স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে এরকম কিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়।
ক্লান্তির কারণে ব্যায়াম ছেড়ে দেওয়া
শরীরের শক্তি সঞ্চয়ের জন্য প্রতিনিকার ব্যায়াম ছেড়ে দিলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
জর্জিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক গবেষণায় দেখা গেছে, বয়স্ক কিন্তু স্বাস্থ্যবান বৃদ্ধ যারা সপ্তাহে অন্তত তিন দিন ন্যুনতম ২০ মিনিট হালকা ব্যায়াম শুরু করেছেন, ছয় সপ্তাহ পর তারা আরও বেশি সতেজ ও কম ক্লান্ত বোধ করছেন।
নিয়মিত শরীরচর্চা শক্তি ও সহিষ্ণুতা বাড়িয়ে দেয়। পাশাপাশি কার্ডিওভাস্কুলার পদ্ধতি সচল রাখে। শরীরের কোষে কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে। তাই যখনই ক্লান্তিতে শরীর ভেঙে পড়তে চায়, অন্তত কিছু সময় হাঁটুন- উপকার পাবেন।
যথেষ্ট পানি পান না করা
তিনি বলেন, “পানির অভাব রক্তের পরিমাণ হ্রাস করে রক্তের ঘনত্ব বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে হৃদপিণ্ডের রক্তসঞ্চালন ব্যাহত হয়, পেশি ও দেহযন্ত্রগুলোতেও অক্সিজেন ও পুষ্টির সরবরাহের গতি কমে যায়।”
তিনি পরামর্শ দেন, শরীরের দৈনিক পানির চাহিদা নির্ণয় করতে হলে নিজের ওজনকে পাউন্ডে রূপান্তর করে তার অর্ধেক হিসেব করুন। এবং তত আউন্স পানি পান করুন প্রতিদিন।
লৌহজাতীয় খাবার গ্রহণ না করা
দেহে লৌহের স্বল্পতা আপনাকে করে তুলতে পারে অলস, খিটখিটে, দুর্বল আর অন্যমনষ্ক।
গুডসন বলেন, “এর ফলে আপনি দুর্বল হয়ে যেতে পারেন কারণ, পেশি আর কোষে কোষে অক্সিজেনের সরবরাহ কমে যায়।”
রক্তশূন্যতার ঝুঁকি রোধে খাদ্যতালিকায় লৌহের পরিমাণ বাড়িয়ে নিন। চর্বিহীন মাংস, বৃক্ক, গাঢ় সবুজ শাকসবজি, পিনাট বাটার পাশাপাশি উচ্চমাত্রায় ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন গুডসন।
উল্লেখ্য, ভিটামিন সি শরীরে লৌহ শোষণ করতে সাহায্য করে।
অল্পতেই দুশ্চিন্তায় অস্থির হওয়া
অফিসে একটি অপ্রত্যাশিত মিটিংয়ে ডাক পড়লে কি আপনি চাকরি হারানোর চিন্তায় অস্থির হয়ে যান? অথবা মোটরবাইকে চড়েন না, দুর্ঘটনা ঘটবে এই ভয়ে? আপনি আশংকায় থাকেন সবচেয়ে খারাপ পরিণতিটি আপনার সঙ্গেই ঘটবে?
নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের মনোরোগবিদ্যার অধ্যাপক আইরিন এস. লিভাইন (পিএইচডি) বলেন, “এরকম অহেতুক দুশ্চিন্তা কর্মশক্তি লোপ করে।”
তিনি পরামর্শ দেন, অপ্রয়োজনীয় নেতিবাচক চিন্তা মনে ভিড় করলে একবার বুক ভরে গভীর শ্বাস নিন, নিজেকেই প্রশ্ন করুন- এসব কিছু আদৌ কি ঘটবে? নাকি সবই মনের অহেতুক ভয়?
বাইরে ঘুরতে যাওয়া, নিয়মিত ধ্যান ও শরীরচর্চা, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা- ইত্যাদি অভ্যাস আপনাকে রাখবে সদাপ্রফুল্ল আর করে তুলবে আরও বাস্তববাদী।
সকালের নাস্তা না খাওয়া
শরীরের জ্বালানি হচ্ছে খাবার। এমন কি ঘুমানোর সময়ও শরীর সে জ্বালানি কাজে লাগিয়ে রাতভর রক্ত ও অক্সিজেন সঞ্চালন করে। তাই ঘুম থেকে উঠে সকালের নাস্তা খাওয়া জরুরি।
গুডসন বলেন, “সকালের নাস্তা বিপাক প্রক্রিয়াকে নতুনভাবে চালু করে।”
সকালের নাস্তায় তিনি শস্যজাত খাবার, চর্বিবিহীন আমিষ আর স্নেহসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন।
অতিরিক্ত ‘জাঙ্কফুড’ খাওয়া
উল্লেখ্য, গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) কার্বোহাইড্রেটজাতীয় খাবার রক্তের শর্করায় কতটুকু প্রভাব ফেলে, তার মাত্রা নির্দেশক।
রক্তে শর্করার ওঠানামা সারাদিনের ক্লান্তির কারণ হতে পারে। গুডসন রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখার পরামর্শ দেন। তার মতে, স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকায় মুরগির মাংস, বাদামি চাল, মিষ্টি আলু, সালাদ ও ফলমূল থাকা উচিত।
অত্যধিক কাজের চাপকে ‘না’ বলতে না পারা
বেগার খাটতে গিয়ে নিজের শক্তি ও প্রশান্তি নষ্ট করবেন না। তাই ‘না’ বলতে শিখুন।
অগোছালো কর্মক্ষেত্র
প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, কর্মক্ষেত্রের অগোছালো অবস্থা মনঃসংযোগ এবং মস্তিষ্কের তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। কাজের সময় থেকে ব্যক্তিগত সময়কে আলাদা রাখুন। অফিসের ডেস্কে বড় রকমের গোছগাছ করতে হলে একেবারেই পুরোটা করে ফেলতে যাবেন না। চোখের সামনে যা কিছু পড়ে সেটাই গুছিয়ে ফেলুন। তারপর ডেস্ক আর কেবিনেটের একটি একটি ড্রয়ার ধরে গোছাতে শুরু করুন।
বিশ্রামের সময়েও কাজ
অবকাশযাপনের সময়ে অফিসের কাজকর্ম করা চরম অবসাদের কারণ হতে পারে। মাঝে মাঝে সমস্ত ব্যস্ততা থেকে অবসর নিন, নতুন উদ্যোমে কর্মক্ষেত্রে ফিরে আসতে পারবেন।
শোবার আগে মেইল চেক করা
নিউইয়র্ক নিউরোলজি অ্যান্ড স্লিপ মেডিসিনের মেডিকল ডিরেক্টর ড. অ্যালেন টৌফিঘ বলেন, “মেলাটোনিন হরমোন আমাদের ঘুমানো ও জেগে ওঠা নিয়ন্ত্রণ করে।”
তার মতে, ঘুমানোর কমপক্ষে দুই ঘণ্টা আগ থেকে সব ধরণের প্রযুক্তির ব্যবহার বন্ধ রাখা উচিত।
তিনি পরামর্শ দেন, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে না চাইলে শোবার সময় আপনার ‘ডিভাইস’টি মাথা থেকে অন্তত ১৪ ইঞ্চি দূরে সরিয়ে রাখুন।
ছবি: রয়টার্স।