পাকস্থলীর কাছে থাকা পরিপাক-রস নিঃসরণকারী গ্রন্থি অগ্ন্যাশয়ের প্রধান দুটি কাজ হচ্ছে: ইন্সুলিন উৎপন্ন করা এবং চর্বি ও প্রোটিন পরিপাকের জন্য বিভিন্ন এনজাইম তৈরি করা।
উপরের বিষয়গুলো জীববিজ্ঞানের সাধারণ তথ্য। তবে বিশেষ ব্যাপারটি হচ্ছে প্রকৃতিতে এমন কিছু খাবার রয়েছে যা ইন্সুলিন তৈরি করতে সাহায্য করে।
স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে এই বিষয়ের উপর প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভারতীয় বংশোদ্ভূত পুষ্টিবিদ লিউক কাটিনহো বলেন, “অগ্ন্যাশয়ের ‘বেটা সেল’য়ে তৈরি হওয়া ইন্সুলিন হরমোন খাবারের কার্বোহাইড্রেইট থেকে শর্করা নিয়ে কর্মশক্তি তৈরি করে এবং বাড়তি শর্করা ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য জমা রাখে। আর প্রাকৃতি আমাদের এমন কিছু খাবার দিয়েছে যেগুলো গ্রহণের মাধ্যমে অগ্ন্যাশয়ের ‘বেটা সেল’ উত্তেজিত করে শরীরেরই ইন্সুলিন তৈরি করা সম্ভব।”
‘দি গ্রেইট ইন্ডিয়ান ডায়েট (উইথ শিল্পা শেটি)’ এবং ‘ইট স্মার্ট, মুভ মোর, স্লিপ রাইট’ বইয়ের লেখক ‘ইন্টিগ্রেইটিভ অ্যান্ড লাইফস্টাইল মেডিসিন’ বিষয়ে কর্মরত এই পুষ্টিবিদ এরকম কিছু খাবারের নাম জানান, যেগুলো ইন্সুলিন তৈরিতে প্রভাব রাখে।
ঢেঁড়স: ভোজ্য আঁশে ভরপুর এই সবজি রক্তে শর্করার মাত্রার ভারসাম্য এবং ইন্সুলিনের উৎপাদন ও নিঃসরণ বাড়াতে সাহায্য করে। এর বীজে আছে ‘আলফা-গ্লুকোসিডেইস ইনহিবিটর’, যা স্টার্চ বা শ্বেতসারকে শর্করায় পরিণত হতে বাধা দেয়।
রান্না করে খাওয়া তো যায়ই, চাইলে কাঁচা-ঢেড়স ফালি করে কেটে সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে পানিটুকু পান করতে পারেন।
করলা: স্বাদে তিতা হলেও অগ্ন্যাশয়কে উত্তেজিত করতে পারে করলা। এজন্য দায়ি এতে থাকা তিনটি উপাদান, ‘চারানটিন’, ‘ভিসিন’ ও ‘পলিপেপটাইড-পি’। চায়ে মিশিয়ে, শরবত বানিয়ে এবং রান্না করে খাওয়া যায় এটি।
এক কাপ করলার শরবতে ১ টেবিল-চামচ আমলকির রস মিশিয়ে পান করতে প্রাকৃতিকভাবে নিঃসৃত হবে ইন্সুলিন।
মেথি বীজ: এতে থাকে ‘ট্রাইগোনেলিন’, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। বিভিন্নভাবে গ্রহণ করা যায় এটি। যেমন মেথি বীজের গুঁড়া গরম পানিতে মিশিয়ে পান করতে পারেন। কিংবা সারারাত পানিতে ভেজানো বীজ পরদিন সালাদের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন।
দারুচিনি: এই মশলাটি কোষকে ইন্সুলিনের প্রতি সংবেদনশীল করে। আবার অগ্ন্যাশয়ে ইন্সুলিন তৈরি করতেও সাহায্য করে। রান্নায় কিংবা চায়ে দারুচিনি ছড়িয়ে দিতে পারেন।
ইন্সুলিন গাছ: এই নামে চিনছেন না তো! আসল নাম ‘জারুল’ গাছ। পরিচিত এই গাছের পাতা অগ্ন্যাশয়ের ‘বেটা সেল’কে সক্রিয় করতে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে। এতে থাকা ‘কোরোসোলিক অ্যাসিড’ ইন্সুলিন উৎপাদনে সহায়ক, ফলে নিয়ন্ত্রণে থাকে ‘হাইপারগ্লাইসেমিয়া’ বা রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। এছাড়াও এটি ‘হাইপোলিপিডেমিক’ অর্থাৎ রক্তে চর্বি ও কোলেস্টেরলের মাত্রায় কমায়, মূত্র বাড়ায়, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-মাইক্রোবায়াল, ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায্য করে।
প্রতি সকালে দুএকটি জারুল গাছের পাতা চিবিয়ে খান।
এগুলো ছাড়াও শণবীজ, আঙুর, অ্যালোভেরার সরবত অগ্ন্যাশয়ের ‘বেটা সেল’কে মেরামত করে এবং ইন্সুলিন উৎপাদনে সাহায্য করে।
তবে যারা নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করেন তাদের উচিত হবে এগুলো খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যাতে কোনো ওষুধের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া না ঘটে।
আরও পড়ুন