করোনাভাইরাস: গণপরিবহনে সতর্কতা

করোনাভাইরাসের প্রকোপের অনেক দেশেই গণপরিবহনে সীমাবদ্ধতা এনেছে সেসব দেশের সরকার। পাশাপাশি সাধারণ মানুষ যে যার মতো করে সতর্কতা অবলম্বন করছেন।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 March 2020, 09:13 AM
Updated : 12 March 2020, 09:13 AM

গণপরিবহন ব্যবহারে কী ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত- বিবিসি’তে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের আলোকে বিস্তারিত জানানো হল।

ট্রেন ও বাস

শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে অনেক ভাইরাস সংক্রমিত হয়। করোনাভাইরাস বাতাসে ভেসে বেড়ায় না ঠিক। তবে বাস কিংবা ট্রেনের আসন, দেয়াল, হাতল ইত্যাদি স্থানে করোনাভাইরাস-যুক্ত ‘ড্রপলেট’ পড়ে থাকতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশির মাধ্যমেই এসব স্থানে ভাইরাস আসে। আর সেই স্থানগুলো স্পর্শ করা মাধ্যমে তা সুস্থ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের আনাগোনার কারণে এসব স্থান থেকে ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা স্বভাবতই অনেক বেশি।

যুক্তরাজ্যের ‘ইনিস্টিটিউট অফ গ্লোবাল হেলথ’য়ের গবেষক, ডা. লারা গসসি বলেন, “যারা নিয়মিত ট্রেনে যাতায়াত করেন তাদের ‘ফ্লু’-জাতীয় জীবাণুতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। কারণ ট্রেন বিভিন্ন স্টেশনে থামে, মানুষ ওঠানামা হয়, ফলে জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কাও বাড়ে। তবে ট্রেন যদি তুলনামূলক খালি থাকে এবং যাত্রীরা সরাসরি তাদের গন্তব্যে পৌঁছে যায় সেক্ষেত্রে ঝুঁকির মাপকাঠি আবার ভিন্ন হবে। নির্ভর করবে যানবাহনে আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা কেমন এবং একজন যাত্রী কতক্ষণ সময় সেই যানবাহনে পার করছেন সেসব বিষয়ের ওপর।”

শহরের ভেতরে চলাচলকারী এবং দূরপাল্লার বাসগুলোর ক্ষেত্রেও একই কথা প্র্রযোজ্য। আবার এই যানবাহন পরিষ্কার করার মাত্রাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই অবস্থায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের উচিত হবে গণপরিবহন বর্জন করা যাতে অন্যান্য যাত্রীদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে। সুস্থ মানুষের উচিত হবে ভীড়ের সময় গণপরিবহন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা কিংবা একটানা গন্তব্যে পৌঁছানো যায় এমন যানবাহন ব্যবহার করা।

আশার বাণী শুনিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তাদের মতে, “গণপরিবহনকে আপাতদৃষ্টিতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আদর্শ স্থান হিসেবে বিবেচনা করা যায় ঠিক। তবে এসব স্থানে যাত্রীরা একে-অপরের যতটুকু এবং যেভাবে সংস্পর্শে আসেন তাতে এখন পর্যন্ত আমাদের বিশ্বাস তাতে করোনাভাইরাস ছড়ায় না।”

আকাশপথ

বিমানে বাতাসের ধরন ভিন্ন হওয়ার অনেকেই মনে করেন সেখানে ভাইরাস কিংবা ব্যাক্টেরিয়াজনীত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তবে বাস্তবতা ঠিক তার উল্টো। বিমানেই বরং বাতাসের মান ভালো। এছাড়াও বাস কিংবা ট্রেনে মানুষের যতটুকু ভীড় হয় বিমানে তার থেকে কম হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘পার্দু ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাপক কুইংইয়ান চেন বিভিন্ন গণপরিবহনের বাতাসে মান পরীক্ষা করেন।

তার মতে, “বিমানের ভেতরের বাতাস প্রতি দুই থেকে তিন মিনিটে পুরোপুরি পরিবর্তন হয়, যা একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে হতে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ মিনিট। কারণ বিমানের বাতার বিশুদ্ধ করা হয় ‘হাই ইফিসিয়েন্সে পার্টিকুলেট এয়ার ফিল্টার (হেপা)’ নামক যন্ত্রের সাহায্যে। যা শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রের চাইতেও বেশি কার্যকর।

করোনাভাইরাস আছে এমন যে কোনো কিছু স্পর্শ করার মাধ্যমে তা সুস্থ মানুষের দেহে ছড়াতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইমোরি ইউনিভার্সিটির গবেষক ভিকি হার্টজবার্গ তাই ১০টি যাত্রীবাহী বিমানের বিভিন্ন স্থান পরীক্ষা করে জানান তাতে জীবাণুর মাত্রা একটি বাসার বসার ঘরের মতোই।

তবে নিশ্চিন্ত হওয়ার জন্য এইটুকু যথেষ্ট নয়। কারণ ভাইরাস সংক্রমণের পেছনে একাধিক বিষয় দায়ী থাকে। যেমন- দূরপাল্লার যাত্রায় যাত্রীরা বিমানের মধ্যে বেশি চলাচল করতে পারে, যা ভাইরাস ছড়ানো আশঙ্কা বাড়াবে।  

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, যে কোনো যানবাহনের প্রথম দুই সারির আসন সবচাইতে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তবে ২০০৩ সালে যখন ‘সার্স’ ভাইরাসে আক্রমণ ঘটেছিল, তখন একটি বিমানে থাকা একজন আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে যাদের মাঝে ভাইরাস ছড়িয়ে ছিল তাদের ৪৫ শতাংশই প্রথম দুই সারির যাত্রী ছিলেন না।

তাই সব কথার আসল কথা হল- হাত পরিষ্কার রাখতে হবে, হাঁচি-কাশি দিতে হবে টিস্যুতে, ভাইরাস থাকতে পারে এমন জায়গা সন্দেহ হলেই পরিষ্কার করতে হবে। যানবাহনের ক্ষেত্রে সবচাইতে বড় আশঙ্কার বিষয় হল তা একজন আক্রান্ত ব্যক্তিকে সহজেই একস্থান থেকে অন্যস্থানে পৌঁছে দিতে পারে। তার পরিধি দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। তাই লম্বা ভ্রমণের আগে যদি নিজেকে আক্রান্ত মনে হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আর সম্ভব হলে এই কঠিন সময়ে দূরপাল্লার ভ্রমণ থেকে বিরত থাকাই মঙ্গল।

ছবি কৃতজ্ঞতায়: মাহমুদ মানজুর।

আরও পড়ুন