সময় শেষে আয়কর বিবরণী জমার উপায়

ব্যক্তি করদাতাকে কর দিবসের মধ্যে আয়কর বিবরণী দাখিল করতে হয়। অনেকেই চেষ্টা করেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আয়কর বিবরণী দাখিল করার জন্য। তবে অনেক সময় তা সম্ভব হয়ে ওঠে না। সেক্ষেত্রে তারা সময় বাড়ানোর জন্য নির্ধারিত ফর্মে উপযুক্ত কারণ উল্লেখ করে উপ কর কমিশনারের কাছে সময়ের আবেদন করতে পারেন।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Nov 2017, 06:26 AM
Updated : 27 Nov 2017, 06:26 AM

উপ কর কমিশনার সন্তুষ্ট হলে করদাতার সময় বৃদ্ধির আবেদন মঞ্জুর করতে পারেন। তবে সময় বৃদ্ধি করলেও করদাতাকে সেই অতিরিক্ত সময়ের জন্য বিলম্ব সুদ দিতেই হবে।

সময় বৃদ্ধির ফর্মে যা থাকে

সময় বৃদ্ধির আবেদন ফর্মে দুইটি অংশ থাকে। একটি অংশ করদাতার জন্য। এবং একই তথ্যের আরেকটি অংশ কর কর্মকর্তার জন্য।

মাত্র দুই পাতার এই আবেদন ফর্মে করদাতার নাম, ঠিকানা, টিন নাম্বার, সার্কেল, কর অঞ্চল, কত দিন সময় বৃধির করতে চান, সময় বৃদ্ধির কারন ইত্যাদি তথ্য দিতে হয়।

তার নিচে করদাতার নাম লিখে স্বাক্ষরের স্থান এবং তারিখ লিখে স্বাক্ষর প্রদান করতে হয়।

আর একদম নিচে কত দিন সময় বৃদ্ধি করা হল তা উল্লেখ করে কর অফিসের অন্তর্ভূক্তি নাম্বার লিখে উপ কর কমিশনারের স্বাক্ষর এবং সীল দিয়ে করদাতাকে একটি অংশ ফেরত দিয়ে আরেকটি অংশ কর অফিস রেখে দেয়।

কত হারে বিলম্ব সুদ দিতে হয়

কর দিবস অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আয়কর বিবরণী দাখিল করতে ব্যর্থ হলে করদাতাকে মাসিক শতকরা ২ টাকা হারে বিলম্ব সুদ দিতে হয়। নীট কর দায়ের সঙ্গে নির্ধারিত সুদ যোগ করে বিবরণীর সাথে জমা দিতে হয়।

বিলম্ব সুদ গণনা করা হয় মোট কর দায় থেকে উৎস করসহ অগ্রিম কর বাদ দিয়ে যে নীট কর দায় থাকে তার উপর। এবং কর দিবসের পরের দিন থেকে যেদিন বিবরণী দাখিল করা হয়েছে সেদিন পর্যন্ত।

বিলম্ব সুদ হিসাব করার নিয়ম

বিলম্ব সুদ গণনা করা খুবই সহজ। সহজে বোঝার জন্য এখানে আমরা একটা উদাহরণ ব্যবহার করতে পারি।

ধরে নিলাম, ৩০ জুন ২০১৭ সমাপ্ত আয় বছরে হাসানের মোট কর যোগ্য আয় ছিল ৫ লাখ টাকা। তিনি ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৫ হাজার টাকা উৎস কর প্রদান করেছেন।

৩০ নভেম্বরের মধ্যে আয়কর বিবরণী দাখিল করতে পারবেন না জেনে হাসান বিবরণী দাখিলের জন্য সময়ের আবেদন করলে উপ কর কমিশনার দুই মাস সময় মঞ্জুর করেন।

আমরা জেনে গেলাম যাবতীয় তথ্য। এবার চলুন জেনে নেই হাসানের বিলম্ব সুদ কত এবং তিনি দুমাস পরে বিবরণী দাখিল করার সময় কর দায় এবং বিলম্ব সুদসহ মোট কত টাকা সরকারকে দিলেন।

ধরে নিলাম, হাসানের কর মুক্ত সীমা ২,৫০,০০০ টাকা। তাহলে বাকি ২,৫০,০০০ টাকার উপর ১০% হিসেবে করের পরিমাণ হবে ২৫,০০০ টাকা।

তিনি উৎসে কর দিয়েছেন ৫,০০০ টাকা। তাহলে বাকি থাকলো ২০,০০০ টাকা অর্থাৎ এই টাকা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড হাসানের কাছে নীট কর দায় হিসেবে পাবে। হাসানকে এই টাকার উপরই দুই মাসের বিলম্ব সুদ দিতে হবে।

তাহলে দুই মাসে ২% করে মাসিক ভিত্তিতে ২০,০০০ টাকার উপর সুদ হবে ৮০০ (২০,০০০X২%X২) টাকা। এটাই হল তার মোট বিলম্ব সুদ।

হাসান যখন বিবরণী দাখিল করবেন তখন তার কাছে নীট কর এবং সুদসহ পাওনার পরিমাণ হবে ২০,৮০০ (২০,০০০+৮০০) টাকা।

এই টাকা তিনি বিবরণী দাখিলের সময় পে অর্ডার/চালান/ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে দিতে পারবেন। সঙ্গে আরও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাথে জমা দিলেই বিবরণী দাখিল হয়ে যাবে।

লেখক: জসীম উদ্দিন রাসেল। পেশা: চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট।