শিশুর ঘুমের পাঁচ অভ্যাস

আমাদের দেশে একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে- ‘শিশুর মতো ঘুমানো’। এর মানে হচ্ছে গভীর ও শান্তির ঘুম দেওয়া। শিশুরা কিন্তু বাস্তবে এতো শান্তভাবে ঘুমায় না, অনেক ক্ষেত্রে গভীর ঘুমেই তারা অনেক কাণ্ড-কারখানা করে।

>>বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2019, 09:52 AM
Updated : 11 Jan 2019, 09:52 AM

কখনো কাঁদে, কখনো গোঙায়, আবার নাক দিয়ে বাঁশির মতো শব্দ করে শ্বাসও নেয়। অনেক বাবা-মায়ের কাছেই শিশুর ঘুমের এ অভ্যাসগুলো অস্বাভাবিক মনে হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে এ ব্যাপারগুলো আসলে সমস্যারই ইঙ্গিত দেয়। তবে সবসময় নয়।

আসুন জেনে নেই শিশুর এমনই পাঁচটি ঘুমের অভ্যাসের আদ্যোপান্ত-

১. ঘুমের মধ্যে শ্বাস নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া

আপনি হয়তো খেয়াল করে থাকবেন, শিশুদের শ্বাস-প্রশ্বাস রিদমিকভাবে পরিবর্তিত হয়। ঘুমের প্রথম দিকটায় তারা দ্রুত ও ঘন ঘন শ্বাস নেয়। ঘুম যতই গভীর হয় তাদের শ্বাস নেওয়ার মাত্রা কমে যায়, ধীরে ও থেমে থেমে শ্বাস নেয়। কখনো ৫-১০ সেকেন্ডের মতো শ্বাস নেওয়া বন্ধ থাকে। চিকিৎসকরা একে ‘পিরিওডিক ব্রিদিং’ বলে থাকেন। ৬ মাস বয়স পর্যন্ত সব শিশুর মাঝেই এটা দেখা যায়।

তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিশু ২০ সেকেন্ড পর্যন্ত শ্বাস নেওয়া বন্ধ করে দিতে পারে। একে বলা হয় ‘সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপ্নিয়া’। এটা হওয়ার কারণ- মস্তিষ্কের যে অংশ শ্বাস নেওয়া নিয়ন্ত্রণ করে তার অনিয়মিত কার্যক্ষমতা।

কী করা উচিত? যদি এমন হয় শিশুর শ্বাস নেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে, শিশুর নাক-ঠোঁট-জিভ-নখ-কপাল নীল হয়ে যাচ্ছে, খুব কাশছে, তাহলে হয়তো তার অক্সিজেন পেতে সমস্যা হচ্ছে। এ অবস্থায় তাকে জাগিয়ে দিন। আলতো করে ধাক্কা দিয়ে বা স্পর্শ করে জাগান। তার শ্বাস নেওয়ার ব্যাপারটি অস্বাভাবিক মনে হলে শিশু-বিশেষজ্ঞ দেখান।

২. ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা

অনেক শিশুই ঘুমের মধ্যে নাক ডাকে। অনেকে বেশ জোরেই নাক ডাকে। শিশুর যদি ঠাণ্ডা লেগে নাক বন্ধ হয়ে থাকে, তাহলে সে মুখ দিয়ে শ্বাস নেবে আর তখন নাক ডাকার শব্দ হবে। তখন এটাই স্বাভাবিক। তবে নবজাতকেরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জন্মের প্রথম কয়েক সপ্তাহ নাক ডাকে।

কী করা উচিত? যখন শিশুকে চিকিৎসকের কাছে নিয়মিত চেক-আপের জন্য নেবেন তখন নাক ডাকার বিষয়টি জানান। নাক ডাকা অস্বাভাবিক মনে হলে তো অবশ্যই জানাবেন। চিকিৎসকই তখন পরীক্ষা করে আসল সমস্যা বের করবেন।

৩. ঘুমের মধ্যে ঘেমে যাওয়া

অনেক শিশু ঘুমিয়ে গেলে ঘেমে যায়। বিশেষ করে রাতে যখন সে গভীরভাবে ঘুমায়। আমরা বড়রাও কিন্তু ঘুমের মাঝে ঘেমে যাই কখনো কখনো। ঘেমে যাওয়ার ব্যাপারটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে অস্বাভাবিকভাবে ঘামতে থাকা অবশ্যই চিন্তার বিষয়। অতিরিক্ত পরিমানে ঘামা বড় কোনো রোগের ইঙ্গিত দিতে পারে।

কী করা উচিত? প্রথমেই খেয়াল রাখুন শিশুকে যে ঘরে ঘুম পাড়াচ্ছেন সেই ঘরের তাপমাত্রার দিকে। অত্যধিক গুমট বা গরম ঘরে শিশুকে ঘুম পারাবেন না। শিশু যখন ঘুমাবে তখন তার উপর একগাদা কাপড় বা কাঁথা- বালিশ চাপাবেন না বা বড় বালিশ দিয়ে ভার দিবেন না। হালকা-পাতলা জামা কাপড় পরান। এমনভাবে কাঁথা-বালিশ দিন যাতে বাতাস চলাচল করতে পারে। শিশুকে হালকা-পাতলাভাবে শোওয়ালেও যদি সে অতিরিক্ত ঘামে তাহলে দ্রুত শিশু-বিশেষজ্ঞ দেখান।

৪. ঘুমের সময় শরীর দোলানো, মাথা ঠোকা

অনেক সময় ঘুমের মাঝেই শিশু রকিং-চেয়ারের মতো দুলতে থাকে। বালিশে বা বিছানায় মাথা ঠোকে। অনেক শিশু জেগে বা বসে থাকা অবস্থায়ও এভাবে দোলায় বা মাথা ঠোকাঠুকি করে। এ ব্যাপারটি সাধারণ শিশুর ৬-৯ মাস বয়স থেকে শুরু হয়। এটা কোনো আচরণগত সমস্যা নয়।

কী করা উচিত? জোর করে শিশুর দুলুনি থামানোর প্রয়োজন নেই। অনেক সময় সে দুলুনি আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। শিশু বেশি দুললে বা মাথা জোরে ঠুকলে তাকে জাগিয়ে দিন। তাকে দেওয়াল বা খাটের সাইড থেকে সরিয়ে নিরাপদ জায়গায় ঘুম পাড়ান। দোলনায় ঘুম পাড়ালে দোলনার স্ক্রুগুলো টাইট করে দিন যাতে কম দোলে।

৫. ঘুমের মধ্যে দাঁত কিড়মিড় করা

বেশিরভাগ শিশুই ঘুমের মধ্যে দাঁত কিড়মিড় করে। আমরাও হয়তো ছোটবেলায় করতাম। যেসব শিশুর নতুন দাঁত উঠছে তারা বেশি কিড়মিড় করে। মাঝে মাঝে শিশুরা এত জোরে কিড়মিড় শব্দ করে যে মনে হতে পারে দাঁত ভেঙ্গে যাচ্ছে। শিশুর নতুন দাঁত উঠার সময় তার মাড়ি শিরশির করে। সেই অনুভূতি থেকেই তারা বেশিরভাগ সময় দাঁত কিড়মিড় করে থাকে। মাঝে মাঝে শ্বাস নিতে না পারা, নাক বন্ধ থাকলেও তারা এমন করে।

কী করা উচিত? শিশু খুব বেশি জোরে দাঁত কিড়মিড় করলে বিষয়টি চিকিৎসক বা সরাসরি ডেন্টিস্টকে জানান। তারাই আসল কারণ খুঁজে বের করবে।

এই লেখাটির সর্বস্বত্ব টগুমগু কর্তৃক সংরক্ষিত। টগুমগু প্রতিষ্ঠানটি ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশে প্রেগন্যান্সি ও প্যারেন্টিং বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করে যাচ্ছে। টগুমগুর নিজস্ব প্যারেন্টিং ব্লগ ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের অনুমতি না নিয়ে লেখাটি অন্য কোথাও প্রকাশ অথবা বাণিজ্যিক ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষেধ।

কিডস পাতায় শিশু-কিশোররা লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!