ডায়াবেটিস রোগ মানে রক্তে শর্করার পরিমাণ ঠিক না থাকা। আর এই রোগে আক্রান্তদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে।
অনেকদিন ধরে এই রোগে ভুগলে স্নায়ু ও রক্তনালী ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনুভূতি কমে যাওয়ার কারণে অনেক সময় দেহের কাটাছেঁড়া টের পাওয়া যায় না।
তাই পায়ে কোনো কারণে ক্ষত হলে অনেক সময় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী টের পায় না। আর সময় মতো ক্ষত না সারানোর ফলে হয়ে যেতে পারে মারাত্মক ক্ষতি।
এই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সের মেডিসিন বিভাগের পরামর্শদাতা ডা. কামরুল হাসান (বিসিএস স্বাস্থ্য) বলেন, “ডায়বেটিসে আক্রান্তদের পায়ে আলসার হলে কিংবা কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা সহজে সারে না। একেই ‘ডায়াবেটিক ফুট’ কিংবা ‘ডায়বেটিক ফুট আলসার’ বলা হয়। তবে ডায়বেটিস নেই বলে এই রোগ অবহেলা করলে চলবে না।”
ধরন
ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ রিসার্চ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেইশন ফর ডায়াবেটিস) বা ‘বার্ডেম’ হাসপাতালে একসময়ে কর্মরত এই চিকিৎসক তার অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, “এই রোগটি তিন ধরনের হয়। ‘আর্টেরিয়াল’ অর্থাৎ পায়ের ধমনীতে আলসার, ‘ভেনাস’ অর্থাৎ শিরায় আলসার এবং ‘নিউরোপ্যাথিক’ অর্থাৎ স্নায়ুতে আলসার।”
কাদের হয়
সব বয়সের মানুষেরই এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে বয়স্কদের ঝুঁকি সবচাইতে বেশি। কারণ তরুণরা পায়ের আঘাত বা ক্ষত সম্পর্কে সচেতন থাকেন। তবে বয়স্করা হাঁটাচলা করতে গিয়ে ব্যথা পান বেশি, দৃষ্টিশক্তি দূর্বল হওয়ার কারণে নখ কাটার সময় আঙুলের কোনা কেটে যাওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধদের বেশি থাকে, আর অবহেলা তো আছেই।
কারণ
এই চিকিৎসকের মতে, “পায়ে আলসার একজন সুস্থ ব্যক্তিরও হতে পারে। নখ কাটার সময় সামান্য কেটে যাওয়া, পায়ে কোনো আঘাত পাওয়া বা কেটে যাওয়া, হাঁটার সময় জুতা কিংবা স্যান্ডেলের অনবরত ঘষা লাগা থেকে সৃষ্ট ক্ষত ইত্যাদি সঠিক যত্ন ও চিকিৎসার অভাবে আলসারের দিকে মোড় নিতে পারে।”
“ডায়বেটিসে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি কয়েকগুন বেশি। আবার ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে এই আলসার মারাত্বক পর্যায়ে পৌছায়।”
উপসর্গ ও রোগ নির্ণয়
আর্টেরিয়াল বা ধমনীতে আলসার হলে ওই ধমনীতে রক্ত সঞ্চালন ব্যহত হয়। ফলে ‘পালস’ বা ধমনীর স্পন্দন পাওয়া যায় না।
ভেনাস বা শিরায় আলসার হলে পায়ে পানি আসে, ফুলে যায়।
সবচাইতে গুরুতর হল নিউরোপ্যাথিক বা স্নায়বিক আলসার। এই রোগে আক্রান্ত হলে পায়ের বোধ শক্তি নষ্ট হয়। ফলে রোগী পায়ে ব্যথা পেলে বা কেটে গেলেও টের পান না।
চিকিৎসা ও পরিণতি
ডা. কামরুল বলেন, “প্রাথমিক অবস্থায় রোগ শনাক্ত করা গেলে ধমনী ও শিরায় হওয়ার আলসারের বিভিন্ন চিকিৎসা রয়েছে। তবে স্নায়ুতে হওয়ার আলসারে চিকিৎসা নেই, ওষুধের মাধ্যমে তার বৃদ্ধিকে দমিয়ে রাখা যায় শুধু।”
“রোগ তীব্র আকার ধারণ করলে আক্রান্ত স্থানে পচন ধরে। ফলে পা কিংবা পায়ের আঙুল কেটে ফেলা ছাড়া গতি থাকে না।”
প্রতিরোধে করণীয়
“ডায়বেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে কড়া সতর্কতাই এই রোগের হাত থেকে বাঁচার প্রধান হাতিয়ার। পায়ে কালো দাগ দেখা দিলে, অনুভূতি কমে যেতে থাকলে, নখ মরে যেতে থাকলে অবহেলা করা যাবে না, কারণ আপনি ডায়বেটিস রোগী। নখের কোনা কাটার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সবসময় নরম তলার জুতা স্যান্ডেল ব্যবহার করতে হবে। মোজা পরতে হবে সুতি কাপড়ের।” পরামর্শ দিলেন ডা. কামরুল।
তিনি আরও বলেন, “যাদের পা ঘামে তাদের উচিত প্রতিদিন পা পরিষ্কার করা এবং যথাসম্ভব পা শুকনা রাখা। কারণ পা অনেকক্ষণ ভেজা থাকলে আঙুলের ফাঁকে জীবাণু সংক্রমণ হতে পারে, যা মোড় নেবে আলসারের দিকে।”
“অপরদিকে যাদের পায়ের ত্বক শক্ত এবংয় শুষ্ক তাদের উচিত পা নিয়মিত পরিষ্কার করা এবং লোশন বা পেট্রোলিয়াম জেলি মাখিয়ে ত্বক নরম রাখা।”
তাই যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের পায়ের যে কোনো ক্ষত হওয়া থেকে সাবধান থাকতে হবে।
আরও পড়ুন