একই খাবার কারও হজমের সমস্যা করতে পারে আবার কারও ক্ষেত্রে নয়।
Published : 03 Jul 2023, 08:56 PM
অনেকেরই অ্যাসিডিটি, গ্যাস হওয়া, পেট খারাপ করা, ফোলাভাব, অ্যাসিড রিফ্লাক্স-সহ হজমের নানান সমস্যা দেখা দেয়।
কিছু খাবার ‘গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল ট্র্যাক’ বা পরিপাক-তন্ত্রে এই সকল উপসর্গের ওপর প্রভাব রেখে হজমের জটিলতা বাড়িয়ে তোলে।
তবে এই প্রতিক্রিয়া খুবই স্বতন্ত্র। কারণ একই খাবার কারও হজমের সমস্যা করতে পারে আবার কারও ক্ষেত্রে নয়।
নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক মার্কিন পুষ্টিবিদ টোবি অ্যামিডোর এক্ষেত্রে পরামর্শ দেন, “তাই নিজের শরীরের কথা শুনতে হবে। কারও কারও মটর ও বাঁধাকপিতে সমস্যা হয়, কারও আবার হয় না।”
অন্যান্য খাবার যেমন- সিট্রাস বা টক খাবার, পুদিনা ইত্যাদিতেও অনেকের সমস্যা দেখা দেয়। সেক্ষত্রে তা বাদ দেওয়াই ভালো।
ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমন কয়েকটি খাবার সম্পর্কে জানান ‘টোবি অ্যামিডর নিউট্রিশন’য়ের প্রতিষ্ঠাতা পুরষ্কার প্রাপ্ত এই পুষ্টিবিদ, যা অনেকক্ষেত্রেই হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে থাকে।
অনেকক্ষেত্রে এসব খাবার পুষ্টিকর। তাই হজমে সমস্যা দেখা না দিলে বাদ দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’য়ের বিবেচনায় রন্ধনবিষয়ক সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের এই লেখক।
ভাজা খাবার
ভাজা খাবার উচ্চ চর্বি সমৃদ্ধ এবং পেটে ব্যথা ও ডায়রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া ভাজা খাবার অ্যাসিডিটি বাড়ায় বলে জানা যায় ২০২১ সালের ‘প্রিভেন্টিভ নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্স’য়ে প্রকাশিত এক গবেষণা থেকে।
বিকল্প: এর বিকল্প হিসেবে কম তেল বা অন্য কম চর্বি বহুল রান্না পদ্ধতি যেমন- রোস্টিং, বেইকিং, সতে ও স্টির ফ্রাই খাওয়া যেতে পারে।
সুগার অ্যালকোহল
ক্যান্ডি, গাম ও অন্যান্য চিনি মুক্ত খাবার তৈরি করা হয় সুগার অ্যালকোহল দিয়ে, যা গ্যাস ও নানান রকম পেটের সমস্যা সৃষ্টি করে। এমন উপাদানগুলোর নামের শেষে সাধারণত ‘ওল’ থাকে। যেমন- সরবিটল, ম্যানিটল, যাইলাটল, এরিথ্রিটল ও মল্টিটল।
বিকল্প: চিনির অ্যালকোহল হজমে সমস্যা করলে যেসব ক্যান্ডি, গাম ও অন্যান্য খাবারে তা যোগ করা হয়নি এমন খাবার বাছাই করতে হবে।
‘২০২০-২০২৫ ডায়েটারি গাইডলাইন্স ফর আমেরিকান্স’ অনুযায়ী, বাড়তি চিনিযুক্ত খাবার মোট ক্যালরির ১০ শতাংশের বেশি যেন না হয়।
সিট্রাস ফল
উচ্চ অ্যাসিডিক ফল যেমন- কমলা, আঙ্গুর, লেবু ও লাইম অনেকের বুক জ্বালা সৃষ্টি করে। সিট্রাস খাবার অ্যাসিডিটির মাত্রা বাড়িয়ে বুক জ্বালাপোড়া অনুভূতি দেয়। এই অ্যাসিড পেট খালি করে ধীরে যা আবার খাদ্য নালীতে প্রবাহিত হয়ে অ্যাসিডিটির সমস্যা সৃষ্টি করে।
বিকল্প: সিট্রাস খাবার অনেক পুষ্টি যোগায়। তবে এসব ফল ও অ্যাসিডিক খাবার অম্বল সৃষ্টি করে। সেক্ষেত্রে সিট্রাস নয় এমন ফল নাস্তা হিসেবে খাওয়া যায়।
পুদিনা
পুদিনা কিছু লোকের অম্বল ও বদহজমকে প্রভাবিত করে। এটা খাদ্যনালীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যে কারণে অ্যাসিড খাদ্যনালীতে ফিরে অম্বল ও বদহজম সৃষ্টি করে।
বিকল্প: পুদিনায় সমস্যা হলে, এর বদলে অন্য ভেষজ চা পান করা যেতে পারে।
মটর
মটরে আছে ‘এলিগোসাকারাইডস’ যা এক প্রকার ‘ফার্মেন্টেবল’ বা গাঁজানোতে সাহায্যকারী অ-হজমযোগ্য আঁশ। এটা পেটে বা অন্ত্রের উপরিভাগে হজম না হয়ে মলাশয়ে গিয়ে ভালো ব্যাক্টেরিয়ার সাথে গাঁজানো হতে থাকে। এই প্রক্রিয়া চলার সময় গ্যাস তৈরি হয়।
অনেকের ক্ষেত্রে এই গ্যাসের সমস্যা চরম আকার ধারণ করে। তাই মটর ভালো হলেও অনেকের সহ্য হয় না। সেক্ষেত্রে বাদ দেওয়া উচিত।
বিকল্প: শুকনা মটর চার ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে ছেঁকে রান্না করতে হবে এতে গ্যাস হওয়ার পরিমাণ কমে। আর গবেষণায় দেখা গেছে, আট সপ্তাহ নিয়মিত আধা কাপ মটর খাওয়া পেটের সমস্যা কমায়।
ক্রুসিফেরাস সবজি
এরকম সবজির মধ্যে আছে- বাঁধাকপি, ব্রকলি, কপি ও কপি। এগুলোতে মটরের মতোই শর্করা থাকে যা গ্যাস, পেটে অস্বস্তি ও ফোলাভাব সৃষ্টি করে।
আর উচ্চ আঁশ সমৃদ্ধ হওয়াতে অনেকক্ষেত্রে হজমে জটিলতা সৃষ্টি করে।
বিকল্প: এসব সবজিতে অস্বস্তি দেখা দিলে কাঁচা খাওয়ার বদলে রান্না করে খেতে হবে। এতে পাকস্থলী সহজে হজম করতে পারবে এবং গ্যাসের সমস্যা কম হবে।
আরও পড়ুন