প্রাচীন বাংলার পরিব্রাজকদের চোখে চট্টগ্রাম

হিউয়েন সাং, মার্কো পোলো ও ইবনে বতুতাসহ বিশ্বখ্যাত পরিব্রাজকদের লেখায় উঠে এসেছে চট্টগ্রাম তথা বাংলার সম্পদ ও সততার কথা।

কুমার প্রীতীশ বলকুমার প্রীতীশ বল
Published : 8 May 2023, 09:48 AM
Updated : 8 May 2023, 09:48 AM

এর আগে লিখেছিলাম চট্টগ্রামের বারবার নাম বদলের ইতিহাস নিয়ে। বত্রিশ, ছত্রিশ মতান্তরে আটচল্লিশবার নাম পরিবর্তন করা হয় ‘প্রাচ্যের রানি' হিসেবে পরিচিত এ জনপদের। এর কারণ বারবার দখলদারদের আক্রমণ। রাজায় রাজায় যুদ্ধ। যুদ্ধ আর যুদ্ধ।

কেন এতো এতো রক্তপাত, লড়াই আর হাতবদলের কাহিনি! এসব শুনতে শুনতে মনের ভেতর প্রশ্নটি এসে উঁকি মারে। আবার, সেকালে চট্টগ্রামে এসেছিলেন ইতিহাসবিখ্যাত সব পরিব্রাজক। পরিব্রাজক মানে ভ্রমণকারী। তাহলে কি নানা দিক থেকে চট্টগ্রাম মূল্যবান ছিল!

১৭৬১ সালে ১৬ ফেব্রুয়ারি হ্যারি ভেরেলস্ট, র‍্যানডল্ফ ম্যারিওট, থমাস, রামবোল্ড প্রমুখের যৌথ চিঠি থেকে এমনই মনে হয়। তারা সে চিঠিতে ফোর্ট উইলিয়ামে জানান, “চট্টগ্রাম প্রদেশের মতো মূল্যবান একটা অঞ্চল হস্তগত করতে সক্ষম হওয়াটা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।" বিদেশিদের কাছে চট্টগ্রাম একটি মূল্যবান অঞ্চল ছিল। শুধু সম্পদের দিক থেকে নয়, সৌন্দর্যের দিক থেকেও। পরিব্রাজকদের লেখা থেকে প্রাচীন চট্টগ্রামের অনেক নাম আর তথ্য আবিষ্কৃত হয়েছে। তাদের বিবরণীতে স্মৃতির শহর চট্টগ্রামের অসাধারণ এক ছবি ফুটে ওঠে। এরই কিছু বর্ণনা এখানে শোনাব।

পরিব্রাজক হিউয়েন সাং খ্রিস্টিয় সপ্তম শতকে এ জনপদে বেড়াতে এসেছিলেন। তখন চট্টগ্রামকে সমতট রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত বলে উল্লেখ করেছেন। এ অঞ্চলটি ছিল আর্দ্র নিম্নভূমি, তিনি সমতটকে কামরূপের দক্ষিণে বিস্তৃত নিম্নদেশ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। সম্ভবত উত্তরের উচ্চ এবং উঁচু-নিচু অঞ্চলের চেয়ে এ অঞ্চলের নদীবিধৌত অঞ্চল ছিল সমতল। সেই থেকে ‘সমতট’ নামটি প্রচলিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।

চন্দ্রবংশীয় রাজা ভবদেব কুমিল্লায় আনন্দ বিহার বা শালবন বিহার প্রতিষ্ঠা করেন। ওই সময়ে এ বিহার এশিয়ার জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিগণিত হয়। সে সময় একে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা দেওয়া হয়। বিখ্যাত চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাং আনন্দ বিহারে আসেন। তখন বিহারে চার হাজার ভিক্ষু ছিল। তিনি ময়নামতি অঞ্চলে ৩৫টি বিহার দেখতে পান। 

পরিব্রাজক মার্কো পোলো ত্রয়োদশ শতকে চট্টগ্রাম ভ্রমণ করেন। তিনি চট্টগ্রাম অনোরহটা বংশীয়দের দখলে বলে উল্লেখ করেন। ১৩১৩ সনে স্যার জন হার্বাট চট্টগ্রাম ভ্রমণ করেন। তিনি চট্টগ্রামকে সমৃদ্ধ ও জনবহুল নগরীরূপে দেখেছেন।

১৩৪৫-৪৬ সালের জুলাই মাসের দিকে আরব বিশ্বপর্যটক ইবনে বতুতা চট্টগ্রাম ভ্রমণে এসেছিলেন। তার মাধ্যমে চট্টগ্রাম সমুদ্র তীরবর্তী একটি সুন্দর স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। চট্টগ্রাম সম্পর্কে সবচেয়ে প্রাচীন বিবরণ পাওয়া যায় তার ভ্রমণ বিবরণীতে। তখন বাংলাদেশের যে অংশ তিনি ভ্রমণ করেন তার সুলতান ছিলেন ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ। ওই সময়ে বাংলাদেশ ও আসামের যে বিবরণ তিনি লিপিবদ্ধ করে গেছেন তাতে চট্টগ্রাম ভ্রমণের তথ্য রয়েছে। তিনি লিখেছেন, ”বাংলাদেশের যে শহরে আমরা প্রথম প্রবেশ করলাম তা হলো সোদকাওয়ান (চট্টগ্রাম)। এটি মহাসমুদ্রের তীরে অবস্থিত একটি বিরাট শহর। এরই কাছে গঙ্গা নদী, যেখানে হিন্দুরা তীর্থ করেন, যমুনা নদী একসঙ্গে মিলেছে এবং সেখান থেকে প্রবাহিত হয়ে তারা সমুদ্রে গিয়ে পড়েছে। গঙ্গা নদীর তীরে অসংখ্য জাহাজ ছিল, সেইগুলো দিয়ে সোদকাওয়ানের লোকরা লখনৌতির লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।”

“ফকিরদের প্রতি সুলতান ফখরুদ্দীনের শ্রদ্ধা এত গভীর ছিল যে তিনি শায়দা নামে এক ফকিরকে সোদকাওয়ানে তার নায়েব নিযুক্ত করেছিলেন। তারপর সুলতান ফখরুদ্দীন তার এক শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য যাত্রা করেন। কিন্তু শায়দা নিজে স্বাধীন হবার মতলব করে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসল। সে সুলতান ফখরুদ্দীনের পুত্রকে হত্যা করল; সে ছাড়া সুলতানের আর কোন পুত্র ছিল না। খবর শুনে সুলতান তার রাজধানীতে ফিরে এলেন। শায়দা এবং তার সমর্থকরা দুর্ভেদ্য ঘাঁটি সুনারকাওয়ান (সোনারগাঁও) নগরে পালিয়ে গেল। সুলতান ওই স্থান অবরোধ করবার জন্য এক সৈন্যবাহিনী পাঠালেন। সেখানকার অধিবাসীরা নিজেদের জীবনের ভয়ে শায়দাকে ধরে সুলতানের সৈন্যবাহিনীর কাছে পাঠিয়ে দিল।”

“সুলতানের কাছে এ খবর গেল। তিনি বিদ্রোহীর মাথা পাঠিয়ে দিতে আদেশ করলেন। আমি যখন সোদকাওয়ানে গিয়েছিলাম, সুলতানকে দেখিনি, তার সঙ্গে আলাপও করিনি। কারণ তিনি ভারতবর্ষের সম্রাটের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন এবং তা (ফখরুদ্দীনের সঙ্গে সাক্ষাৎকার) করলে তার ফল কী হবে, সে সম্বন্ধে আমার ভয় ছিল। আমি সোদকাওয়ান ত্যাগ করে কামরু (কামরূপ) পর্বতমালার দিকে রওনা হলাম।“

ইবনে বতুতার সমসাময়িক চীনা পরিব্রাজক ওয়াংতা ইউয়ান চট্টগ্রাম ভ্রমণ করেন। তিনি ১৩৪৯-৫০ সাল নাগাদ ‘তাও-য়ি-চি-লিয়েহ’ নামে একটি বই লিখেন। এ বইয়ে বাংলাদেশের যে বিবরণ তিনি দিয়েছেন তাতে চট্টগ্রামের উল্লেখ আছে। চীনা পরিব্রাজক ওয়াংতা ইউয়ান লিখেছেন, “এ দেশে পাঁচটি উচ্চ ও শিলাবন্ধুর পর্বতমালা এবং একটি গভীর অরণ্য আছে। লোকেরা বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে বাস করে। সারা বছর তারা চাষ করে এবং বীজ বোনে, তাই পতিত জমি নেই। ক্ষেত্রগুলো খুবই শস্যসমৃদ্ধ। বছরে তিনবার ফসল ফলে। জিনিসপত্রের দাম মোটামুটি সস্তা ও মানানসই। প্রাচীনকালে এ দেশকে বলা হতো ‘হসিন-তু-চৌফুর’ (হিন্দুস্থানের অধ্যক্ষালয়)। এ দেশের আবহাওয়া সব সময়ই গরম থাকে। লোকদের আচার ব্যবহার ও প্রথা পদ্ধতি পবিত্র ও ধর্মনিষ্ঠ। পুরুষ ও স্ত্রীলোক উভয়েই সূক্ষ্ম তুলার পাগড়ি এবং লম্বা আলখাল্লা পরে। সরকারি কর আয়ের দুই দশমাংশ। সরকার টং-কা নামে এক রকম মুদ্রা খোদাই করেন, এ মুদ্রার ওজন আট ক্যান্ডারিন (বা চীনা আউন্সের আট শতাংশ)। কেনাবেচার সময় এরা কড়ি ব্যবহার করে। একটি ক্ষুদ্র মুদ্রার (অর্থাৎ টং-কার) সঙ্গে কড়ির বিনিময় হয়। জনসাধারণের পক্ষে এ মুদ্রা অত্যন্ত সুবিধাজনক।”

“এদেশের উৎপন্ন দ্রব্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আমাদের চীনদেশের মতো তুলার বস্ত্র- যেমন পি-পু, কাও-নি-পু এবং তু-লো-কিন আর মাছরাঙার পালক। বাণিজ্যের জন্য ব্যবহৃত হয়- দক্ষিণের ও উত্তরের রেশম, রঙিন তফেতা, জায়ফল নীল ও সাদা, সাদা চীনামাটির জিনিসপত্র, সাদা সুতা বা ফিতা এবং এ ধরনের আরও জিনিস। এ অঞ্চলের লোকেরা নিজেদের গুণেই যাবতীয় শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। এর মূলে রয়েছে তাদের কৃষিকার্যের প্রতি অনুরাগ। যার ফলে তারা অবিরাম পরিশ্রম করে, চাষ করে ও শস্য রোপণ করে জঙ্গলে ঘেরা জমির উদ্ধার সাধন করেছে। স্বর্গের বিভিন্ন ঋতু এ রাজ্যের উপর পৃথিবীর সম্পদ ছড়িয়ে দিয়েছে, এখানকার লোকদের সম্পদ ও সততা বোধ হয় চিউ-চিআং (পালেমবাং)-এর লোকদের চেয়ে বেশি এবং চাও-আর (জাভার) লোকদের সমান।”

প্রাচীনকাল থেকে চীনের সঙ্গে এ জনপদের একটি বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। ১৪০০ সালে চীন সম্রাটের একজন দূত বড় বড় ৬০টি জাহাজ নিয়ে বাণিজ্য করতে চট্টগ্রাম আসেন। এর ঠিক পনের বছর পর আবার একটি চীনা রাজ-প্রতিনিধি দল চট্টগ্রাম সফর করেন। এ প্রতিনিধি দলে বিখ্যাত চীনা বিবরণ-লেখক মা হুয়ান ছিলেন। তার বিবরণে চট্টগ্রামের সৌন্দর্য ও খ্যাতি বিশ্ব পরিচিতি লাভ করে। তখন বাংলার রাজা ছিলেন জালালুদ্দীন মুহম্মদ শাহ। ১৪১৫ সালে আসা চীনা প্রতিনিধি দলের আরেক সদস্য ছিলেন ফেই শিন। তিনি ১৪৩৬ সালে ‘শিং-ছা-শ্যাং-লান’ নামে একটি ভ্রমণ কাহিনি লিখেন। এখানে তিনি চট্টগ্রাম সম্পর্কে মনোরম বর্ণনা দেন।

ফেই শিন তার ভ্রমণ কাহিনিতে লিখেছেন, “বাতাস অনুকূল থাকলে সুমাত্রা থেকে এখানে কুড়ি দিনে পৌঁছানো যায়। এ অঞ্চল চীনের পশ্চিমে অবস্থিত ভারতবর্ষ নামে দেশটির অন্তর্গত। সম্রাট য়ু-লোর রাজত্বের ত্রয়োদশ বর্ষে (১৪১৫ খ্রিস্টাব্দ) সম্রাট দু’বার আদেশ জারি করার পর প্রতিনিধি হৌ-শিয়েন এক বিরাট নৌবহর এবং অনেক লোকজন নিয়ে বাংলার রাজা, রানি এবং অমাত্যদের কাছে চীন সম্রাটের উপহার পৌঁছে দেবার জন্য রওনা হলেন।"

“এ দেশটিতে উপসাগরের কূলে একটি সামুদ্রিক বন্দর আছে, তার নাম ‘চা-টি-কিআং’ (চট্টগ্রাম)। এখানে কিছু কিছু শুল্ক আদায় করা হয়। রাজা যখন শুনলেন আমাদের জাহাজ সেখানে এসে পৌঁছেছে, তিনি পতাকা এবং অন্যান্য উপহার সমেত উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারীদের সেখানে পাঠালেন। হাজারের বেশি ঘোড়া ও মানুষ বন্দরে এসে হাজির হল। ষোলটি পর্ব অতিক্রম করে আমরা সুও-না-উল-কিআং (সোনারগাঁও) পৌঁছালাম। এ জায়গাটি দেওয়াল দিয়ে ঘেরা; এখানে পুকুর রাস্তাঘাট ও বাজার আছে, সেখানে সবরকম জিনিসের কেনাবেচা চলে। এখানে রাজার লোকেরা হাতি, ঘোড়া প্রভৃতি নিয়ে আমাদের সঙ্গে দেখা করল।”

১৫১৭ সালে পর্তুগিজ ক্যাপ্টেন জোয়া দ্য সিলভেইরা ‘লুপু সোয়ানা’ জাহাজ নিয়ে প্রথম চট্টগ্রাম বন্দরে আসেন। ১৫২৬ সালে পর্তুগিজ ক্যাপ্টেন সাজ পেরেইরা চট্টগ্রাম সফর করেন। ১৫৩৩ সালে পর্তুগিজ ক্যাপ্টেন আলফনসো দে মেল্লো চট্টগ্রাম আসেন। তিনি পাঠান প্রশাসক হামজা খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পর্তুগিজ ক্যাপ্টেনের চট্টগ্রাম আগমনের কারণ পরবর্তী সময়ে ইংরেজদের চট্টগ্রাম দখলের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ইংরেজরা তো শুধু চট্টগ্রাম নয়, সমগ্র ভারতবর্ষ দু’শ বছর শাসন করেছে।

১৫৮৫ সালে পর্তুগিজরা চট্টগ্রাম বন্দরের কর্তৃত্ব দখল করে। এ বছর র‌্যালফ ফিচ চট্টগ্রাম ভ্রমণ করেন। ষোড়শ শতকের মধ্যভাগে পর্তুগিজ ইতিহাসবিদ জোআঁ-দে-বারোস প্রমাণিক ইতিহাস গ্রন্থ রচনা করেন। এখানে চট্টগ্রামের বিবরণ আছে। তিনি লিখেছেন, “গঙ্গা নদীর প্রথম মোহনা পশ্চিম দিকে। একে ‘সাতিগান’ (সাতগাঁও) বলা হয়, নদীর উপর এ নামে একটি শহর আছে। এখানে আমাদের লোকেরা (পর্তুগিজরা) বাণিজ্যিক কাজকর্ম করে। অন্য মোহনাটি পূর্ব দিকে। এর খুব কাছেই আরেকটি অধিকতর বিখ্যাত বন্দর আছে। এর নাম ‘চাটিগান’ (চাটগাঁও)। বিভিন্ন রাজ্য থেকে যেসব বণিক যাওয়া-আসা করে তাদের অধিকাংশই এই বন্দর ব্যবহার করে।”

১৫৫৪ সালে তুরস্কের নৌ অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন সিদি আলী চেহেলি চট্টগ্রাম বন্দরে আসেন। তুর্কী সুলতানের নির্দেশে তিনি চট্টগ্রাম সফর করেন। এসময় চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে বিশ্ব পরিচিতি লাভ করে। ১৫৬৭ সালে সিজার ফ্রেদেরিকো চট্টগ্রাম সফর করেন। সিজার ফ্রেদেরিকো ছিলেন একজন ভেনিশীয় পরিব্রাজক। তারপর এ সম্পর্কে তিনি ভ্রমণ কাহিনি লিখেন। তার বর্ণনায় চট্টগ্রামের মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের চিত্র ফুটে উঠেছে। তিনি গঙ্গা নদীতে ভ্রমণের সময়ে সপ্তগ্রামে (সাতগাঁও বা আজকের চট্টগ্রাম) আসেন। এখানে তিনি ভারতের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানির উদ্দেশ্যে উন্নতমানের চাউল, চিনি, বড় গোল মরিচ, লাক্ষা, কাপড় ইত্যাদির আড়ত দেখতে পান। এখানে তিনি পণ্যবোঝাই ত্রিশ-পঁয়ত্রিশটি ছোট-বড় জাহাজ দেখতে পান। সিজার ফ্রেদেরিকোর কাছে এ জনপদ ব্যবসা অধ্যুষিত শহর বলে মনে হয়েছিল। তিনি সর্বশেষ ইউরোপীয়ান পরিব্রাজক যিনি ‘সপ্তগ্রাম’ (চট্টগ্রাম) বন্দরের জাহাজের কথা লিখেছেন।

১৬০৭ সালে ফরাসি পরব্রাজক ডি লাভাল চট্টগ্রাম আসেন। তিনি চট্টগ্রামের তৎকালীন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে মূল্যবান তথ্য লিপিবদ্ধ করেন, যা কিনা সে সময়ের শাসকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। ১৭৯৩ সালে বিচারপতি স্যার এলিজাহ ইম্পে চট্টগ্রাম সফর করেন। ১৯০৭ সালে ১৭ জুন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চট্টগ্রাম সফর করেন। তাকে কমল বাবুর থিয়েটার হলে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। কমল বাবুর থিয়েটার হলটি সদরঘাটে অবস্থিত ছিল। পরবর্তী সময়ে এটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘লায়ন সিনেমা’। এখন সেটির অস্তিত্ব নেই। চট্টগ্রামে এসেছিলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, এসেছিলেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যও।

এমন আরও অনেক বিখ্যাতজন চট্টগ্রাম ভ্রমণ করেছেন হাজার বছরের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে। তাদের বিবরণে চট্টগ্রামের মনোমুগ্ধকর বর্ণনার অন্ত নেই। এখানে মানুষের বিবরণ আছে, পোশাক-আশাকের বিবরণ আছে। প্রকৃতির কথা, নদ-নদী, পালা পার্বণের কথাও আছে। এসব পাঠ করে আশপাশের শাসকেরা চট্টগ্রামের প্রতি আকৃষ্ট হয়। তৎকালীন শাসকদের মধ্যে দখল করার বিকল্প আর কোনো ভাবনা ছিল না। তাই তারা দখল করে এর সৌন্দর্য উপভোগ করত।

তথ্যসূত্র

১. আহমদ শরীফ: চট্টগ্রামের ইতিহাস

২. আবদুল হক চৌধুরী: চট্টগ্রামের সমাজ ও সংস্কৃতির রূপরেখা

৩. হাজার বছরের চট্টগ্রাম, দৈনিক আজাদী, ৩৫ বর্ষপূর্তি বিশেষ সংখ্যা

৪. অনিরুদ্ধ রায়: বাংলা পিডিয়া (বাংলাদেশ জাতীয় জ্ঞানকোষ)