রংধনু হ্রদ

বাবা বুঝেছিল কষ্ট, তাই সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিল আমাদেরও অনেক বড় বড় পাহাড় আছে। ইনশাআল্লাহ তোমাদের একদিন দেখাবো।

মুবতাছিম ফুয়াদ তানজিলতৃতীয় শ্রেণি, সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়
Published : 6 August 2022, 06:23 AM
Updated : 6 August 2022, 06:55 AM

সিলেটের পাহাড় আর ঝর্না আমাদের যেমন ভালো লেগেছিল তেমনি কষ্টও লেগেছিল। কারণ পাহাড়গুলো আমাদের নয়, ভারতের।

বাবা বুঝেছিল কষ্ট, তাই সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিল আমাদেরও অনেক বড় বড় পাহাড় আছে। ইনশাআল্লাহ তোমাদের একদিন দেখাবো।

তারপর থেকেই আমরা সেই দিনের অপেক্ষায় ছিলাম। ঈদের ছুটিতে স্কুল বন্ধ, ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ। সেই সুযোগে আমি আর রাইসা বাবা-মার সঙ্গে গেলাম রাঙ্গামাটি, পাহাড় দেখতে।

ঈদের পরের দিন রাতে শুরু হলো যাত্রা। ভোরবেলা শহরের দোয়েল চত্বরে গিয়ে পৌঁছলাম আমরা। পাশে একটি হোটেলে গিয়ে উঠলাম। ফ্রেস হয়ে নাশতা করলাম। আগে থেকে ঠিক করা নৌকার মাঝি এসে আমাদের খোঁজ করলো, আমরা তার সঙ্গে গিয়ে নৌকায় চড়লাম।

নৌকা চলল জলরাশির উপর দিয়ে। চলতেই বাতাসে শীতল হলো দেহ, ভেসে থাকা পাহাড় দেখে জুড়িয়ে গেলো মন। বাবা জানালেন এটা কাপ্তাই হ্রদ, জলবিদ্যুৎ তৈরি করতে গিয়ে এই হ্রদের সৃষ্টি হয়েছে। হ্রদ আর হ্রদের পাহাড় দেখে সত্যিই আমাদের বাসনা পূর্ণ হলো। পুরো হ্রদ জুড়ে রয়েছে অগণিত পাহাড়। পাহাড় জুড়ে আছে সবুজ অরণ্য, অরণ্যে পাখিদের কলকাকলি আমাদের অনেক ভাল লাগলো।

মাকে দোলনায় তুলে জোরে ধাক্কা দিতেই ভয় পেয়ে মা চিৎকার করে উঠলো, তখন হাসির রোল পড়ে গেল।

খট খট খট খট শব্দ করে ঢেউয়ের তালে তাল তুলে নৌকা গেল ঝুলন্ত ব্রিজ। রঙিন দড়ি টানানো সরু ব্রিজটি দেখতে সত্যিই সুন্দর। ব্রিজের কাঁপাকাঁপিতে আমরা মোটেও ভয় পেলাম না। রাইসার সঙ্গে উঠালাম ছবি। ব্রিজ থেকে সিঁড়ি বেয়ে উঠলাম পাহাড়ে। লালমাটির উঁচু পাহাড়। উঠতেই ক্লান্ত হয়ে গেলাম। উপরে উঠে রং করা লোহার ছাতার তলে বসে জিরিয়ে নিলাম।

আইসক্রিম খেয়ে মাথা ঠান্ডা করলাম সবাই। তারপর বুড়ো বটতলায় দোলনায় দোল খেয়ে কতই না মজা করলাম আমি আর রাইসা। মাকে দোলনায় তুলে জোরে ধাক্কা দিতেই ভয় পেয়ে মা চিৎকার করে উঠলো, তখন হাসির রোল পড়ে গেল। হাসাহাসি শেষে আমরা পুনরায় চড়লাম নৌকায়, নৌকা নিয়ে গেল আদিবাসী মার্কেট।

বইতে পড়েছি আদিবাসীর কথা, আজ তাদের দেখলাম। সেখানে রাইসার জন্য ছোট ছাতা, আমার জন্য দুরবিন ও মায়ের জন্য কাঠের তৈরি চুড়ি কেনা হলো। কেনাকাটা করায় দোকানদার নারী অনেক খুশি হলেন। অদূরে আমরা বৌদ্ধ মন্দিরে গেলাম। দেখলাম গৌতম বুদ্ধের মূর্তি ও ভিক্ষুদের প্রার্থনা। এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করলাম অনেকক্ষণ, তারপর ডাব খেয়ে শক্তি বাড়ালাম।

নৌকাযোগে আবার গেলাম অন্য পাহাড়ে, সেখানে পাহাড়ি রেস্তোরাঁ চাং পাং রেস্টুরেন্টে বাবা আমাদের দুপুরের খাবারের অর্ডার নিশ্চিত করলেন। ঝর্না দেখে এসে আমরা খাবো।

সবুজ পাহাড়ঘেরা জলপথ ধরে চলছিল নৌকা। দেখতে দেখতে চলা আর চলতে চলতে পৌঁছলাম আরও গহীনে।

আমরা যাত্রা শুরু করলাম ঝর্নার উদ্দেশ্যে। দূরের পথ, নৌকা চলল জোরেসোরে, হ্রদের তরতাজা জল ঢেউ তুলে আছড়ে পড়ল পাহাড়ের গায়। চারদিকে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য পাহাড়। সবুজ গাছপালা আর লতাপাতায় ছাওয়া অনেক সুন্দর পাহাড়। বাবাকে ধন্যবাদ দিতে যাবো এমন সময় চোখে পড়ল আরও উঁচু পাহাড়, ঘাড় কাত করে দেখতে হয়। নাম তার ‘ঝুম পাহাড়’।

সমস্ত পাহাড় বন দিয়ে সাজানো, বনে বানরেরা খেলা করছে আপন মনে। রাইসা বানর দেখে কতই না খুশি হলো। আমিও খুব খুশি! আমাদেরও এতো বড় পাহাড় আছে তা ভাবতেই ভালো লাগলো। সবুজ পাহাড়ঘেরা জলপথ ধরে চলছিল নৌকা। দেখতে দেখতে চলা আর চলতে চলতে পৌঁছলাম আরও গহীনে। সেখানেই শুভলং ঝর্না। চূড়া থেকে ঝড়ছে ঝর্নাধরা, তার তলে উল্লাসে মেতে আছে ঘুরতে আসা শত মানুষ। আমার খুব ইচ্ছা করলো ঝর্নায় ভিজতে, কিন্তু পিছলে পাথুরে পথ পাড়ি দেওয়া কঠিন। তাই তার তলে যাওয়া হলো না। আর ভেজাও হলো না।

বিকেলে যখন বের হবো তখনই পূর্ব দিগন্তে বর্ণিল সাজে হেসে উঠলো রঞ্জিত রংধনু। রংধনুর অনেক গল্প শুনেছি, ছড়া পড়েছি, তবে দেখা হলো এই প্রথম।

ততক্ষণে আকাশে মেঘের নাচানাচি শুরু হয়েছিল, বোঝা গেল কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে। তাই নৌকার গতি বাড়িয়ে দিল মাঝি। ঝর্না দেখা শেষ করে আমরা পুনরায় পাহাড় দেখতে দেখতে আসলাম চাং পাং রেস্টুরেন্টে। সেখানে বাম্বু চিকেন দিয়ে সবাই পেট পুরো করে খেলাম। খাবার শেষে এবার গেলাম পলওয়েল পার্ক। সুন্দর সুন্দর প্রতীমা আর ভাস্কর্যে সাজানো মুগ্ধকর পার্ক। আমরা ছবি উঠালাম আর অনেক মজা করলাম রাইডারে চড়ে। অসংখ্য লোকের ভিড় ছিল সেদিন।

বিকেলে যখন বের হবো তখনই পূর্ব দিগন্তে বর্ণিল সাজে হেসে উঠলো রঞ্জিত রংধনু। রংধনুর অনেক গল্প শুনেছি, ছড়া পড়েছি, তবে দেখা হলো এই প্রথম। তাই রাইসা আর আমার আনন্দ সীমা ছাড়ালো। পার্কের সবাই জলে ভেজা পাহাড়ে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি ভেজা আকাশে দেখল বাহারি রংধনুর রূপ। রংধনু যেন রঙিন করলো আমাদের ভ্রমণ।

দেখা শেষে নৌকায় চড়তেই শুরু হলো মুষলধারে বৃষ্টি। বাবার কাঁধে রাইসা গেলো ঘুমিয়ে। আমি দেখলাম বৃষ্টি ভেজা কাপ্তাই হ্রদ, বঞ্চিত হলো রাইসা। বাসায় এসে রাইসাকে জিজ্ঞেস করলাম রাঙামাটিতে আমরা কী দেখেছি? মিষ্টি হেসে রাইসা জবাব দিলো, রংধনু হ্রদ।

কিডজ পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!