করোনাভাইরাস: নিরাপদে থাকতে করণীয়

এই চাপযুক্ত সময়ে নিজেকে ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপদে রাখার পন্থাগুলো মানতে হবে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2020, 12:46 PM
Updated : 24 March 2020, 12:46 PM

করোনাভাইরাসের কবল থেকে বাঁচতে গৃহবন্দী দিন কাটাতে হচ্ছে। তারপরও বাজার করা ও অন্যান্য জরুরি কাজে সামান্য সময়ের জন্য হলেও বাইরে যেতে হচ্ছে। এই সামান্য সময়ের মাঝেও ভাইরাস আপনার মাঝে চলে আসতেই পারে।

এমতাবস্থায় নিজেকে ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিরাপত্তার স্বার্থে করণীয় কাজগুলো সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া নির্দেশাবলী অবলম্বনে জানানো হল বিস্তারিত।

হাত ধোয়া: প্রতিবার বাইরে থেকে এসে সঙ্গে সঙ্গে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। সময় নিতে হবে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড। বিকল্প হিসেবে ৬০ শতাংশ অ্যালকোহল আছে এমন ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার’ ব্যবহার করতে হবে এবং হাত শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত হাতে মাখাতে হবে। খাওয়ার আগে-পরে, হাঁচি-কাশি দিলে, শৌচাগার ব্যবহারের পরেও একইভাবে হাত পরিষ্কার করতে হবে। হাত পরিষ্কার করে তা মুছে শুকিয়ে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করাও জরুরি।

দূরত্ব বজার রাখা: কাউকে হাঁচি-কাশি দিতে দেখলে তার থেকে কমপক্ষে এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। ঘরে কিংবা বাইরে যেখানেই হোক না কেনো। কারণ করোনাভাইরাস কার মাঝে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় বসে আছে তা নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই। এই ভাইরাস ‘ড্রপলেট’ হাঁচি-কাশির তরলের ফোঁটার মাধ্যমে ছড়ায়। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির সঙ্গে বেরিয়ে আসা লালা বা ‘ড্রপলেট’ আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে সহজেই সংক্রমিত হতে পারে।

হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢাকা: করোনাভাইরাস না থাকুক আর না থাকুক দিনে কয়েকবার হাঁচি-কাশি আসতে পারে বিভিন্ন কারণেই। এক্ষেত্রে মুখ ঢাকার অভ্যাস করতে হবে। অনেকেরই এই অভ্যাস আছে, তবে তারা মুখ ঢাকেন হাত দিয়ে, যা ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়ায়। তাই করোনাভাইরাস ও অন্যান্য ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে টিস্যু কিংবা কনুইয়ের ভাঁজ কাজে লাগাতে হবে। কনুইয়ের ভাঁজ সচরাচর অন্য কেউ স্পর্শ করবেনা এবং আপনার মুখের কাছেই আসবেনা। আর টিস্যু ব্যবহারের পর ময়লার ঝুড়িতে ফেলতে হবে।

মাস্ক পরা: সাধারণ সর্দিকাশি হলেও মুখে মাস্ক পরে থাকতে হবে সবসময়। মাস্ক পরলে যদি দম বন্ধ হয়ে আসে, তবে একা মাস্ক ছাড়া থাকলেও মানুষের আশপাশে অবশ্যই পরতে হবে। হাঁচি-কাশি দিতে হবে মাস্ক পরেই। যারা অসুস্থ নন, তাদের মাস্ক পরার প্রয়োজন না হলেও বাইরে গেলে বা কোনো রোগীর সেবা করার ক্ষেত্রে মাস্ক পরতেই হবে। সঠিকভাবে মাস্ক পরার পদ্ধতিও জেনে নিতে হবে।

নিজেকে কোয়ারেন্টিন করা: কঠিন সময়ে নিজেকে ঘরে বন্দি করে রাখা হবে নিরাপদ উপায়। বিশেষজ্ঞ ও এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় যারা নিয়োজিত তাদের ওপর আস্থা রাখতে হবে। প্রয়োজনীয় পণ্য, ওষুধ কেনাকাটা বা জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হাওয়া বন্ধ করতে হবে। এমনকি পোশা প্রাণিদের সংস্পর্শও এড়াতে হবে। কারণ এসব প্রাণিরাও ভাইরাস বহন করতে পারে।

বহুল ব্যবহৃত অনুসঙ্গ পরিষ্কার: নিত্য ব্যবহার্য অনুসঙ্গ যেমন- মোবাইল, মানিব্যাগ, দরজার হাতল, সুইচ, পানির কল ইত্যাদি কিছুক্ষণ পরপরই জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। কোন উপাদান ব্যবহার করবেন যে ব্যাপারে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা এড়ানো: নিজে এবং পরিবারের সবাইকে করোনাভাইরাসে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে দূরে থাকার রাখতে হবে। সংবাদ মাধ্যমগুলো থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা সম্পর্কে জানতে পারবেন। বৃদ্ধ এবং ডায়াবেটিস, হাঁপানি, হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেশি সাবধানে রাখতে হবে।

ভ্রমণ বাতিল: করোনাভাইরাসের এই তাণ্ডবে ভ্রমণের পরিকল্পনা নির্বোধের পরিচয় দেওয়া হবে। যেখানে যাচ্ছেন সেখানে ভাইরাসের প্রকোপ থাকতে পারে। আবার আপনার মাধ্যমেও ভাইরাস কোনো নিরাপদ এলাকায় ছড়িয়ে যেতে পারে। তাই যে যেখানে আছেন সেখানেই অবস্থান করা উচিত। সবধরনের জনসমাগম পরিহার করতে হবে। কর্মক্ষেত্রের কাজ যথাসম্ভব ঘরে বসে সেরে ফেলার চেষ্টা করতে হবে।

চিকিৎসা: আশঙ্কাজনক এই সময়ে একা থাকা বেশ দুঃসাধ্য। তবে নিজের পাশাপাশি প্রিয়জনের কথাও চিন্তা করতে হবে। আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হয়ত করোনোভাইরাস মোকাবেলা করতে পারবে। তবে আপনার মাধ্যমে পরিবারের কোনো সদস্য আক্রান্ত হলে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ব্যর্থ হতেই পারে। রোগের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে। আক্রান্ত না হলেও যদি হন, সেক্ষেত্রে কোথায় চিকিৎসা পাওয়া যাবে তার ধারণা নিয়ে রাখতে হবে, প্রস্তুত থাকতে হবে।

আরও পড়ুন