলস নেগেটিভ’ আসা সম্ভব।

বাকি ৪৯টি ‘ট্রু পজেটিভ। অর্থাৎ ৯৮ শতাংশ ‘পভিটিভ’ আসলেই ‘পজিটিভ’, ফলাফলে কোনো ভুল নেই।

একইভাবে যদি ১০ হাজার মানুষের মাঝে ৫০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয় তাতেও মাত্র একজনেরই ‘ফলস পজিটিভ’ আসা সম্ভব, ৪৯ জনই হবেন ‘ট্রু পজেটিভ’।

পরিসংখ্যান থেকে বেরিয়ে সাধারণ ভাষায় বলতে হয়, এই মহামারীর সময়েও আমাদের দেশে পরীক্ষার সংখ্যা অনেক কম। হাসপাতালগুলো রোগীর ভিড় এত বেশি যে আপনার আগে থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ না থাকলেও হাসপাতালে গিয়েই সংক্রমণের শিকার হতে পারেন।

এমন মারাত্বক সময়ে ‘কোভিড-১৯’ পরীক্ষার ফলাফল একাধিকবার ‘নেগেটিভ’ আসলেও হয়ত সন্দেহ থেকে যায়।

তবে কাটজের কথায়, “একবার ‘পজিটিভ’ আসাই যথেষ্ট এবং সেটাই নির্মম সত্য।”

আরও পড়ুন