এই বিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট জসীম উদ্দিন রাসেল।
বেতন বিবরণী এবং ব্যাংক বিবরণী
চাকরিজীবী করদাতাকে তার প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন বিবরণী সংগ্রহ করতে হবে। সারা বছর ধরে মূল বেতন, বাড়ি ভাড়া ভাতা, যাতায়াত ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, বোনাসসহ মোট কত টাকা পেয়েছেন এবং তার উপর কত টাকা উৎসে কর কর্তন হয়েছে এই তথ্য উল্লেখ করে বেতন বিবরণী নিতে হবে।
জুন মাস শেষ হয়ে যাওয়ার পর হিসাব বিভাগ বা মানবসম্পদ বিভাগ যেখান থেকে বেতন বিবরণী দেওয়া হয়ে থাকে সেখানে যোগাযোগ করে আপনি বিতন বিবরণী সংগ্রহ করতে পারেন।
এর সঙ্গে লাগবে আপনার যে ব্যাংক হিসাবে প্রতি মাসে প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন যায় সেটার গত বছরের জুলাই থেকে এই বছর জুন পর্যন্ত অর্থ বছরের ব্যাংক বিবরণী। বছর শেষ হওয়ার পরে ব্যাংকে গিয়ে এটা সংগ্রহ করতে পারেন।
বাড়ি ভাড়ার চুক্তিনামা, ভাড়ার রশিদ এবং ব্যাংক বিবরণী
যেসব করদাতার আয় বাড়ি ভাড়া থেকে আসে তাদেরকে ভাড়াটিয়ার সঙ্গে যে চুক্তিনামা সম্পাদন হয়েছে তার কপি রিটার্নের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। তাছাড়া প্রতি মাসে ভাড়া নেওয়ার সময় ভাড়াটিয়াকে যে রশিদ দেওয়া হয় তার কপিও সঙ্গে দিতে হবে।
বাড়ি ভাড়া মাসে ২৫ হাজার টাকার সমান বা উপরে হলে যাবতীয় বাড়ি ভাড়া থেকে প্রাপ্ত আয় ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করতে হয়। বাড়ি ভাড়া থেকে আয়ের প্রমাণ হিসেবে সারা বছরের ব্যাংক বিবরণী দাখিল করতে হবে।
বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণের বিবরণী
বাড়ি তৈরি করার সময় যদি ঋণ নিয়ে থাকেন তাহলে সেই ব্যাংক ঋণের বিবরণী সঙ্গে জমা দিতে হবে। ঋণের কিস্তি পরিশোধ করার সময় সঙ্গে সুদও পরিশোধ করতে হয়। সেই সুদ বাড়ি ভাড়া আয় থেকে বাদ গিয়ে করযোগ্য আয় নির্ণয় করা হয়। তাই সুদের প্রমাণ হিসেবে ব্যাংক ঋণের বিবরণী রিটার্নের সঙ্গে দাখিল করতে হয়।
ভূমি রাজস্ব, পৌর কর, সিটি কর্পোরেশন কর, অন্যান্য বিল
বাড়ির মালিককে কর বাবদ সরকারকে ভূমি রাজস্ব দিতে হয়। এছাড়া পৌর কর, সিটি কর্পোরেশন কর, ওয়াসা বিল, গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল ইত্যাদিও পরিশোধ করতে হয়। এসব খরচ বাড়ি ভাড়ার আয় থেকে বাদ গিয়ে করযোগ্য আয় বের করা হয়। তাই এই খরচগুলোর প্রমাণ হিসেবে বিল জমা দেওয়ার কপি রিটার্নের সঙ্গে দাখিল করতে হয়।
স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়/হস্তান্তর
স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়/হস্তান্তর এর ক্ষেত্রে দলিলের কপি জমা দিতে হবে।
অন্যান্য উৎসের আয়
আয়কর বিবরণীতে মোট ১০টি খাত রয়েছে। এর মধ্যে একটি হল অন্যান্য উৎস হতে আয়। বাকি নয়টা খাতের বাইরে যে আয়গুলো রয়েছে সেগুলো এই খাতে দেখাতে হয়। যেমন, লভ্যাংশ, সঞ্চয়পত্রের সুদ, ব্যাংক জমার উপর সুদ ইত্যাদি।
এসব খাত থেকে আয়ের ক্ষেত্রে লভ্যাংশের ওয়ারেন্ট বা সার্টিফিকেটের কপি, সঞ্চয়পত্র নগদায়নের সময় বা সুদ প্রাপ্তির সময় নেওয়া সার্টিফিকেট, ব্যাংক সুদের ক্ষেত্রে ব্যাংক হিসেবের বিবরণী ইত্যাদি আয়কর বিবরণীর সঙ্গে দাখিল করতে হয়।
বিনিয়োগজনিত প্রমাণাদি
একটা ধারণা রয়েছে আয়ের উপর করের পরিমাণ অনেক বেশি। তাই কেউ কেউ হয়ত আয় লুকাতে চান। তবে অনেকেই জানেন না সঠিক ট্যাক্স প্ল্যানিং মোট আয়করের পরিমাণ অনেকাংশে হ্রাস করতে পারে। না জানার কারণে কেউ হয়ত আয় লুকাচ্ছেন। আবার কেউ হয়ত আয়কর বেশি দিচ্ছেন।
তবে আপনি সঠিক খাতে বিনিয়োগ বা অনুদান দিয়ে তার উপর নির্দিষ্ট হারে কর রেয়াত পেতে পারেন।
বিনিয়োগ বা অনুদানের উপর কর রেয়াত পেতে হলে অবশ্যই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্ধারিত খাতে টাকা বিনিয়োগ বা অনুদান দিতে হবে। কেবল তখনই আপনি কর রেয়াত দাবি করতে পারবেন।
আপনি যদি বিনিয়োগ করে থাকেন যেমন- শেয়ার ক্রয়, সঞ্চয়পত্র ক্রয়, ডিপিএস, জীবন বীমা প্রিমিয়াম, স্বীকৃত যাকাত তহবিলে দান ইত্যাদি ক্ষেত্রে যদি আপনি বিনিয়োগ বা অনুদান দিয়ে থাকেন তাহলে তার প্রমাণ হিসেবে প্রমাণাদি রিটার্নের সঙ্গে দাখিল করতে হবে।
আয়কর পরিশোধের প্রমাণাদি
উৎসে কর কর্তনের কথা হয়ত শুনেছেন। যেমন- আপনি যদি চাকরিজীবী হয়ে থাকেন তাহলে লক্ষ্য করেবেন মাস শেষে বেতন থেকে আনুমানিক একটি অংক কর হিসেবে কেটে রেখে ব্যাংক হিসাবে বেতন ‘ট্রান্সফার’ করা হয়েছে। বা ব্যবসা যারা করেন তারা জানেন, পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে মোট বিল থেকে উৎসে কর কর্তন করে বাকি টাকা আপনাকে পরিশোধ করা হয়েছে।
যেহেতু আপনি আয়ের উপর উৎসে কিছুটা কর আগেই দিয়ে দিয়েছেন, তাই বছর শেষে যখন আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন তখন মোট কর দায় থেকে আগে পরিশোধ করা কর বাদ দিয়ে বাকি যেটা থাকবে সেটাই হবে আপনার প্রকৃত করদায়।
এখন এই কর বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে যেটা আপনি দাবি করছেন পূর্বে পরিশোধ করেছেন তার প্রমাণ হিসেবে চালানের কপি, পে-অর্ডার/ব্যাংক ড্রাফট/অ্যাকাউন্ট পে চেক দাখিল করতে হবে।
বেতন থেকে উৎসে করের ক্ষেত্রে হিসাব শাখা থেকে চালানের কপি সংগ্রহ করে নিতে হবে। আর অন্যান্য ক্ষেত্রে যেখানে আপনার আয়ের উপর উৎসে কর কর্তন করেছে সেখান থেকে কর জমা দেয়ার চালান সংগ্রহ করতে হবে।
সব চালান সংগ্রহ করে আয়কর রিটার্নের সঙ্গে দাখিল করতে হবে।
১ জুলাই ২০১৭ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আয়কর রিটার্ন জমা নেওয়া শুরু করেছে। শেষ দিকে ভিড় থেকে বাঁচার জন্য এরইমধ্যে আয়কর বিবরণী দাখিল করা শুরুও হয়েছে।
শেষ দিকে তাড়াহুড়া না করে আগে থেকেই উপরে উল্লেখিত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারেন।
আরও পড়ুন