অস্ট্রিয়ান কবি, নাট্যকার ও ঔপন্যাসিক পেটার হান্টক্য।
Published : 16 Mar 2025, 11:52 PM
অস্ট্রিয়ান কবি, নাট্যকার ও ঔপন্যাসিক পেটার হান্টক্য। তিনি ১৯৪২ সালে অস্ট্রিয়ার গ্রিফেন শহরে জন্ম নেন। তার বহু উপন্যাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘দ্য গোলির অ্যানজাইটি অ্যাট দ্য পেনাল্টি কিক’, ‘অ্যা সোরো বিয়ন্ড ড্রিমস’, ‘মাই ইয়ার ইন দ্য নো-ম্যান’স-বে’ এবং ‘ক্রসিং দ্য সিয়েরা দে গ্রেডোস’। তার নাট্যকর্মের মধ্যে রয়েছে ‘কাসপার’ এবং বিম ভেন্ডার্সের চলচ্চিত্র ‘উইংস অব ডিজায়ার’-এর চিত্রনাট্য।
হান্টক্য বহু গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে জর্জ বিউখনার পুরস্কার, ফ্রান্ৎস কাফকা পুরস্কার, থমাস মান পুরস্কার এবং আন্তর্জাতিক ইবসেন পুরস্কার। ২০১৯ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। সুইডিশ অ্যাকাডেমি তখন বলেছিল, “হান্টক্য এ বছর নোবেল পেয়েছেন তার শক্তিশালী লেখার জন্য, যার ভাষা একেবারেই তার নিজস্ব, যা মানবীয় অভিজ্ঞতার সমস্ত খুঁটিনাটি আর বিস্তারকে ধারণ করতে চায়।”
‘শৈশবের গান’ শিরোনামে পেটার হান্টক্যের এ কবিতায় মূলত পরিণত বয়সের দৃষ্টিকোণ থেকে শৈশবের মানসিক ও বৌদ্ধিক বিশুদ্ধতা তুলে ধরা হয়েছে। যখন একজন শিশু প্রকৃত অর্থে শিশুর মতো ছিল— অর্থাৎ তখন তার মধ্যে কল্পনা, সরলতা, অবাক হওয়ার ক্ষমতা, এবং নির্লিপ্ততা ছিল। মূল কবিতাটি জার্মান ভাষায় ‘লিড ফন কিন্ডজাইন’ শিরোনামে। ১৯৮৭ সালে ‘উইংস অব ডিজায়ার’ চলচ্চিত্রে এটি ব্যবহৃত হয়। ইংরেজিতে কবিতাটি অনুবাদ করেন গ্যাব্রিয়েল, পরিমার্জন করেন ডগ রোজব্রক।
শৈশবের গান
যখন শিশুটি সত্যিকারের শিশু ছিল,
সে হাত দোলাতে দোলাতে হাঁটত,
চাইত ছোট নদী হয়ে উঠুক বিশাল,
নদী বইবে গর্জন তুলে,
আর এই ছোট্ট জলধারাই হোক এক সমুদ্র।
যখন শিশুটি সত্যিকারের শিশু ছিল,
জানত না যে সে শিশু,
সবকিছুই ছিল প্রাণবন্ত,
সব প্রাণ যেন ছিল একসাথে বাঁধা।
যখন শিশুটি সত্যিকারের শিশু ছিল,
তার ছিল না কোনো মতামত,
ছিল না কোনো অভ্যাস,
সে বসত পা গুটিয়ে,
হঠাৎ দৌড়ে বেরিয়ে যেত,
চুলের একগুচ্ছ এলোমেলো থাকত,
আর ছবি তোলার সময় কোনো ভঙ্গি করত না।
যখন শিশুটি সত্যিকারের শিশু ছিল,
তখনই মনে আসত হাজারো প্রশ্ন—
আমি আমি কেন, আর তুমি কেন তুমি?
আমি এখানে কেন, ওখানে কেন নই?
সময় কবে শুরু হলো, আর স্থান কোথায় শেষ হয়?
এই জীবন কি কেবলই এক স্বপ্ন?
আমি যা দেখি, যা শুনি, যা অনুভব করি,
তা কি আসলেই সত্য, নাকি পুরোনো কোনো মায়ার জাল?
অশুভ যদি সত্যিই থাকে,
তবে কি তা শুধুই মানুষের সৃষ্টি?
আমি, যে আমি, আগে তো ছিলাম না,
তাহলে আমি এলাম কীভাবে?
আর একদিন, আমি যে আমি আছি,
আমি যদি না থাকি— সেটাই বা কীভাবে সম্ভব?
যখন শিশুটি সত্যিকারের শিশু ছিল,
সে খেতে পারত না পালং শাক, মটরশুঁটি, দুধভাত,
আর সেদ্ধ ফুলকপি,
কিন্তু এখন খায়, শুধু প্রয়োজনের জন্য নয়, ইচ্ছায়ও।
যখন শিশুটি সত্যিকারের শিশু ছিল,
একদিন এক অচেনা বিছানায় ঘুম ভেঙেছিল,
এখন তা ঘটে বারবার।
তখন অনেকেই তার চোখে ছিল সুন্দর,
কিন্তু এখন সৌভাগ্যক্রমে হাতে গোনা কিছু মানুষকেই সুন্দর মনে হয়।
তখন সে স্বর্গের এক স্পষ্ট ছবি আঁকতে পারত,
এখন কেবল কল্পনা করে।
তখন ‘শূন্যতা’ ছিল কল্পনাতীত,
কিন্তু আজ সেই চিন্তাতেই গা শিউরে ওঠে।
যখন শিশুটি সত্যিকারের শিশু ছিল,
সে আনন্দ নিয়ে খেলত,
এখনো খেলে,
কিন্তু কেবল তখন, যখন তা তার কাজে জড়িয়ে থাকে।
যখন শিশুটি সত্যিকারের শিশু ছিল,
একটি আপেল বা এক টুকরো রুটি খেলেই তৃপ্ত হতো,
আজও তা-ই হয়।
যখন শিশুটি সত্যিকারের শিশু ছিল,
বুনোফল হাত ভরিয়ে দিত,
এখনো তা-ই হয়।
তাজা আখরোটের ঝাঁজ লাগত জিহ্বায়,
এখনো সেই স্বাদ অটুট।
পাহাড়চূড়ায় দাঁড়িয়ে আরও উঁচু পাহাড়ের স্বপ্ন দেখত,
শহরে এসে চাইত আরও বড় শহর,
এখনো সেই আকাঙ্ক্ষা আছে।
সে উচ্ছ্বাস নিয়ে গাছের উঁচু ডাল থেকে চেরি পাড়ত,
আজও সেই আনন্দ ধরে রেখেছে।
অপরিচিতদের সামনে লজ্জা পেত,
এখনো তেমনই পায়।
প্রথম তুষারের জন্য অপেক্ষা করত,
এখনো সেই আগ্রহ আছে।
যখন শিশুটি সত্যিকারের শিশু ছিল,
একদিন সে লাঠি ছুড়ে দিয়েছিল গাছের দিকে,
আর সেই লাঠিটি আজও সেখানে কাঁপছে।