কোরিয়ার লোককথা: বোন চাঁদ ও ভাই সূর্য

গল্পটি দিয়ে কোরিয়ার সরকার সিরিজ ডাকটিকিটও ছাপিয়েছে।

রবিউল কমলরবিউল কমল
Published : 3 Jan 2024, 11:17 AM
Updated : 3 Jan 2024, 11:17 AM

শতবর্ষ ধরে দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণের মুখে মুখে টিকে থাকা একটি লোকগল্প এটি। এ গল্পটি কোরিয়ার প্রতিদিনের জীবনযাত্রা, লোকজ রীতিনীতি, আনন্দ-বেদনা, বুদ্ধি ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। গল্পটি দিয়ে কোরিয়ার সরকার সিরিজ ডাকটিকিটও ছাপিয়েছে। গল্পের পুনর্কথক সিউল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক কিম মুং হোন মনে করেন, লোকগল্পের ‘বিশেষ গুরুত্ব’ রয়েছে। অর্থবহ এ গল্প শিশুকিশোরদের শুধু আনন্দই দেয় না, নিজের সংস্কৃতি চিনতে শেখায়।

ছোট্ট একটি পাহাড়ি গ্রাম। সেই গ্রামে বাবার সঙ্গে বাস করত দুই ভাই-বোন। একদিন বাবা গেল পাহাড়ের টিলায়। তারপর ঘটল এক ভয়ঙ্কর ঘটনা।

হঠাৎ বনের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো একটি বাঘ। তা-ও আবার বাবার সামনে। বাবা খুব ভয় পেল। চিৎকার করে বলল, ‘বাঘ, বাঘ! আমাকে বাঁচাও।’ কিন্তু আশপাশে কেউ ছিল না। তাই কেউ এগিয়ে এলো না।

বাবা বাঘকে বলল, ‘আমার ছেলে-মেয়ে বাড়িতে অপেক্ষা করছে। আমাকে যেতে দাও।’ বাঘের জবাব, ‘তুমি যদি আমাকে একটি পিঠা দাও, তাহলে চলে যাব।’

বাবা বাঘকে একটি পিঠা দিল। তবুও বাঘ তার কথা রাখল না। বাবার কাছ থেকে সব পিঠা কেড়ে নিয়ে খেয়ে ফেলল। পরে বাবাকে আটকে রাখল বনের মধ্যে।

তারপর বাবার পোশাক পরে বাঘ সেই বাড়িতে চলে এলো, যেখানে দুই ভাই-বোন অপেক্ষা করছিল। বাঘ দরজায় ঠক ঠক টোকা দিয়ে বলল, ‘আমি এসেছি। তোমাদের জন্য খাবার এনেছি। দরজা খুলে দাও।’

বোনতো খুব খুশি। ভাবছে বাবা খাবার নিয়ে ফিরেছে। তাই লাফাতে লাফাতে দরজা খুলতে এলো। কিন্তু, ভাই অনেক চালাক ছিল। সে বলল, ‘দাঁড়াও দরজা খুলবে না। বাবার গলা অদ্ভুত লাগছে।’

তখন বাঘ বলল, ‘আমার সর্দি লেগেছে। তাই গলা এমন হয়ে গেছে।’ ভাই বলল, ‘ঠিক আছে, তাহলে তোমার হাত দেখাও? ’বাঘ দরজার ফাঁক দিয়ে তার হাত বাড়িয়ে দিল। বাঘের হাতের পশম দেখে ভাই-বোন বুঝে গেল এটা তাদের বাবা নয়। বোন বলল, ‘আমার বাবার হাতে পশম থাকার কথা নয়।’ 

ঠিক তখন আকাশ থেকে একটি শক্ত দড়ি নেমে এলো। তারা সেই দড়িতে চড়ে আকাশে উঠল।

বাঘ এবার চালাকি করে বলল, ‘আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। তাড়াতাড়ি দরজা খুলো!’ ভাই-বোন হতভম্ব হয়ে পেছনের দরজা দিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেল। তারপর ঝোপের পাশের একটি গাছে উঠল। বাঘটিও তখন তাদের পিছু পিছু ছুটে এলো।

বাঘ বলল, ‘তোমরা কীভাবে এই গাছে উঠলে?’ ভাইতো অনেক চালাক, তাই একটা বুদ্ধি বের করল। সে বাঘকে বলল, ‘আমরা রান্নাঘর থেকে হাতে তেল মেখে এসেছি।’ বাঘও তখন রান্নাঘরে গিয়ে হাতে তেল মাখাল। তারপর গাছে উঠতে শুরু করে। তেলে বাঘের হাত পিচ্ছিল হয়ে গেছে। তাই কিছুদূর উঠেই বাঘটি পিছলে ধপাস করে পড়ে গেল। তখন ভাই-বোন খুক খুক করে হাসল।

বোন মজা করে বলল, ‘হো-হো-হো, কুড়াল দিয়ে কেটে কেটে উঠতে পারবে।’ একথা শুনে বাঘ তড়িঘড়ি করে কুড়াল নিয়ে এলো। তখন ভাই ও বোন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা শুরু করে। ভাই বলল, ‘হে ঈশ্বর, তুমি যদি আমাদের বাঁচাতে চাও, দয়া করে একটি শক্ত দড়ি পাঠাও। আর যদি বাঁচাতে না চাও তাহলে পচা দড়ি নামিয়ে দাও।’

ঠিক তখন আকাশ থেকে একটি শক্ত দড়ি নেমে এলো। তারা সেই দড়িতে চড়ে আকাশে উঠল। এটা দেখে বাঘ ভাবল, ঈশ্বর হয়তো তার মানুষ খাওয়ার প্রার্থনা কখনো পূরণ করবে না। বাঘ আরও ভাবল, তাই তার উল্টো কিছু প্রার্থনা করা উচিত। বাঘ হাত জোড় করে প্রার্থনা করল, ‘হে ঈশ্বর, তুমি আমার জন্য একটি পচা দড়ি পাঠাও।’

আবার আকাশ থেকে একটি দড়ি নেমে এলো। বাঘও দড়ি ধরে উপরে উঠতে শুরু করল। কিন্তু, কিছুদিন উঠার পর দড়িটি ছিঁড়ে গেল। কারণ দড়িটি পচা ছিল। তাই বাঘ বেশি দূর উঠতে পারল না। হুট করে আরও জোরে ধপাস করে মাটিতে পড়ে গেল।

আর দুই ভাই-বোন আকাশে গিয়ে ঈশ্বরের সঙ্গে দেখা করল। ঈশ্বর তখন বলল, ‘তোমাদের মধ্যে বোন হবে চাঁদ আর ভাই হবে সূর্য।’ তখন থেকে বোন চাঁদ ও ভাই সূর্য হয়ে আকাশে বসবাস করছে।