করোনাভাইরাসের সময়ে শারীরিক মিলনের ক্ষেত্রে যা জানা জরুরি

যৌনমিলনের মাধ্যমে কি করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে? প্রশ্নটা হয়ত অনেকের মনেই ঘুরছে। তবে লজ্জায় প্রশ্নটা করতে পারছেন না।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 March 2020, 06:17 PM
Updated : 31 March 2020, 06:17 PM

এব্যাপারে সাধারণ মানুষকে অবগত করতে বিবিসি আলোচনা করেছে যুক্তরাজ্যের ‘ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসেস’য়ের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. অ্যালেক্স জর্জ এবং বিবিসি রেডিও’র যৌন-বিষয়ক সাংবাদিক অ্যালিক্স ফক্স’য়ের সঙ্গে।

বিবিসি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হল বিস্তারিত।

এসময় যৌনমিলন কতটা নিরাপদ?

ডা. অ্যলেক্স জর্জ বলেন, “স্বামী-স্ত্রী যদি একই পরিবেশে, একসঙ্গে বাস করেন এবং ঘরের বাইরে না যান, তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।”

“কিন্তু দুজনের মধ্যে কারও মাঝে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া উপসর্গ দেখা দিলে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে সম্পূর্ণভাবে, ঘরের মধ্যেই। এক্ষেত্রে পরস্পরের মধ্যে অন্ততপক্ষে দুই মিটার বা ছয় ফিট দূরত্বে থাকতে হবে সবসময়। তবে স্বভাবতই এই ব্যবস্থার কার্যকারীতা খুবই সামান্য।”

ডা. অ্যালিক্স ফক্স বলেন, “আবার এটাও মনে রাখতে হবে আপনার সামান্য উপসর্গ দেখা দিলেই যে সঙ্গীরও সংক্রমণ হয়ে গেছে তা ভেবে নেওয়া ঠিক হবে না। তাই দূরত্ব বজায় রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।”

নতুন সঙ্গীর ক্ষেত্রে শারীরিক মিলন কতটা নিরাপদ?

ড. অ্যালেক্স বলেন, “এই সময়ে অবশ্যই নতুন সঙ্গীর সঙ্গে ঘনিষ্ট হওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিব। কারণ এক্ষেত্রে ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি থেকেই যায়।”

অ্যালিক্স ফক্স বলেন, “মনে রাখতে হবে ভাইরাস থাকলেও অনেকের মধ্যে সেই লক্ষণ দেখা দেয় না। তাই আপাতদৃষ্টিতে নিরাপদ মনে হলেও ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়।”

সম্প্রতি যার সঙ্গে চুম্বনের ঘটনা ঘটেছে, তার করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিয়েছে, আমার করণীয় কী?

ডা. অ্যালেক্স জর্জ বলেন, “যেকোনো ধরনের শারীরিক সংস্পর্শে আসা ব্যক্তির যদি করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়, তবে প্রথমেই নিজেকে সবার কাছ থেকে আলাদা করে ফেলতে হবে। নিজের শারীরিক উপসর্গগুলোর প্রতি কড়া নজর রাখতে হবে। যদি উপসর্গ দেখা দেয় তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।”

অ্যালিক্স ফক্স বলেন, “নিজেদের দায়িত্বশীল হতে হবে। যে আক্রান্ত হচ্ছেন, তার উচিত সম্প্রতি শারীরিক সংস্পর্শে আসা সবাইকে তা জানানো, যাতে সে সতর্ক হতে পারে, সবার থেকে আলাদা হয়ে যেতে পারে। অপরপক্ষের জন্যও একই কথা প্রযোজ্য।”

করোনাভাইরাস ছড়ানোর আগে জন্মনিরোধক ব্যবহার করিনি, এখন কি শুরু করতে হবে?

অ্যালিক্স ফক্স বলেন, “কনডমের সঙ্গে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোনো সম্পর্ক নেই। যেসব কারণে কনডম ব্যবহার করা হয়, তা যদি আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না হয়, তবে ভাইরাসের আতঙ্কে নতুন করে তা শুরু করা জরুরি নয়।”

জননাঙ্গ স্পর্শ করা থেকে কি করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে?

ডা. অ্যালেক্স জর্জ বলেন, “একে অপরের জননাঙ্গ স্পর্শ করা মানেই আপনারা সঙ্গমে লিপ্ত হতে যাচ্ছেন। যৌন সঙ্গমের সময় ভাইরাস পরস্পরের মাঝে ছড়িয়ে পড়ার অসংখ্য উপায় আছে। তাই বুদ্ধিমানে কাজ হবে যার সঙ্গে একই ঘরে, একই পরিবেশে বাস করছেন না তার থেকে পুরোপুরি দূরে থাকা।”

এই সময়ে কীভাবে প্রণয় সম্পর্ক রক্ষা করতে হবে?

অ্যালিক্স ফক্স বলেন, “এই মহামারীর সময়ে বহু মানুষ কীভাবে সুখী যৌনজীবন কাটানো যায় সেটা নিয়ে ভাবছেন। আমি শুনেছি অনেকেই সঙ্গীর সঙ্গে ‘উত্তেজনাপূর্ণ’ লেখা আদান-প্রদান করছেন। যাদের মধ্যে প্রণয় সম্পর্ক আছে কিন্তু কোয়ারেন্টিনে থেকে দূরে রয়েছেন তারা বিভিন্ন উপায়ে নিজেদের চাহিদা মেটাচ্ছেন। যদি একটু সৃজনশীল হন তবে আপনি ও আপনার সঙ্গী নিজেদের সুবিধা মতো একটা পন্থা বের করে নিতে পারবেন; দূরে থেকেও।”  

“এই সময়ে সবচেয়ে জরুরি হল পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। এই মহামারীর সময় আসার আগে হয়ত আপনি সপ্তাহে একবার ‘ডেট’ করেছেন। আবার এমনও হয়েছে আপনার ‘ইচ্ছে’ করছে তবে সঙ্গীর সেই সময় ‘ইচ্ছে’ হয়নি। তখন তার অনিচ্ছার সম্মান দিয়েছেন। আসল বিষয় হচ্ছে নিজেদের মনের ইচ্ছের প্রকাশটা হতে হবে সহনশীল ও শ্রদ্ধায় পরিপূর্ণ। একসঙ্গে থাকা মানে এই নয় সবসময় শারীরিক মিলনে থাকতে হবে।

‘এইচআইভি’ যাদের আছে তারা কী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে?

অ্যালিক্স ফক্স বলেন, “এই ক্ষেত্রে ব্রিটেনের এইচআইভি-বিষয়ক দাতব্য প্রতিষ্ঠান ‘টেরেন্স হিগিন্স ট্রাস্ট’য়ের ডা. মাইকল ব্র্যাডি সবচেয়ে ভালো উপদেশ দিয়েছেন।”

তার কথায়, ‘যারা এইচআইভি বা এইডস’য়ে আক্রান্ত তারা যদি প্রতিনিয়ত চিকিৎসার মধ্যে থাকেন এবং ‘সিডি ফোর’ অর্থাৎ সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য রক্তে শ্বেত কাণিকার মাত্রা প্রয়োজনীয় পরিমাণে থাকে এবং নির্ণয় করা যায়নি এরকম ‘ভাইরাল লোড’ মানে রক্তে এইচআইভি’র পরিমাণ সনাক্ত করা যায়নি- এরকম পরিস্থিতিতে ধরে নেওয়া যায় তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল নয়। আর এক্ষেত্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আলাদা কোনো ঝুঁকি নেই। যাদের এইচআইভি ‘পজেটিভ’ তাদের উচিত হবে নিয়মিত চিকিৎসা যা চলছে তা চালিয়ে যাওয়া। পাশাপাশি করোনাভাইরাস রোধে আর সবাই যা করছে সেগুলো মেনে চলা। এবং নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখা।’

আরও পড়ুন