স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কৌশল

সুস্থ জীবনের জন্য কম খাওয়া বা খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া তেমন কোনো উপকার করতে পারে না। পরিমাণের চেয়ে জরুরি হচ্ছে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 June 2016, 11:50 AM
Updated : 11 June 2016, 12:09 PM

মুম্বাইয়ের কর্পোরেট পুষ্টিবিদ ড. নুপুর কৃষ্ণা জানান স্বাস্থ্যকর খাদ্য নয় সুস্থ জীবনযাপনের জন্য জরুরি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস।

স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তিনি জানান, প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর ও পরিমিত পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। যে সব খাবার খেতে ভালো লাগে সেসব খাবার পুষ্টিগুণ বিবেচনা করে খাদ্য তালিকায় যোগ করতে হবে। তবে মূল বিষয় হচ্ছে, ওজন ও উচ্চতার আদর্শ অনুপাতটা মাথায় রাখা। এটাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের সবচেয়ে সহজ উপায়।

ড. কৃষ্ণার কথায় সমর্থন জানিয়ে পুষ্টিবিজ্ঞানী এবং ক্লিনিকাল ডায়েটেশিয়ান ড. পুজা মাখিজা বলেন, কম খাওয়া আসলে সুস্থ থাকায় কোনো সাহায্য করতে পারে না। কম খেয়ে ওজন কমানো যেতে পারে, তবে স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য কম খাওয়া ক্ষতিকর। তাই কম ক্যালোরির ডায়েট না করাই ভালো।

ইচ্ছাকে দমন: মাঝে মাঝেই আমাদের বিশেষ কোনো খাবার খাওয়ার জন্য প্রাণ ছুটে যায়। দেখা যায় ভরা পেটেও আমরা সেই বিশেষ খাবার খেতে ছুটছি।

ডাক্তারদের মতে, এই খাওয়ার ইচ্ছার সঙ্গে ক্ষুধার কোনো সম্পর্ক নাই। এটা শুধুই মনের মধ্যে তৈরি একটা কল্পনা যা খাবারের প্রতি তীব্র টান তৈরি করে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, যখন কিছু খাওয়ার জন্য তীব্র আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয় তখন অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যেতে হবে। এতে খাবারের প্রতি মনযোগ থাকে না আর খাওয়ার ইচ্ছাটাও ধীরে ধীরে প্রশমিত হয়।

দুপুরের সঠিকভাবে খাওয়া: ব্যস্ত জীবনে ঠিকভাবে দুপুরের খাওয়া খাওয়ার সময় হয় না। অনেক সময়ই হাঁটাচলা বা কাজের মধ্যে যাই হোক কিছু একটা মুখে গুঁজে নেই। কখনও কখনও সেগুলো হালকা নাস্তা, বিস্কুট বা বাদাম দেওয়া উচ্চ ক্যালোরির ‘বার’ হয়। অল্প সময়ে সাবাড় করা যা এই খাদ্যগুলোতে ক্যালোরির পরিমাণ যথেষ্ট বেশি হয়ে যায়। ফলে শরীর তার প্রয়োজনীয় শক্তি পেয়ে যায়। তবে মস্তিষ্ক পায় না। পাশাপাশি এই খাবারগুলো আকারে ছোট হওয়ায় পেটের অধিকাংশ অংশই খালি থেকে যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলেন দুপুরের খাবার এভাবে খেলে পেট তো ভরেই না উল্টো অতিরিক্ত পুষ্টি গ্রহণ করা হয় যা শরীরের মোটেই দরকার ছিল না। এ থেকে বাঁচতে একটা সঠিক নিয়মের খাবার খাওয়া দরকার। যত ব্যস্ততাই থাকুক কাজ থামিয়ে, একটা টেবিলে বসে প্লেটে খাবার বেড়ে একটু সময় নিয়ে খেতে হবে। এভাবে খেলে শরীর পুষ্টি পায় খাবার হজম হয় এবং দীর্ঘ সময় পর্যন্ত খাবার পেটে থাকে।

কোনো খাবারকে ‘না’ বলা নয়:
সুস্বাস্থ্য রক্ষায় কিছু সাধারণ কথা মাথায় গাঁথা থাকে। যেমন- চিনি বাদ দেই, লবণ এবং শর্করা থেকে বেঁচে চলি। তবে এই ‘না’ বলা বা এড়িয়ে চলায় তেমন কোনো উপকার হয় না। কেননা শরীরে এই খাদ্যগুলোরও কিছুটা প্রয়োজন আছে।

পাশাপাশি এগুলো থেকে দূরে থাকতে গিয়ে এ ধরনের খাবারের প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ তৈরি হয়। ফলে সুযোগ পেলে অনেকটা খেয়ে ফেলা হয়। এভাবে অনেকটা খেয়ে ফেললে শরীরের ক্ষতি আরও বেশই হয়। তাই নির্দিষ্ট খাবার কিছু না এড়িয়ে এগুলোকে পরিমিত মাত্রায় খাওয়া যেতে পারে। 

খাবারের প্রতি সঠিক মনোভাব গড়ে তোলা: খাবার নিয়ে অনেকের অনেক রকমের ফ্যান্টাসি আছে। প্রায় সবাই খাওয়াকে উৎসব মনে করে। যে কোনো কিছু উদযাপন করতে বিশাল ভোজ দেয়। এ ছাড়াও মন খারাপে খাওয়া, সময় কাটানোর খাওয়া, নতুন রেস্তোরাঁয় রেসিপি চেখে দেখার খাওয়ার মতো শত শত বাহানা তো আছেই। এই খাওয়ার ধাক্কায় মূল একটি বিষয় সবাই ভুলে বসে, সেটা হল- ‘খাদ্যের আসল কাজ ক্ষুধা নিবারণ করা।’

খাওয়া নিয়ে যার যেরকম আবেগ কাজ করুক না কেনো, খেতে হবে শুধুমাত্র ক্ষুধা লাগলে। মানে যখন দেহের চাহিদা হবে তখনই খাবার খাওয়া উচিত। আর পুষ্টিবিদেদের মতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে সারাদিন ধরে ‘স্ন্যাক্স’ খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।

ছবি: রয়টার্স।