করোনাভাইরাস: কার দরকার মাস্ক?

বিভিন্ন ধরনের মাস্কের প্রচলন থাকলেও সব মাস্কই যে ভাইরাস ঠেকাবে তাও ঠিক নয়।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 April 2020, 05:46 PM
Updated : 2 April 2020, 05:46 PM

করোনাভাইরাসের উৎপাতে সবার মুখে আজকাল শোনা যাচ্ছে ‘পিপিই’-এর কথা, যা হয়ত অনেকের কাছেই নতুন একটা শব্দ।

‘পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট’কে সংক্ষেপে বলা হয় ‘পিপিই’| বিশেষ কোনো পোশাক নয়, একটি আদর্শ ‘পিপিই সেট’য়ের অনুষঙ্গগুলো হল ‘গ্লাভস’, ‘গাউন’, ‘শু কভার’, ‘হেড কভার’, ‘মাস্ক’, ‘রেস্পিরেটর’, ‘মাস্ক’, ‘আই প্রটেকশন’, ‘ফেইস শিল্ড’ এবং ‘গগলস’।

এদের মধ্যে বর্তমানে সবচাইতে বেশি মাতামাতি মাস্ক নিয়েই। তো কাদের প্রয়োজন এই মাস্ক? চিকিৎসকের, রোগীর নাকি সবার?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্যানুসারে বিবিসি’র করা প্রতিবেদন থেকে জানানো হল বিস্তারিত।

মাস্ক কারা পরবেন?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে দুই ধরনের মানুষের মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

১. যারা অসুস্থ এবং করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ দেখা দিয়েছে।

২. যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা কিংবা সেবা করছেন।

সবাই মাস্ক পরলে সমস্যা কোথায়?

সাধারণ মানুষকে মাস্ক পরার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে না কারণ হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভাষ্য হল, এই মাস্কগুলোতে অন্য কারও হাঁচি কিংবা কাশির সঙ্গে বেরিয়ে আসা ভাইরাস মিশে থাকতে পারে।

যেমন আপনি মাস্ক পরা অবস্থায় আপনার আশপাশে কেউ হাঁচি কিংবা কাশি দিলে তার মুখ থেকে নিঃসৃত লালা আপনার মাস্কে লাগতে পারে। আবার মাস্ক খোলা কিংবা পরার সময় আপনার হাতে লেগে থাকা ভাইরাস মাস্কে লেগে যেতে পারে। এতে নিজের মাস্কেই আপনি ভাইরাস বয়ে নিয়ে বেড়াবেন।

এছাড়াও একজন সুস্থ মানুষের জন্য মাস্ক পরার চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল বার বার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং জনসমাগম থেকে দূরে থাকা।

মাস্ক পরার আরেকটি ক্ষতিকর দিক হল- এতে আপনার মনে হতে পারে আপনি নিরাপদ। ভাইরাস আপনার শরীরে প্রবেশ করতেই পারবেনা, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

করোনাভাইরাস ছড়ায় লালার কণার মাধ্যমে, যা একজন আক্রান্ত ব্যক্তির কথা বলা কিংবা হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় বাতাসে মেশে এবং সামান্য সময় বাতাসে ভেসে থেকে মাটি কিংবা অন্য কোনো সমতলে পড়ে।

সুস্থ ব্যক্তির চোখ, নাক ও মুখের রাস্তায় তা শরীরে প্রবেশ করতে পারে অথবা করোনাভাইরাস মিশে আছে এমন কোনো স্থান বা বস্তু স্পর্শ করলে সেখান থেকেও তা ওই ব্যক্তির শরীরে প্রবেশের সুযোগ পেতে পারে।

তাই সুস্থ মানুষের কাজ হবে হাত পরিষ্কার রাখা। আর অসুস্থ ব্যক্তির কাজ হল মাস্ক পরে থাকা যাতে তার হাঁচি, কাশি কিংবা কথা বলার সময় ভাইরাস বেরিয়ে মাস্কের মধ্যেই আটকে থাকে।

কোন মাস্ক ভালো?

ভাইরাস দেশে ছড়ানোর প্রাথমিক সময় থেকেই মাস্ক নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। বাজারে মাস্ক না পেয়ে টিস্যু, কাপড়, টিস্যুজাতীয় বিশেষ কাপড়, ইত্যাদি বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে ঘরেই অনেকে মাস্ক বানানো শুরু করেন। পরে এদের বাণিজ্যিক উৎপাদনও শুরু হয়, যা দেশের বিভিন্ন অংশে বিক্রি হচ্ছে প্রতিদিন।

এগুলো কোনোটাই যে করোনাভাইরাস ঠেকানোর ক্ষমতা রাখে না, তা বলতে বলতে চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞ সবাই হয়রান। নিরাপদ তো রাখেই না, বরং তা ভাইরাস ছড়াতে সহায়ক হতে পারে বলেও জানিয়েছেন অসংখ্য বিশেষজ্ঞ।

চিকিৎসকরা পরিস্থিতি মোতাবেক বিভিন্ন ধরনের মাস্ক ব্যবহার করে থাকেন। এদের মধ্যে করোনাভাইরাস এড়ানো জন্য সবচাইতে কার্যকর মাস্ক হল ‘এফএফপি থ্রি’। এর বিকল্প হল ‘এন নাইনটি ফাইফ কিংবা ‘এফএফপি টু’, যাতে বসানো থাকে ‘রেস্পিরেটর’ যা বাতাস ছেঁকে ভেতরে প্রবেশ করায়।

এগুলোর মধ্যে কোনোটাই হয়ত সাধারণ মানুষ চোখেই দেখেননি।

বিশেষজ্ঞরা সাধারণ মানুষকে এগুলো ব্যবহার করার পরামর্শ দেননি কখনই। এগুলো ব্যবহার করবে চিকিৎসা সেবাদানকারীরা, যারা করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর খুব কাছে গিয়ে তার সেবা করবেন।

এছাড়া সাধারণ সেবাদানকারীরা ব্যবহার করবেন ‘সার্জিকাল মাস্ক’। অর্থাৎ যারা সম্ভাব্য কিংবা নিশ্চিত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর এক মিটারের মধ্যে কাজ করবেন।

‘পিপিই’য়ের অন্যান্য উপকরণ, বিশেষ করে ‘গ্লাভস’ও চিকিৎসক ও অন্যান্য সেবাদানকারীরাই ব্যবহার করবেন। সাধারণ মানুষের তা প্রয়োজন নেই।

তাহলে সাধারণ মানুষ কী ব্যবহার করবেন?

প্রথমত তারা ব্যবহার করবেন সাবান ও পানি। যতবার সম্ভব ততবার হাত পরিষ্কার করবে, প্রতিবার কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সময় দেবে হাত ধোওয়া কাজে।

হাঁচি কিংবা কাশি বিভিন্ন কারণে হতে পারে, সেসময় হাত দিয়ে মুখ না ঢেকে টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহারে পর তা ঢাকনা যুক্ত ময়লাপাত্রে ফেলতে হবে।

টিস্যু না থাকলে কনু্ইয়ে ভাঁজ দিয়ে মুখ ঢাকতে হবে, যা সচরাচর নাক-মুখ-চোখের কাছাকাছি যায় না।

হাঁচি কিংবা কাশি দিলেই আবার হাত পরিষ্কার করতে হবে। পারলে কনুই পর্যন্ত। আর তা না করা পর্যন্ত নাক-মুখ-চোখ একদমই স্পর্শ করা যাবে না। আর করমর্দন বা হাত মেলানো পুরোপুরি নিষিদ্ধ।

আরও পড়ুন