করোনাভাইরাসের তাণ্ডব দমাতে শুরু হওয়া লকডাউনে সবচাইতে বেশি সময় ঘরে আবদ্ধ হয়ে আছে শিশুরা। স্কুল, গৃহশিক্ষকের কাছে পড়া, কোচিং, প্রাইভেট পড়া সবই বন্ধ। ফলে ঘরে বসে খাওয়া, ঘুম আর মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকা ছাড়া তাদের আর কোনো কাজই নেই।
আর ঘরে থাকার কারণে বাইরের খাবার খাওয়ার সুযোগ না থাকলেও ঘরে বসেও তাদের নানান খাবারের আবদার মেটাতে গিয়ে বাড়ছে ওজন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্যাভ্যাসের অনিয়ম আর শারীরিক পরিশ্রমের অভাব শিশুদের ঠেলে দিচ্ছে স্থূলতার দিকে।
লকডাউনে বাইরের কাজ না থাকায় ঘুম, খাওয়ার সময়েও অনিয়ম দেখা দিয়েছে সব বয়সের মানুষেরই, যা স্থূলতার ঝুঁকি আরও বাড়াচ্ছে বলে জানা গেছে গবেষণায়।
এই গবেষণার সহ-লেখক, যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনিভার্সিটি অ্যাট বাফেলো’র মাইলস ফেইথ বলেন, “করোনাভাইরাস মহামারীর ক্ষতিকর প্রভাব শুধু ভাইরাস সংক্রমণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। লকডাউনের কারণে শিশু, কিশোর সকলেই স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাস অনুসরণের ক্ষেত্রে প্রতিকুল পরিস্থিতির শিকার।”
তিনি আরও বলেন, “সাধারণত স্কুলের গরমের ছুটিতে শিশু, কিশোরদের ওজন বাড়তে দেখা যায়। এথেকেই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে, এই লম্বা সময় ঘরে আটকে থাকায় তাদের স্বাস্থ্যগত অবস্থা কী হতে যাচ্ছে?”
এই গবেষণার জন্য খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রম আর ঘুম সম্পর্কিত তিন সপ্তাহের তথ্য সংগ্রহ করা হয় ইতালির বাধ্যতামূলক দেশব্যাপী লকডাউন’য়ের সময়। আর তার সঙ্গে তুলনা করা হয় ২০১৯ সালে নেওয়া তথ্যের সঙ্গে।
বৈদ্যুতিক পর্দার সামনে সময় কাটানোর মাত্রা, মাংস, পাস্তা, স্ন্যাকস, ফল এবং সবজি খাওয়ার মাত্রা নিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয় এই গবেষণায়।
ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব প্রমাণিত হয়। দেখা যায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গতবাঁধা রুটিনের মাঝেও যে শিশুরা ইতোমধ্যেই স্থূলতায় ভুগছিল তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার সমস্যাগুলো স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে।
এক বছর আগে স্বাভাবিক সময়ে শিশুদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে সংগ্রহ করা তথ্যের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় লকডাউনে শিশুরা বাড়তি একবেলা খাবার খাচ্ছে, ঘুমাচ্ছে প্রতিদিন আধাঘণ্টা বেশি। আর বৈদ্যুতিক পর্দার সামনে সময় কাটানোর পরিমাণ বেড়েছে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ ঘণ্টা।
সেই সঙ্গে মাংস, চিনিযুক্ত পানীয় আর ‘জাঙ্কফুড’ খাওয়া পরিমাণও বেড়েছে মারাত্বক হারে।
অপরদিকে শরীরচর্চা কমেছে সপ্তাহে দুই ঘণ্টা। তবে সবজি খাওয়া পরিমাণে কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি।
ফেইথ বলেন, “করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে বাঁচতে ঘরে থাকাতে গিয়ে এই ক্ষতিকর দিকটা নিয়ে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। ঘরে আবদ্ধ থাকাকালে অনেক সাধনায় নিয়ন্ত্রণে রাখা ওজন লাগামছাড়া হয়ে যাওয়ার হতাশা মোকাবেলা করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। আর এই হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি তাদের আরও আসক্ত করে তুলতে পারে।”
“ঘরে বন্দি থাকার দিন কবে শেষ হবে তা আজও জানা নেই কারও। আর এসময়ে বেড়ে যাওয়া ওজন এমন পর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারে যে তা থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়াতে পারে। আবার পরিণত বয়সে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকিও বাড়াবে এই বাড়তি ওজন। কারণ শৈশব ও কৈশোরের স্থূলতা পুরো জীবনের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব বয়ে আনে।”
ছবি: রয়টার্স।
আরও পড়ুন-