সরকারি চাকরীজীবীর আয় ও কর পরিগণনার নিয়ম

আপনি কি সরকারি বেতন আদেশভুক্ত কর্মচারী? আপনার মাসিক মূল বেতন কি ১৬ হাজার টাকা বা তার বেশি? তাহলে এই বছর ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আপনাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2017, 09:05 AM
Updated : 19 Nov 2017, 09:05 AM

সরকারি আদেশভুক্ত কর্মচারি কারা তা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ কর্তৃক জারীকৃত আদেশে বলা হয়েছে। আর তাদের আয়কর কীভাবে গণনা করতে হবে তা ২১ জুন ২০১৭ তারিখে এস,আর,ও নং ২১১-আইন/আয়কর/২০১৭-তে উল্লেখ রয়েছে।

এ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সরকারি বেতন আদেশভুক্ত একজন কর্মচারীর সরকার কর্তৃক প্রদত্ত মূল বেতন, উৎসব ভাতা ও বোনাস (যে নামেই হোক না কেনো) করযোগ্য আয় হিসেবে বিবেচিত হবে। এর বাইরে অন্যান্য ভাতা ও সুবিধাদি যেমন- বাড়িভাড়া ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, যাতায়াত ভাতা, শ্রান্তি বিনোদন ভাতা, বাংলা নববর্ষ ভাতা ইত্যাদি করমুক্ত থাকবে।

তবে বেসরকারি চাকরিজীবীর বেতন থেকে আয় গণনার ক্ষেত্রে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর বিধি-৩৩ অনুযায়ী করতে হয়। যা সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তাই, বেসরকারি চাকরিজীবীর চেয়ে সরকারি চাকরিজীবীর আয় এবং তার উপর কর গণনা করা অনেক সহজ।

একটা উদাহরণ দিয়ে আমরা একজন সরকারি চাকরিজীবীর আয় ও কর গণনা করতে পারি।

ধরে নিলাম, করিম সরকারি চাকরি করেন এবং জুন ২০১৭ সমাপ্ত অর্থ বছরে নিন্মোক্ত হারে বেতন ভাতাদি পেয়েছেন।

০১। মাসিক মূল বেতন ৩৫,৫০০ টাকা।

০২। মাসিক চিকিৎসা ভাতা ৭০০ টাকা।

০৩। উৎসব ভাতা ৭১,০০০ টাকা।

০৪। বাংলা নববর্ষ ভাতা ৭,১০০ টাকা।

০৫। এবং তিনি সরকারি বাসায় থাকেন।

একে একে জেনে নিলাম করিমের বেতন থেকে আয়গুলো। এবার আমরা নিচে ধাপে ধাপে তার করযোগ্য আয়, কর রেয়াত এবং কর দায় নির্ণয় করবো।

মোট করযোগ্য আয়

যেহেতু মি করিম সরকারি কর্মচারি তাই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী শুধু মূল বেতন এবং উৎসব ভাতা ছাড়া আর কিছুই করযোগ্য আয়ের সঙ্গে যোগ হবে না। অর্থাৎ চিকিৎসা ভাতা এবং বাংলা নববর্ষ ভাতা সম্পূর্ণ আয়কর মুক্ত। আর তিনি যেহেতু সরকারি বাসায় থাকেন এবং এ বাবদ নগদ কোনো ভাতা পাচ্ছেন না, তাই এই খাত থেকেও কিছু যোগ হবে না।

তাহলে করিমের বেতন থেকে মোট করযোগ্য আয় হবে ৪,৯৭,০০০ টাকা (মূল বেতন ৩৫,৫০০X১২= ৪,২৬,০০০ টাকা এবং উৎসব ভাতা= ৭১,০০০ টাকা)। এই টাকার উপর তাকে আয়কর দিতে হবে।

কর দায় পরিগণনা

আমরা জানি সাধারণত করমুক্ত সীমা ২,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ কোনো করদাতার যদি করযোগ্য আয় ২,৫০,০০০ টাকা থাকে তাহলে তাকে কর দিতে হয় না।

ধরে নিলাম করিমের কর মুক্ত সীমা ২,৫০,০০০ টাকা। তাহলে প্রথম ২,৫০,০০০ টাকা বাদ দিয়ে অবশিষ্ট ২,৪৭,০০০ টাকার উপর ১০% হারে মোট আয়কর আসে ২৪,৭০০ টাকা।

আমরা কর রেয়াতের কথা শুনেছি যা করের পরিমাণ অনেকাংশে হ্রাস করে। তবে কর রেয়াত পেতে হলে নির্দিষ্ট কিছু খাতে বিনিয়োগ বা অনুদান দিতে হবে। কেবল তখনই করদাতা কর রেয়াত দাবি করতে পারবেন।

কর রেয়াত গণনা

একজন করদাতা সর্বোচ্চ কত বিনিয়োগ সুবিধা পাবেন তা আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-তে বলা আছে। সেখানে তিনটি অংকের কথা বলা হয়েছে। তবে একজন ব্যক্তি করদাতা তার করযোগ্য আয়ের সর্বোচ্চ ২৫% পর্যন্ত বিনিয়োগ হিসেবে দেখাতে পারবেন যার উপর নির্দিষ্ট হারে কর রেয়াত দাবি করতে পারবেন।

তাহলে করযোগ্য আয়ের উপর করিমের সর্বোচ্চ বিনিয়োগের পরিমাণ হবে ১,২৪,২৫০ (৪,৯৭,০০০X২৫%) টাকা। ধরে নিলাম তিনি সম্পূর্ণ টাকাই বিনিয়োগ করেছেন। এই টাকার উপর তিনি ১৫% হারে কর রেয়াত পাবেন। তাহলে কর রেয়াতের পরিমাণ হবে ১৮,৬৩৮ (১,২৪,২৫০X১৫%) টাকা।

নীট কর দায়

বেতন দেওয়ার সময় নিয়মমত উৎসে কর কেটে রাখতে হয়। ধরে নিলাম তার বেতন থেকে উৎসে মাসিক ৩০০ টাকা করে কর কেটে রাখা হয়েছে। তাহলে ১২ মাসে মোট ৩,৬০০ টাকা উৎসে কর কর্তন করা হয়েছে।

তার মোট কর দায় ২৪,৭০০ টাকা। এ থেকে উৎসে কর এবং কর রেয়াত মিলে মোট ২২,২৩৮ (১৮,৬৩৮+৩,৬০০) টাকা বাদ দিতে হবে। বাদ দেওয়ার পর তার নীট কর দায়ের পরিমাণ হবে ২,৪৬২ (২৪,৭০০-২২,২৩৮) টাকা।

এই টাকা চালান/পে অর্ডার/ব্যাংক ড্রাফট এর মাধ্যমে জমা দিয়ে আয়কর বিবরণীর সঙ্গে জমা দিলেই রিটার্ন দাখিল হয়ে যাবে।

লেখক: জসীম উদ্দিন রাসেল। পেশা: চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট।

আরও পড়ুন