হেনি পেনি বাদাম কুড়োতে বনে গিয়েছিল। অমনি এক টুকরো আকাশ ভেঙে ওর মাথায় পড়েছে।
Published : 11 Nov 2023, 12:48 AM
বাদামি রঙের এক মুরগি ছিল। ওর নাম হেনি পেনি। একদিন হেনি পেনি বনে গেল বাদাম কুড়োতে। এমন সময় উপর থেকে একটা বড়সড় ওক ফল টুপ করে পড়লো হেনি পেনির মাথায়। মুখ থুবড়ে পড়তে গিয়েও পড়লো না সে।
‘কক ককক কক’! আঁতকে উঠে হেনি পেনি বললো-‘হায় কপাল! এ তো দেখি আকাশ ভেঙে পড়ছে গো!’ যাই এক্ষুনি রাজাকে গিয়ে খবর দিই গে।’ পড়িমড়ি করে উঠে হেনি পেনি রাজপ্রাসাদের দিকে ছুটতে লাগলো। যেতে যেতে দেখা হলো পাঁতিহাস ডাকি লাকির সঙ্গে। ‘প্যাক প্যাক প্যাক’! মাথা থেকে টুপিটা নামিয়ে সে বললো, ‘শুভ সকাল হেনি পেনি। তা এত হন্তদন্ত হয়ে কোথায় যাচ্ছ শুনি?’
‘উফ আর বলো না ভাই! সকাল সকাল বাদাম কুড়োতে গিয়েছিলাম বনে, এমন সময় এক টুকরো আকাশ ভেঙে আমার মাথায় পড়লো। আকাশ যে ভেঙে পড়ছে সে খবর তো রাজামশাইকে দিতে হয় বলো! তার কাছেই যাচ্ছি।’ হেনি পেনির একথা শুনে প্যাক প্যাক করে পাঁতিহাস বললো- ‘কী ভয়ানক কথা হেনি পেনি! আমি কি তোমার সঙ্গে রাজার কাছে যেতে পারি?’
‘নিশ্চয়ই’। সম্মতি জানালো হেনি পেনি। এবার তারা দুজনেই ছুটলো রাজপ্রাসাদের দিকে। হেনি পেনি আর ডাকি লাকিকে চিন্তিত মুখে আসতে দেখে রাজহংসী গুসি লুসি বললো ‘তোমরা দুজন মিলে কোথায় যাচ্ছো গো?’ ‘প্রিয় গুসি লুসি। শুভ সকাল তোমাকে। হেনি পেনি বাদাম কুড়োতে বনে গিয়েছিল। অমনি এক টুকরো আকাশ ভেঙে ওর মাথায় পড়েছে। ভাবতে পারো কী ভয়ানক কাণ্ড? আমরা এ কথা রাজাকে জানাতে যাচ্ছি।’ বললো ডাকি লাকি।
গতকাল একই জায়গায় আমিও দাঁড়িয়ে ছিলাম। আকাশটাকে দেখে খুবই দুর্বল মনে হচ্ছিলো। রাজার ব্যাপারটা জানা প্রয়োজন। তা তোমরা কি রাজপ্রাসাদে যাওয়ার পথটা চেনো?
গুসি লুসি খুক খুক করে কেশে বললো- ‘কী ভয়ানক, কী ভয়ানক’! আমিও তোমাদের সঙ্গে যেতে চাই। ‘কেন নয়? চলো চলো’। বললো ডাকি লাকি। যেতে যেতে তাদের তিনজনের সঙ্গে দেখা হলো রাজহাঁস গান্ডার লান্ডারের সঙ্গে। তিনজনকে চিন্তিত মুখে হাঁটতে দেখে রাজহাঁস বললো- ‘এমন সুন্দর দিনে তিনে মিলে কোথায় ছুটছো গো?’ কপালের ঘাম মুছতে মুছতে গুসি লুসি বললো ‘হেনি পেনি বাদাম কুড়োতে বনে গিয়েছিল। অমনি এক টুকরো আকাশ ভেঙে ওর মাথায় পড়েছে। ভাবতে পারো কী ভয়ানক কাণ্ড? আমরা এ কথা রাজাকে জানাতে যাচ্ছি।’
ভ্রু কপালে তুলে গান্ডার লোন্ডার বললো- ‘কী ভয়ানক, কী ভয়ানক’! আমিও তোমাদের সঙ্গে যেতে চাই।’ ‘কেন নয়? চলো চলো’। বললো গুসি লুসি। তারপর হেনি পেনি, ডাকি লাকি, গুসি লুসি আর গান্ডার লান্ডার একসঙ্গে রাজপ্রাসাদের দিকে ছুটতে লাগলো। পথে দেখা হলো লাল রংয়ের এক টার্কির সঙ্গে। ওর নাম টার্কি লার্কি। গলা বাড়িয়ে টার্কি লার্কি বললো- ‘এমন সুন্দর দিনে তোমরা চারজন মিলে কোথায় ছুটছো গো?’ ‘প্রিয় টার্কি লার্কি। হয়েছে কি জানো, হেনি পেনি বাদাম কুড়োতে বনে গিয়েছিল। অমনি এক টুকরো আকাশ ভেঙে ওর মাথায় পড়েছে। ভাবতে পারো কী ভয়ানক কাণ্ড? আমরা এ কথাটা রাজাকে জানাতে যাচ্ছি।’ বললো গান্ডার লান্ডার।
আঁতকে উঠে টার্কি লার্কি বললো- ‘কী ভয়ানক, কী ভয়ানক’! আমি কি তোমাদের সঙ্গে যেতে পারি রাজার কাছে?’ ‘কেন নয়? নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই’। বললো গান্ডার লান্ডার। তারা একসঙ্গে যেতে লাগলো। এবার তাদের সামনে পড়লো এক খেঁকশিয়াল। ওর নাম ফক্সি লক্সি। সবার ওপর একবার চোখ বুলিয়ে বাঁকা হাসি হেসে সে বললো- ‘শুভ সকাল আমার মিষ্টি বন্ধুরা! তা এমন সুন্দর দিনে সবাই মিলে কোথায় যাওয়া হচ্ছে শুনি?’
টার্কি লার্কি আগ বাড়িয়ে বললো- ‘হয়েছে কি জানো, হেনি পেনি বাদাম কুড়োতে বনে গিয়েছিল। অমনি এক টুকরো আকাশ ভেঙে ওর মাথায় পড়েছে। ভাবতে পারো কী ভয়ানক কাণ্ড? আমরা এ কথা রাজাকে জানাতে যাচ্ছি।’ ‘আহা, খুবই আতঙ্কের ব্যাপার!’ মুখে একথা বললেও, এ যেনো কোনো ভয়ানক ঘটনাই না, এমন ভাব নিয়ে মুখে হাসি নিয়ে গাছের সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো ফক্সি লক্সি।
‘আচ্ছা, হেনি পেনি কি ওক গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলে?’ প্রশ্ন করলো ফক্সি লক্সি। ‘হ্যাঁ হ্যাঁ ওখানেই!’ ঝটপট উত্তর দিলো হেনি পেনি। এবার একটু হেসে কী যেন এক ফন্দি আঁটলো ফক্সি লক্সি। বললো- ‘হু সেটাই ভাবছিলাম। গতকাল একই জায়গায় আমিও দাঁড়িয়ে ছিলাম। আকাশটাকে দেখে খুবই দুর্বল মনে হচ্ছিলো। রাজার ব্যাপারটা জানা প্রয়োজন। তা তোমরা কি রাজপ্রাসাদে যাওয়ার পথটা চেনো? পাঁচ বন্ধুই একে অপরের দিকে তাকিয়ে দুই দিকে মাথা নাড়লো। ওরা কেউই ঠিকঠাক প্রাসাদে যাওয়ার পথ চেনে না।
চিৎকার করে হেনি পেনি বললো- ‘হায় কপাল! আমি তো আজ ডিম পাড়তেই ভুলে গেছি! আমি বরং বাড়ি যাই।
সামনে মুরগি, পাতিহাঁস, রাজহাঁস, রাজহংসী আর টার্কিকে দেখে শিয়ালের পেটে ইঁদুর দৌড়োতে লাগলো। জিবে জল এলো। কী করে এদের পাঁচটাকেই কব্জা করা যায় তাই ভাবতে লাগলো সে। ফক্সি লক্সি বললো- ‘আচ্ছা শোনো, তোমরা বরং আমাকে অনুসরণ করো। আমি প্রাসাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’
ফক্সি লক্সি সবার সামনে, আর বাকিরা লাইন ধরে তার পেছন পেছন যাচ্ছে। যেতে যেতে ফক্সি লক্সি এসে থামলো একটা গর্তের সামনে। এটাই তার আস্তানা। ফক্সি লক্সি বললো- ‘শোনো বন্ধুরা, এটাই প্রাসাদে যাওয়ার সহজ পথ। প্রথমে আমি ভেতরে ঢুকবো। তারপর তোমরা একে এক ভেতরে আসবে আর রাজার সঙ্গে ধীরে সুস্থে কথা বলবে। কেমন?’
ফক্সি লক্সি গর্তের ভেতরে ঢুকে ভাবতে লাগলো আজ কী খাওয়া দাওয়াটাই না হবে! প্রথমে হেনি পেনি গর্তের মুখে এসে দাঁড়ালো। কী একটা কথা যেন তার মাথায় ঘুরপাক খেলো। চিৎকার করে বললো- ‘হায় কপাল! আমি তো আজ ডিম পাড়তেই ভুলে গেছি! আমি বরং বাড়ি যাই। আকাশ যে ভেঙে পড়ছে একথা বলার জন্য তোমরা চারজন তো আছই!
একথা বলে যত দ্রুত সম্ভব দৌড়ে পালালো হেনি পেনি। হেনি পেনিকে যতক্ষণ দেখা গেলো ততক্ষণ চেয়ে চেয়ে দেখলো ডাকি লাকি, গুসি লুসি, গান্ডার লান্ডার ও টার্কি লার্কি। তারপর গুসি লসি বললো- ‘ফক্সি লক্সি যেহেতু রাজপ্রাসাদের পথ চেনে তাহলে বরং আকাশ ভেঙে পড়ার কথাটা সে-ই রাজাকে জানিয়ে দিলেই ভালো হয়। আমার গিয়ে আর কাজ নেই। অনেক কাজ পড়ে আছে, ফিরে যাই বরং।’ একথা শুনে বাকিরাও বললো- ‘তাইতো ফক্সি লক্সিই বরং রাজার কাছে যাক। আমরা নিজেদের কাজে যাই।’ তারপর কি আর কেউ সেখানে থাকে? সবাই চম্পট দিলো।
এদিকে কী হয়েছে জানো? গর্তের ভেতর হেনি পেনি, ডাকি লাকি, গুসি লুসি, গান্ডার লান্ডার ও টার্কি লার্কির জন্য অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে ফক্সি লক্সি। ওরা গর্তে ঢুকছে না দেখে বাইরে বেরিয়ে এলো সে। ওমা কেউই তো নেই সেখানে! সেদিন আর ফক্সি লক্সির উদরপূর্তি হলো না। আর রাজাও জানলো না এক টুকরো আকাশ ভেঙে পড়েছিলো হেনি পেনির মাথায়।