“এক মাসের কন্টেট, সময়, টাকা সবই নষ্ট হয়েছে,” বলেন ভ্লগার শাহাদাত।
Published : 30 Jul 2024, 05:01 PM
ভ্রমণ বিষয়ক বিভিন্ন ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে নিজের পেইজ ও চ্যানেলে পোস্ট করেন শাহাদাত হোসেন, যদিও ইন্টারনেটের ধীরগতি আর সোশাল মিডিয়া বন্ধে থমকে আছে তার সেই কার্যক্রম।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট বন্ধ এবং পরে চালু হলেও ধীরগতির কারণে বিপাকে পড়েছেন তিনি। ভিডিও কনটেন্ট থেকে আয়ও থমকে গেছে বলে জানান এ ট্রাভেল ভ্লগার।
ফেইসবুকে তার ‘ব্যাকপ্যাকার শাহাদাত’ পেইজটির ফলোয়ার ১ লাখ ১৫ হাজার। ইউটিউব চ্যানেলে ফলোয়ার রয়েছে ৫ হাজার।
২০১৬ সাল থেকে ট্যুরিস্ট গাইড হিসেবে কাজ করলেও ২০১৯ সালে শুরু করেন ভ্লগিং। বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির অনেক পাহাড়ে গিয়ে কনটেন্ট তৈরির পাশাপাশি ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, ভূটান, শ্রীলংকা, ভিয়েতনাম ও মালয়শিয়াও ঘুরেছেন তিনি। বিভিন্ন ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে তিনি নিয়মিত পোস্ট করেন নিজের চ্যানেলে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শাহাদাত বলেন, এই কয়েক দিনে কোনো কনটেন্ট শেয়ার করতে পারেননি। ফলে তার আয়ও হয়নি।
কেবল নতুন কনটেন্ট নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুরোনো কনটেন্ট শেয়ারের মাধ্যমেও আয় হয় ভ্লগারদের। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় আয় নেই সেখান থেকেও।
“ভিউ দিয়ে মাসে ১০০ ডলারের মত আয় হত। কিছুদিন আগেই কয়েকটি ভিডিওতে মিয়িলন ভিউ হয়। ঠিক সেই সময়ে ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ হয়। আর কোনো কন্টেট শেয়ার করতে পারিনি।
“স্টিমের মাধ্যমে ডলার আসার কথা, তাও বন্ধ হয়ে গেছে। আবার পুরনো কন্টেন্ট থেকেও আয় হয়নি। এই কয়েকদিনে ১৫০ ডলার লোকসান হয়েছে।”
শাহাদাতের ভাষ্য, ১০ মিনিটের ভিডিওতে এক মিলিয়ন ভিউ থাকলে প্রায় ১০০ ডলারের মত আয় হয়। আর দুই বা তিন মিনিটের ভিডিওর জন্য পাওয়া যায় ৩০/৩৫ ডলার। ভিউ কমলে সেই আয় কমে আসতে পারে দুই-তিন ডলারে।
“ইন্টারনেট পুরোদমে চালু ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে পারলে হয়ত এক মাস পর থেকে কন্টেটের এনগেইজমেন্ট বাড়তে পারে। এক মাসের কন্টেট, সময় ও টাকা সবই নষ্ট হয়েছে।”
গত দুই বছরে পর্বতারোহীদের নিয়ে নেপালে গেছেন শাহাদাত। এভারেস্ট ও অন্নপূর্ণা বেজক্যাম্পসহ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করেছেন। কিছুদিন আগে মালয়েশিয়া যান। দেশে ফেরেন কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে জারি করা কারফিউয়ের মধ্যে।
অনলাইন ব্যাংকিং, সিম রোমিং সুবিধা না পাওয়ার কথা জানিয়ে শাহাদাত বলেন, “অনলাইনের ওপর নির্ভর করলে বাড়িই ফিরতে পারতাম না।”
কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে দেশজুড়ে সংঘাত-সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে গত ১৭ জুলাই রাতে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এরপর পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ হয়ে যায়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, সেদিন মহাখালীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনে আগুন দেওয়া হলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সড়কের ওপর থাকা ইন্টারনেট সেবাদাতা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তার। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কয়েকটি ডেটা সেন্টারও। সে কারণেই সারাদেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যায় বলে টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের ভাষ্য।
মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মোবাইলে আর্থিক লেনদেন, বিদ্যুৎ-গ্যাসের প্রিপেইড কার্ড রিচার্জ নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন গ্রাহকরা। কোথাও কোথাও ব্যাংকের এটিএম বুথও বন্ধ হয়ে যায়।
এছাড়া ইন্টারনেট না থাকায় স্থবির হয়ে পড়ে ই-কমার্স, পোশাক খাতসহ বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য, বন্ধ থাকে বন্দরের কার্যক্রম। ইন্টারনেটভিত্তিক সব ধরনের সংবাদ সেবাও অচল হয়ে পড়ে।
২৩ জুলাই রাতে ফেরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট। আর দশ দিন পর রোববার বিকালে মোবাইল ইন্টারনেট খুলে দিয়েছে সরকার। তবে আন্দোলনের মধ্যে বন্ধ রাখা ফেইসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও টিকটক এখনও চালু করা হয়নি। ফলে বেকায়দায় পড়েছেন ভ্লগাররা। ইন্টারনেটে এখনও গতি না ফেরায় থমকে আছে তাদের ইউটিউব চ্যানেলের কার্যক্রম।
ফেসবুক পেইজ না থাকলেও ইউটিউবে ‘শিহাব গহীন’ নামের একটি চ্যানেল আছে ট্রাভেল ভ্লগার ও ফ্রিল্যান্সার শিহাব উদ্দিন রিয়াদের। তার চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার ৯৪ হাজার। তার অনেক ভ্লগিং কনটেন্টের ভিউ হয়েছে প্রায় আড়াই মিলিয়ন। বছর পাঁচেক আগে এ চ্যানেল খোলেন শিহাব। ভ্লগিংয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ফার্মের সঙ্গে কন্টেন্ট তৈরির কাজও করেন।
ইন্টারনেট বন্ধ, ধীরগতি আর ফেইসবুক বন্ধের কারণে আয়ে প্রভাব পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সামনে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
ইউটিউব চ্যানেল, ফেইসবুক পেইজ ও ইনস্টাগ্রামে ‘রিচ’ বাড়াতে নিয়মিত কন্টেন্ট পোস্ট করার কিছু নিয়ম রয়েছে, যা অনুসরণ করতে না পারায় সমস্যায় পড়ছেন কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা।
‘সার্ভিস ইঞ্জিন লিমিটেডের’ ডিজিটাল অ্যাডভারটাইজিং অপারেশন বিভাগের টিম লিডার মোহাম্মদ মেহেদী মাসুদ বলেন, “একজন সাকসেসফুল ট্রাফিকার কন্টেন্ট দেখতে বা ব্লগ পড়তে না পারলে পেইজের ব্র্যান্ড এনডোর্স হবে না। অনেক দিন ধরে পেইজের ট্রাফিকার ও ভিউয়ার না থাকায় পেইজের ‘ড্রাইভেন সেলস’ও শূন্যে নেমে আসবে।
“যখন ভিজিটর পেইজে ঘুরে তথ্য বা সেবা নিয়ে সবগুলো ধাপ পূর্ণ করে তখনই সেটি সাকসেসফুল ট্রাফিকার হয়। এখনকার পরিস্থিতিতে যদি কোনো টাকা পেমেন্ট, বুস্ট বা এসইও করা হয় তবে পুরো টাকাই লোকসান হবে।”
আবার রিচের অভাবে পেইজের ক্যাম্পেইন বা অফারের বিনিয়োগও নষ্ট হবে এবং ‘অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং’ না থাকায় ক্ষতির পরিমাণ একই থাকার কথা জানান মাসুদ।
তার ভাষ্য, পেইজের বিজ্ঞাপন থেকেও ক্ষতির পরিমাণ তেমন কমবে না। অন্য প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন চললেও তার টাকা পাওয়া যাবে না। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রচার বিজ্ঞাপন দেওয়া হলে পেইজ মালিককে সেই অর্থ ঠিকই পরিশোধ করতে হবে।
করণীয় কী
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম চালুর পর ‘রিচ’ ফিরিয়ে আনতে সমসাময়িক বা ভালো মানের কনটেন্ট পোস্ট করার কথা জানান ‘ডেভস ক্যারাভানের’ কো ফাউন্ডার ও এসইও স্ট্রাটেজি মোহাম্মদ ওমর ফারুক সীমান্ত।
তিনি বলেন, “পেইজের এসইও করলেও কিছুটা সুবিধা মিলবে। এসইও করে গুগল রাঙ্কিংয়ে কিছুটা সামনের দিকে পেইজটি নিয়ে আসা সম্ভব। এছাড়া পেইজ ফিডব্যাক বা ফোর-স্টার রিভিউ দেওয়া যেতে পারে।
“বর্তমানে ইন্টারনেট চালু হলেও তা চলছে খুব ধীর গতিতে। আবার সোশ্যাল মিডিয়াও বন্ধ, তাই পেইজে ইম্প্রেশন হবে না। ফলে রিচ হবে না, আর রিচ না হলে এনগেইজমেন্টও হবে না।”
আবার দেশিয় গ্রাহক বা দর্শকের জন্যেই যারা কনটেন্ট তৈরি করেন, তাদের ক্ষতির পরিমাণ বেশি জানিয়ে ওমর ফারুক বলেন, “আন্তর্জাতিক কন্টেন্টগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঠিকই দেখা হয়েছে এবং কিছু ভিউ পাওয়া গেছে।
“অ্যালগরিদম মেনে সপ্তাহে দুই-তিনটি কন্টেন্ট পোস্ট করলে এক-দুই মাসের মধ্যে অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে। এসইও ঠিক রাখতে ইউজারদের স্থান, সার্চের ধরন, প্রয়োজন বুঝে কন্টেন্ট তৈরি ও ডেসক্রিপশনে তথ্য দিতে হবে। এ ছাড়া টাইটেলের ধরন, কন্টেন্টের মধ্যে বেশি সার্চ করা শব্দ ব্যবহারের অনুপাত অনুযায়ী এসইও ভালো কাজ করে।”
এসইওর মাধ্যমে র্যাংক বুস্ট করতে কোন সময়ে বেশি ভিউ হচ্ছে, কন্টেন্টের দৈর্ঘ্য, এবি টেস্টটিং, বুস্ট মিনিমাইজ, পেইড মার্কেটিং ইত্যাদি বিষয়ও খেয়াল রাখার পরামর্শ তার।
আরও পড়ুন-
'ফেইসবুক না খুললে উদ্যোক্তাদের জন্য বিকল্প পরিকল্পনার চিন্তা'