অনেকসময় শরীর দুর্বল লাগার কারণও হতে পারে অন্ত্রের জটিলতা।
Published : 05 Apr 2023, 08:32 PM
হজম আর পাকস্থলীর স্বাস্থ্য একসঙ্গে বিবেচনা করা হলেও দুটো বিষয় এক নয়।
অন্ত্রের স্বাস্থ্যের ওপর হজমক্রিয়া, মন মেজাজ, শক্তি থেকে শুরু করে ত্বক ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর প্রভাব রাখে।
অন্ত্রের ভারসাম্যহীনতা থাকার পরও কি উন্নত হজমক্রিয়া সম্ভব?
যুক্তরাষ্ট্রের ‘থর্ন হেল্থটেক’য়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অন্ত্রের ‘মাইক্রোবায়োম’ গবেষক ড. নাথান প্রাইস বলেন, “অন্ত্র সুস্থ না থাকলে সঠিক হজমক্রিয়া সম্ভব না। পরিচিত লক্ষণ যেমন- পেট ফোলা, বমি বমিভাব, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য বা গ্যাস ছাড়াও হজমজনিত নানান সমস্যা দেখা দেয়।”
ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন, “হজম প্রক্রিয়াতে খাবার থেকে পুষ্টি উপাদান সৃষ্টি করে যা দেহকে শক্তি যোগায়, বৃদ্ধি সাধন করে এবং কোষ পুনর্গঠনে সহায়তা করে। এগুলো সবই দেহ সঠিকভাবে কাজ করতে ও সুস্থ থাকতে প্রয়োজন।”
অন্ত্রের ভারসাম্যহীনতার ফলে পেটে সমস্যা দেখা দিতেও পারে আবার নাও হতে পারে।
ড. প্রাইসের মতে, “অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম হজমে নানাভাবে প্রভাব রাখে যা অনুভব করা না গেলেও পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যায়। উদাহরণ স্বরূপ- অনেক ব্যাক্টেরিয়া খাবারের যৌগকে ভেঙে উপজাত তৈরি করে যা হৃদপিণ্ডের জন্য ক্ষতিকর। এটা স্বাস্থ্য উন্নয়নকারী পুষ্টিকে রূপান্তরের মাধ্যমে দেহে শোষণে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।”
এছাড়াও কীভাবে খাবারের পুষ্টি উপাদানগুলো ভেঙে ফেলা হয় তা নির্ভর করে মাইক্রোবায়োমের ওপর।
উদাহরণ দিতে গিয়ে ড. প্রাইস বলেন, “যদি মাইক্রোবায়োম অন্যান্য শর্করার তুলনায় জটিল কার্বোহাইড্রেটকে পরিপাক করতে পারে তাহলে তা স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে। ফলে রক্তে শর্করার বৃদ্ধির মাত্রা অনুভব করা যায়।”
“আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, আমরা খাবার যেভাবে হজম করি এবং এটা যেভাবে রক্তে শর্করা বাড়ায় তা নির্ভর করে ব্যক্তিগত মাইক্রোবায়োমের ওপরে।”
হজম একটা জটিল প্রক্রিয়া। খাবার খাওয়ার পরে কেমন অনুভূত হয় এবং কতটা সহজে তা দেহ থেকে বর্জ্য হিসেবে বের হয়ে যাওয়া পর্যন্ত এর বিস্তার।
ড. প্রাইসের মতে, “অন্ত্র সুস্থ না থাকলে তা বরাবর হজমক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে।”
অন্ত্রের স্বাস্থ্যের দূরবস্থা বোঝার উপায়
হজমের সমস্যাই কেবল অন্ত্রের দুর্বলতা নির্দেশ করে না। অনেকসময় শরীর দুর্বল লাগার কারণও হতে পারে অন্ত্রের জটিলতা।
ডা. প্রাইস স্মরণ করিয়ে দেন যে, মন ভালো রাখার হরমোন সেরোটিন অন্ত্র থেকেই তৈরি হয়। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন বা মানসিক অস্বস্তি দেখা দিলে তা অন্ত্রের অসুস্থতার কারণে হতে পারে।
বলা যায় মন মেজাজ ভালো রাখতে অন্ত্রের সুস্থতা জরুরি।
“সেরোটোনিন হাড়ের সুস্বাস্থ্য, ক্ষত নিরাময়, রক্ত জমাট বাঁধা এবং যৌন ইচ্ছাসহ নানান জৈবিক প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত”, বলেন ডা. প্রাইস।
অন্ত্রের ভারসাম্যহীনতা দুর্বলভাব, রাতে ঘুমে সমস্যা-সহ নানান জটিলতা সৃষ্টি করে। যার প্রভাব পরে শরীর ও মনের ওপরে।
অন্ত্র সুস্থ রাখার উপায়
কেবল হজমের সমস্যা নয় বরং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও অন্ত্রের সুস্থতা জরুরি।
অন্ত্র ভালো রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান, উচ্চ আঁশ সমৃদ্ধ খাবার এবং প্রোবায়োটিকযুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন, ডা. প্রাইস।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, “গবেষণায় দেখা গেছে, প্রোবায়োটিকযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে মাইক্রোবায়োমের উন্নত পরিবর্তনের মাধ্যমে অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো হয়।”
তার মানে এই নয় যে, সম্পূরক অন্যান্য খাবার বাদ দিতে হবে। প্রিবায়োটিক ও প্রোবায়োটিক খাবারগুলোর মাঝে সমন্বয়সাধন করতে হবে যা দীর্ঘমেয়াদের জন্য উপকারী।
কিছু গাঁজানো খাবার প্রিবায়োটিক ও প্রোবায়োটিক উপাদান সমৃদ্ধ যেমন- ‘কিমচি’, যা একের ভেতর দুই হিসেবে কাজ করে।
আরও পড়ুন