ধূমপান ছাড়াও ত্বকের নানান সমস্যার কারণে ঠোঁট কালচে হতে পারে।
Published : 11 Feb 2024, 06:03 PM
ত্বক ও চুলের মতো ঠোঁটেরও বাড়তি যত্নের প্রয়োজন। শুষ্কতার কারণে ঠোঁট কালচে হতে পারে।
তবে এটা ‘পিগ্মেন্টেইশন’ হওয়ার এক মাত্র কারণ হয়।
এই বিষয়ে ভারতের ‘দ্যা এস্থেটিক ক্লিনিক্স’য়ের কস্মেটোলজিস্ট, ডার্মাটো সার্জন ও ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. রিংকি কাপুর বলেন, “অন্যান্য অংশের ত্বকের মতো ঠোঁটে কোনো গ্রন্থি নেই। ফলে ঠোঁট শুকানোর মতো সমস্যাসহ আঠালোভাব হতে পারে। এমনকি কারও কারও ঠোঁটে দেখা দেয় কালচে দাগ।”
হেল্থশটস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “ঠোঁটে নানান কারণেই কালচে দাগ দেখা যেতে পারে, এতে দুশ্চিন্তা কারণ নেই। তবে যদি ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করেও দাগ না কমে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।”
ওরাল মেলানোমা
ত্বকের ক্যান্সার বা ওরাল মেলানোমা ক্যান্সারের একটি বিপজ্জনক রূপ যা ছোট কালো বা বাদামি রংয়ের দাগ হিসেবে দেখা দেয়। যা ঠোঁটের আকার, আকৃতি ও রংয়ে পরিবর্তন আনতে পারে।
হাইপারপিগমেন্টেইশন
ঠোঁট-সহ ত্বকের যে কোনো স্থানেই এমনটা দেখা দিতে পারে। ‘হাইপারপিগ্মেন্টেইশন’য়ের নানান কারণ থাকে। যেমন- গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তন, ক্ষত, পোকার কামড়, ব্রণ, কঠিন প্রসাধনী ইত্যাদি।
‘হাইপারপিগ্মেন্টেইশন’ কমাতে সানব্লক সমৃদ্ধ লিপ বাম ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে অ্যাজলেইক অ্যাসিড, ট্রেটিনোইন, কজিক অ্যাসিড ও হাইড্রোকুইনিয়ন ব্যবহারের মাধ্যমে ঠোঁটের কালো দাগ দূর করা যায়।
প্রসাধনীর অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া
ঠোঁটের কালো দাগ কোনো প্রসাধনীর অ্যালার্জির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণেও হতে পারে। এই অবস্থাকে বলা হয় ‘অ্যালার্জিক কন্টাক্ট চাইলাইটিস’ বা ‘পিগ্মেন্টেড কন্টাক্ট চাইলাইটিস’।
হেমোক্রোমাটোসিস বা অতিরিক্ত লৌহ
শরীর যখন অতিরিক্ত আয়রন বা লৌহ সঞ্চয় করা শুরু করে বা শোষণ করে তখন ত্বকে কালো দাগ, ক্লান্তির ছাপ, যকৃতের সমস্যা ও ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
এই সমস্যা কমাতে আয়রন বা লৌহ গ্রহণের পরিমাণ কমাতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ও সম্পূরক গ্রহণ করতে হবে।
পানিশূন্যতা
পানি শূন্যতার ফলে ত্বকে শুষ্কতার ছাপ দেখা দেয়। শুষ্ক ও ফাঁটা ঠোঁট বারবার জিহ্বা দিয়ে ভিজিয়ে নেওয়া হয় অথবা কামড়ানো হয়। ফলে প্রদাহ বাড়ে ও ‘হাইপারপিগমেন্টেইশন’ দেখা দেয়। যা পরে গাঢ় ও কালচে রংয়ের হয়ে থাকে।
রোদের ছাপ
‘অ্যাস্টিনিক কেরাটোসিস’ এমন এক ধরনের দাগ যা সূর্যালোকের সংস্পর্শে গেলে অতিরিক বেগুনি রশ্মির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকে হয়ে থাকে। হিমায়িত অথবা কেমিকেল পিলের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞরা এই সমস্যার সমাধান করেন।
ভিটামিন বি ১২’য়ের ঘাটতি
ভিটামিন বি ১২’য়ের ঘাটতির কারণে ত্বক কালো হয়ে যায়। এটা অ্যানিমিয়ার লক্ষণ। অন্যান্য লক্ষণগুলো হল- মুখে আলসার বা ক্ষত, অস্বস্তি, লাল জিহ্বা, ব্যথা, ত্বকে হলুদ দাগ ইত্যাদি।
এই সমস্যা উপশমে মাল্টিভিটামিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। গুরুতর অভাবজনিত রোগে সপ্তাহিক ইঞ্জেকশন গ্রহণ করতে হতে পারে।
ধূমপান
ধূমপানের কারণে ঠোঁট কালচে হয়ে যায়। আর সমাধানে ত্বকের আরোগ্য লাভের জন্য ধূমপান বাদ দেওয়া জরুরি।
ওষুধ
নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ যেমন- ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী ওষুধ, ব্যথানাশক, মাইক্রোবিয়াল বিরোধী ওষুধ ইত্যাদি পিগ্মেন্টেইশন বাড়ায়।
এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা জরুরি।
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
থাইরয়েড বা অন্যান্য হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণেও ত্বকে দাগ পড়তে পারে। এক্ষেত্রে হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়।
মেলানোটিক ম্যাকুয়্যুল
এটা এক ধরনের ক্যান্সার ধরনের ‘হাইপার পিগমেন্টেইশন’। এর ফলে ত্বকে মেলানিনের অতিরিক্ত উৎপাদন দেখা দেয়। আর এটি সঠিক চিকিৎসা ও সূর্যালোক থেকে সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে সারিয়ে তোলা যায়।
ঠোঁটের কালো দাগ দূর করার কয়েকটি উপায়
এসপিএফ যুক্ত লিপ বাম ব্যবহার। যা ঠোঁটের কালো দাগ ও পিগ্মেন্টেইশন কমায়।
পর্যাপ্ত পানি পানের মাধ্যমে আর্দ্র থাকা। লিপ বাম বা ক্রিম ব্যবহারের মাধ্যমে ঠোঁট আর্দ্র রাখা।
আলতোভাবে এক্সফলিয়েট মৃত কোষ দূর করে যা ধীরে ধীরে দাগ কমাতে সহায়তা করে।
নিয়াসিনামাইড, ভিটামিন সি, কজিক অ্যাসিড বা লিকোরিস নির্যাস ত্বকের কালচে দাগ দূর করতে সহায়তা করে।
ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ সুষম খাবার গ্রহণ করা, ঠোঁটের কালচেভাব দূর করে।
ধূমপান ঠোঁট কালচে করে ফেলে। তাই ধূমপান বাদ দেওয়া ভবিষ্যত আরও কাল দাগ দূর করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণে দাগ না কমলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
আরও পড়ুন