মাংস দীর্ঘদিন ভালো রাখতে

মাংস তাজা ও টাটকা অবস্থায় রান্না করাই সব থেকে ভালো। এতে মাংসের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বজায় থাকে। তবে কোরবানির মাংস সংরক্ষণ করতেই হয়।

শিশিরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Sept 2016, 12:15 PM
Updated : 12 Sept 2016, 12:15 PM

রন্ধনশিল্পী ও গৃহিনী সাইমা সৈয়দ জানিয়েছেন ঘরে মাংস সংরক্ষণের পদ্ধতি।

- প্রথমেই ফ্রিজ ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। কারণ দীর্ঘদিন মাংস সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজ পরিষ্কার থাকা খুবই জরুরি। ফ্রিজে আগের মাছ ও মাংসের কারণে গন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

- মাংস সংরক্ষণের আগে অবশ্যই ভালোভাবে রক্ত ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। ধোয়ার পর অতিরিক্ত পানি ঝরানোর জন্য বড় ঝুড়িতে রেখে দিন। মাংস থেকে পানি ঝরে গেলে পলিথিন বা প্লাস্টিকের প্যাকেটে রেখে ভালোভাবে মুখ পেঁচিয়ে বা বন্ধ করে ফ্রিজে রাখতে হবে।

- কোরবানির তিন থেকে চার ঘণ্টা পর্যন্ত মাংস শক্ত থাকে। এই সময় মাংস ফ্রিজে না রাখাই ভালো। পরে খানিকটা নরম হলে মাংস সংরক্ষণ করতে হবে।

- ফ্রিজে রাখার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন মাংসের টুকরা বেশি বড় না হয়। ছোট ছোট টুকরা করে মাংস সংরক্ষণ করা ভালো।

- ফ্রিজে সংরক্ষণের জন্য মোটা ও ভালোমানের পলিথিন বেছে নেওয়া উচিত।

- ফ্রিজে একেকটি মাংসের প্যাকেট রাখার সময় মাঝে মোটা কাগজের টুকরা দিয়ে রাখা যেতে পারে। এতে একটি মাংসের প্যাকেটের সঙ্গে অন্য প্যাকেট আটকে যাওয়ার ঝুঁকি থাকবে না।

- মাংস সংরক্ষণের জন্য অবশ্যই নতুন ও পরিষ্কার প্যাকেট ব্যবহার করতে হবে। পুরানো বা আগের ব্যবহৃত পলিথিন ব্যবহার করলে মাংস গন্ধ হয়ে যেতে পারে।

- ফ্রিজে মাংস রাখার পর তাপমাত্রা কমিয়ে দিতে হবে। এতে মাংস তাড়াতাড়ি জমবে।

মাংস সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজের আদর্শ তাপমাত্রা সম্পর্কে জানালেন বেঙ্গল মিটের খুচরা বিক্রয়কেন্দ্রগুলোর সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুমুল হক।

তিনি বলেন, “এক বছর পর্যন্ত মাংস সংরক্ষণ করতে চাইলে ফ্রিজের তাপমাত্রা থাকতে হবে মাইনাস ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে বাসাবাড়িতে থাকা ফ্রিজগুলোতে সাধারণত এতটা ঠাণ্ডা করার সুবিধা থাকে না। সেক্ষেত্রে মাইনাস চার ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে মাইনাস পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মাংস রাখলে পাঁচ থেকে ছয় মাস পর্যন্ত ভালো থাকবে। মাংস রাখার পর ফ্রিজ যতটা সম্ভব কম খোলার চেষ্টা করতে হবে।”

ফ্রিজ না থাকলে সংরক্ষণের উপায় সম্পর্কে জানিয়েছেন উম্মাহ’স কিচেনের রন্ধনশিল্পী উম্মাহ মোস্তফা।

জ্বাল দিয়ে সংরক্ষণ: এই পদ্ধতিতে মাংস সংরক্ষণ করতে চাইলে প্রথমেই মাংস ভালো ভাবে ধুয়ে নিতে হবে। পরে এক কেজি মাংসের সঙ্গে এক কেজি চর্বি, পরিমাণ মতো হলুদ ও লবণ মাখিয়ে পানি দিয়ে জ্বাল দিতে হবে। এই মাংস দিনে অন্তত দুবার জ্বাল দিলে এক থেকে দুই মাস পর্যন্ত মাংস ভালো থাকবে।

সিরকা বা ভিনিগারে ডুবিয়ে সংরক্ষণ: প্রথমেই দুতিন কেজি মাংসে ৪ টেবিল-চামচ বিট লবণ ও ৪ টেবিল-চামচ বাদামি চিনি মাখিয়ে নিতে হবে। পরে ১ লিটার সিরকা বা ভিনিগারে মাংস পুরোপুরি ডুবানো অবস্থায় ঢেকে রেখে দিন। তবে এক বছরেরর মধ্যেই এই মাংস খেয়ে ফেলতে হবে।

ছবি: রয়টার্স।

সিদ্ধ করে সংরক্ষণ:
মাংস ছোট করে কেটে গরম মসলা ও আস্ত আদা-রসুন দিয়ে আধা সিদ্ধ করে নিতে হবে। মাংসের রং সামান্য ফ্যাকাশে হলেই নামিয়ে নিতে হবে। পরে ঠাণ্ডা করে সিরকা বা ভিনিগারে ডুবিয়ে রেখে দিতে হবে।

আরেকটি পদ্ধতি জানিয়েছেন রন্ধনশিল্পী সায়মা সৈয়দ।

রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ: এ প্রক্রিয়ায় শুকিয়ে ফেলার ফলে মাংসে কোনো পানি থাকে না। তাই মাংস দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়।

এ জন্য প্রথমে মাংস ছোট টুকরা করে কেটে নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনো চর্বি না থাকে। এবার চিকন তারে গেঁথে মাংস টানা রোদে শুকাতে হবে।

ছাদে, বারান্দায় বা উঠানে মাংস শুকাতে দিলে পাতলা কাপড়ে পেঁচিয়ে মাংস শুকাতে দেওয়া উচিত। এতে মাংসে ধুলা ময়লা পড়বে না। টানা পাঁচ থেকে ছয় দিন মাংস রোদে শুকাতে হবে। এতে মাংস থেকে সমস্ত পানি শুকিয়ে যাবে।

তবে রোদ না থাকলে এই পদ্ধতি অনুসরণ না করাই ভালো, কারণ ভালোভাবে না শুকালে মাংস নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

রোদে শুকানো মাংস রান্নার আগে হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এতে মাংস নরম হবে।

সাইমা সৈয়দ বলেন, “মাংস অতিরিক্ত তেল বা মসলা দিয়ে রান্না করলে স্বাদ ও পুষ্টিমাণ কমে যায়। তাই মাংস রান্নার ক্ষেত্রে তেল ও মসলা পরিমাণ মতো ব্যবহার করতে হবে। আর রান্নার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন ঠিকভাবে রান্না হয়। সঠিকভাবে রান্না না হলে তা খাওয়া উচিত নয়।”