পিকাসোর উক্তি, “জীবনের প্রথম অর্ধেক কাটে বড় হওয়া শিখতে, দ্বিতীয় অর্ধেক কাটে শিশু হওয়া শিখতে।”
Published : 29 Oct 2024, 01:18 PM
বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসো (১৮৮১-১৯৭৩)। তিনি স্পেনে জন্ম নিলেও বেশিরভাগ সময় ফ্রান্সে কাটিয়েছেন। ছবি এঁকে পেয়েছেন প্রচুর সুনাম, হয়েছেন কিংবদন্তি। পিকাসোর বাবা ছিলেন চিত্রাঙ্কনবিদ্যার অধ্যাপক। বাবার হাত ধরেই চিত্রকলায় হাতেখড়ি পিকাসোর।
রক্তে যেহেতু চিত্রাঙ্কন মিশে আছে, পিকাসোও চেয়েছিলেন তার সন্তানদের ছবি আঁকা শেখাতে। তার বড় মেয়ে মায়া রুইজ-পিকাসোর জন্য তাই বানিয়েছিলেন বিভিন্ন স্কেচবুক, যেগুলো সহজেই শিশু-কিশোরদের ছবি আঁকায় উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম।
এই বইগুলোর মাধ্যমে বড় মেয়ে মায়াকে ছবি আঁকা ও রং করা শেখাতেন পিকাসো। বইগুলো মূলত চমৎকার সব রঙিন দৃশ্যে পরিপূর্ণ। বিভিন্ন পশুপাখি, গান, অ্যাক্রোব্যাট, ঘোড়া ও ঘুঘু ইত্যাদির ছবি দিয়ে সাজানো প্রতিটি বই। ২০২২ সালে পাবলো পিকাসোর নাতনি ডায়ানা উইডমেয়ার রুইজ-পিকাসো এরকম অনেক স্কেচবুক খুঁজে পান। ছোটদের পাশাপাশি বড়রাও খুব আনন্দ পাবে এগুলো দেখলে।
বড় মেয়ে মায়ার যখন পাঁচ থেকে সাত বছর বয়স, তখন এই স্কেচবুকগুলো বানিয়েছিলেন পিকাসো। বইগুলোর কোনো কোনো পৃষ্ঠায় দেখা গেছে, বাবার আঁকা ছবি অনুকরণের চেষ্টা করছে মায়া। আবার বাবার আঁকা কোনো কোনো ছবির পাশে নাম্বার বসিয়ে দিয়ে ছবির বিচারও করেছেন মায়া।
খেঁকশিয়াল ও আঙুর ফলের গল্পটাও ছবিতে রূপ দিয়েছেন পিকাসো। খেঁকশিয়াল আঙুর ফল খেতে চেষ্টা করছে, এমন দুটি ছবি এঁকেছেন। তার একটিতে মেয়ে মায়া রং করেছে। এছাড়া আছে পেন্সিল দিয়ে একটানে ঈগল পাখি আঁকার ছবিও। পিকাসোর ওই স্কেচবুকগুলোর সঙ্গে পাখির কিছু অরিগ্যামিও খুঁজে পাওয়া গেছে। অরিগ্যামি হচ্ছে কাগজ দিয়ে বিভিন্ন আকৃতির জিনিস বানানো।
পিকাসোর নাতনি ডায়ানা হঠাৎ করেই ভাঁড়ারঘরে (যেখানে খাবার ও অন্যান্য রান্নার জিনিস মজুত করা হয়) পারিবারিক জিনিসপত্রের মাঝে এসব পেয়ে যান। তারপর তার মা মায়া রুইজ-পিকাসোকে দেখান। আর দেখেই ভীষণ স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন মায়া।
মায়ার মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রং পেন্সিল ও নোটখাতার সরবরাহ কমে যায়। একপ্রকার আকালই বলা যায়। তাই পিকাসো মেয়ের জন্য নিজেই খাতা বানাতেন এবং রং করতেন। বাবা-মেয়ে রান্নাঘরে বসে ছবি আঁকতেন। কারণ, পুরো বাড়ির মধ্যে ওখানটাতেই বেশ উষ্ণতা ছিল।
বাবা-মেয়ের ছবি আঁকা নিয়ে পিকাসোর নাতনি ডায়ানা বলেন, “বইগুলোয় কখনো দেখা যায়- মেয়ে একটা ছবি আঁকছে, আর বাবা আঁকছে আরেকটা। কখনো মেয়ের আঁকা ঠিক করে দিচ্ছেন বাবা। মাঝে মধ্যে পিকাসো কুকুর বা টুপি আঁকতেন। কেবল একটা ছবির জন্য পুরো পৃষ্ঠা ব্যবহার করতেন কখনো। আবার কোনো ছবিতে কিছু নির্দিষ্ট দৃশ্য ছিল, যেমন সার্কাসের দৃশ্য। ছবিগুলো অনেক প্রাণবন্ত ও মজাদার।”
ডায়ানা একজন শিল্প-ইতিহাসবিদ, কিউরেটর এবং অলংকার নকশাকারী। এই দুর্মূল্য স্কেচবুক আবিষ্কারকে তিনি সৌভাগ্য মনে করেন। বিগত এক দশক ধরেই পিকাসোর বিভিন্ন কাজ নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তার মাধ্যমেই প্রকাশ্যে আসে পিকাসোর অনেকগুলো চিঠি ও স্কেচ। তিনিই খুঁজে পান হারানো নোটবুক কিংবা আঁকা শেখার বই। সঙ্গে আরও কিছু অরিগ্যামিও উদ্ধার করেন।
শিশু ও ছবি আঁকা নিয়ে পিকাসোর বেশকিছু আলোচিত উক্তি আছে। যেমন- ১. প্রতিটি শিশুই শিল্পী। কিন্তু একবার বড় হয়ে গেলে কীভাবে শিল্পী থাকবেন সেটাই সমস্যা। ২. রাফায়েলের মতো আঁকতে আমার চার বছর লেগেছিল, কিন্তু একটি শিশুর মতো আঁকতে লেগেছে সারাজীবন। ৩. জীবনের প্রথম অর্ধেক কাটে বড় হওয়া শিখতে, দ্বিতীয় অর্ধেক কাটে শিশু হওয়া শিখতে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান