‘এক্সফলিয়েশন’য়ের আদ্যপ্রান্ত

ত্বকে জমে থাকা ধুলাবালি ও মৃতকোষ দূর করে কোমলতা ফিরে পেতে এক্সফলিয়েশনের বিকল্প নেই। তবে রূপচর্চার এই বিশেষ ধাপটি সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা কম।

ইরা ডি. কস্তাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Oct 2016, 05:26 AM
Updated : 9 Oct 2016, 11:06 AM

এক্সফলিয়েশন বা স্ক্রাবিং রূপচর্চার একটি গুরুত্বপূ্র্ণ ধাপ। ঠিক কখন বা সপ্তাহে কতবার ত্বকে এক্সফলিয়েটর ব্যবহার করা ‍উচিত এ সম্পর্কে জ্ঞান অনেকেরই কম। এক্সফলিয়েশন ত্বকের জন্য যেমন উপকারী তেমনি অতিরিক্ত করা হলে ক্ষতি হতে পারে।

এই বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন মেইকআপ আর্টিস্ট এবং প্রশিক্ষক ফারজান মিতু।

ফারজান বলেন, “বিশেষ ধরনের কেমিকল বা অনুষঙ্গের সাহায্যে স্ক্রাবিং করা হয়। এর সাহায্যে ত্বকের উপর জমে থাকা ময়লা ও মৃত কোষ দূর করে। এতে ত্বক কোমল থাকে এবং উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য নিয়ম করে স্ক্রাবিং করা অত্যন্ত জরুরি, তবে এটি অনেকেরই অজানা।”

“ত্বকে মৃত কোষ জমে লোমকূপ বন্ধ হয়ে যেতে পারে, এই পরিস্থিতি দেখা না গেলেও এ থেকে ব্রণ, র‌্যাশ, হোয়াইট ও ব্ল্যাকহেডস হতে পারে। তাই সব ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তির এক মাত্র উপায় ত্বক পরিষ্কার রাখা।” বলেন ফারজান।

আমাদের ত্বকের উপর সবসময়ই মৃত কোষ জমতে থাকে। পুরানো কোষ মরে গিয়ে নতুন কোষ উৎপন্ন হয়। কিন্ত মৃত কোষ জমে থাকলে এই প্রক্রিয়ায় ব্যঘাত ঘটে। ত্বক পরিষ্কার না করলে লোমকূপ আটকে যায় এবং সেখানে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে এ থেকে শুরু হয় নানান সমস্যা। তাই উপরের এই অংশ যথাসম্ভব পরিষ্কার রাখা উচিত।

এক্সফলিয়েশন করার পদ্ধতি: এক্সফলিয়েশনের জন্য সবচেয়ে সহজ এবং সুবিধাজনক হল স্ক্রাবার ব্যবহার। স্ক্রাবার হল এক ধরনের ক্লিনজার যার মধ্যে দানাদার উপাদান থাকে। যা ত্বকের উপরে জমে থাকা পরত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। তাছাড়া এ পদ্ধতিতে সবচেয়ে পুরাতন ব্যবহৃত বস্তু হচ্ছে স্পঞ্জ বা লোফা যা প্রচলিত ভাষায় ঘষুণি হিসেবে পরিচিত। এছাড়া রয়েছে কিছু কেমিকল যা এক্সফলিয়েট করতে উপযোগী। আরও আছে কিছু যন্ত্র।

ফারজান জানান, এসব দিক থেকে এক্সফলিয়েটরগুলোকে কয়েকটি ভাগে আলাদা করা হয়। কেমিকল এক্সফলিয়েটর এবং মেকানিকল। কেমিকল এক্সফলিয়েটরের তালিকায় রয়েছে কিছু রাসায়নিক উপাদান যা কিছুটা অ্যাসিডিক। এগুলো ত্বকে ব্যবহারের ফলে মৃত কোষ এবং জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার হয়। অন্যদিকে মেকানিকল এক্সফলিয়েটরের তালিকায় আছে ব্রাশ, স্পঞ্জ এবং লোফা।

দুই ধরনের মাধ্যমই এক্সফলিয়েশনের জন্য উপযুক্ত তবে কোনটি কোন ত্বকের জন্য উপযোগী তা বাছাই করতে হবে ত্বকের ধরণ, সমস্যা এবং পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে। এমন পরামর্শই দেন ফারজান।

বাজারে যেসব এক্সফলিয়েটর পাওয়া যায় তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সকলের জন্য কম-বেশি উপযোগী। ম্যাসেজিং স্ক্রাব, এক্সফলিয়েটিং ফেইসওয়াশ অথবা ক্রিম ইত্যাদি বেশ সহজলভ্য। ত্বকে যতটা সম্ভব কেমিকল ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। তাই নিয়মিত ব্যবহারের জন্য কোমল স্ক্রাবার বেছে নেওয়াই সব থেকে ভালো।

ফারজান বলেন, “ফল দিয়ে তৈরি কিছু স্ক্রাব বাজারে বেশ সহজলভ্য, এগুলো ত্বকের জন্য তুলনামুলকভাবে কোমল। এছাড়া কেমিকল সমৃদ্ধ ‘পিল অফ এক্সফলিয়েটিং মাস্ক’ পাওয়া যায়। যা সব ধরনের ত্বকের জন্য মোটেও উপযোগী নয়। আর ত্বক যদি সংবেদনশীল হয় তাহলে অবশ্যই ভেষজ উপাদানে তৈরি স্ক্রাব ব্যবহার করতে হবে। ত্বকের উপর খুব চাপ দিয়ে বা জোরে ঘষে স্ক্রাব করা যাবে না। এতে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।"

যদি বাজারে যে সব স্ক্রাব পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহার করতে না চাইলে নিজেই এক্সফলিয়েটর তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে ঘরোয়া কিছু উপাদান দিয়ে। 

এই স্ক্রাব তৈরি করতে প্রয়োজন হবে ডালের গুঁড়া, ওটমিলের গুঁড়া ও চালের গুঁড়া। পরিমাণ মতো এই গুঁড়াগুলো পানি বা গোলাপ জলের সঙ্গে মিশিয়ে ঘরোয়া স্ক্রাব তৈরি করতে হবে। চাইলে সঙ্গে মধু ও দুধ মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে।

বাজারে বেশ কিছু স্বয়ংক্রিয় ফেইশল ব্রাশ পাওয়া যায়, যেগুলো ত্বক পরিষ্কারে বেশ উপযোগী। তবে ত্বক যদি শুষ্ক ও সংবেদনশীল হয় তাহলে এই ধরনের ব্রাশ ব্যবহার না করাই ভালো। এক্ষেত্রে বাথ স্পঞ্জ বা লোফা ব্যবহার করাই যথেষ্ট। ঘরে তৈরি লবণ বা চিনি দিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে নেওয়া যাবে।

সপ্তাহে কত দিন: ফারজান বলেন, “সপ্তাহে তিন দিন স্ক্রাব করা যেতে পারে। মুখের ত্বকের সঙ্গে সময় করে পুরো শরীরের ত্বকের যত্নও নেওয়া জরুরি। তাই সময় করে শরীরের ত্বকেরও স্ক্রাব করা দরকার। এক্সফলিয়েশনের পর অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। নতুবা ত্বক শুষ্ক হয়ে যাবে।”

প্রতীকী মডেল: তাসমিয়া মীম। ছবি: দীপ্ত। কৃতজ্ঞতায়: আকাঙ্ক্ষা’স গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ড।