বইটি লিখেছেন গবেষক ফারহানা মান্নান।
Published : 17 Feb 2025, 01:11 AM
ইতিবাচক অভিভাবকত্ব নিয়ে আমরা সবাই নানাভাবে চিন্তা করি। কী করলে বা ঠিক কীভাবে হলে একজন শিশু সত্যিকারের মানুষ হয়ে উঠবে সে বিষয়ে থাকে আমাদের ব্যাপক পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনার মধ্যে কি শিশুদের সঙ্গে কার্যক্রমের মাধ্যমে সময় কাটানোর নানা ধারণা গুরুত্ব পায়? আমরা সেগুলো ভাবার সুযোগ পাই?
ঠিকঠাকভাবে শিশুর ধরন বুঝে সময় কাটাতে পারলে ইতিবাচক অভিভাবকত্ব সহায়ক হিসেবে কাজ করে। আধুনিক সময়ে আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করে প্যারেন্টিং নিয়ে অভিভাবকদের নানা প্রশ্নের উত্তর মিলবে এবারের বইমেলায় প্রকাশিত বই ‘অন্যরকম প্যারেন্টিং’ পড়লে।
বইটি লিখেছেন গবেষক ফারহানা মান্নান, প্রকাশ করেছে সময় প্রকাশন। প্রচ্ছদ মোস্তাফিজ কারিগর। মুদ্রিত মূল্য ৩০০ টাকা।
বইটিতে যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে- প্যারেন্টিং বলতে কী বুঝি, আঁকিবুঁকি ও কোয়ালিটি টাইম, শিশুর বিকাশের ক্ষেত্রে অমূল্য পরিবেশ, গানে গানে কাটানো যায় দারুণ সময়, ঘরের ভেতরেই সময় কাটাই সৃজনশীলভাবে, স্পর্শ নিয়ে শিশুর সঙ্গে কথা, কাউন্সেলিং যেভাবে করতে পারি, যেভাবে শিশুর ভেতরের শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে পারি, সন্তানের জন্য সবচাইতে বড় উপহার ‘সময়’, ইতিবাচক অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে মনোযোগ দেওয়া চাই মাতৃভাষায়, পারিবারিক বন্ধনকে মজবুত করে ভ্রমণ, সন্তানকে ‘মানুষ হও’ বলতে আসলে কী বুঝাই, আসলে বড়দের নিয়েই যত প্যারা, শিশু ভুবনে উৎসবের চর্চা যেভাবে আসতে পারে, প্যারেন্টিংয়ের ‘থ্রি টি’ ফরমুলা!, অভিভাবক হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে নানা রকমের স্ট্রেস, সাইজ ডাজেন্ট ম্যাটার চপিং উড, ‘মগজ ছাড়া দেহ’ আর ‘বই ছাড়া গৃহ, শিশুদের আবেগ নিয়ে আমরা যেভাবে কাজ করতে পারি এবং যে বিষয়গুলো শিশুদের বোঝানোর আগেই জানা দরকার।
শিশুদের খেলা নিয়ে গবেষণার আগ্রহ থেকেই লেখক ফারহানা মান্নান প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘শৈশব’। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী হিসেবে কর্মরত।
তিনি বলেন, “আমি একজন শিক্ষা বিষয়ক লেখক ও গবেষক। হাতে কলমে গবেষণার মূল বিষয়টি হল ‘খেলা’। ২ থেকে ৮ বছরের শিশুদের বিকাশের জায়গা নিয়ে নানাভাবে চিন্তা ভাবনা করা ও সে অনুযায়ী খেলা তৈরি করাই আমার কাজ। এটা করার সময় বিশেষভাবে বিজ্ঞান, গণিত, প্রকৌশল, প্রযুক্তি ও আঁকাআঁকি যোগ করি। একইসঙ্গে জীবনব্যাপী শিক্ষা ও স্কুলের প্রস্তুতির বিষয়টিও বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।”
প্যারেন্টিং বলতে কী বুঝি? এ বিষয়ে বইয়ে বলা হয়েছে, “প্যারেন্টিং আসলে একটি চলমান প্রক্রিয়া। এতো লম্বা সময়কাল জুড়ে বাবা-মা এর দায়িত্ব এবং কর্তব্য হলো শিশুর সামগ্রিক বিকাশের দিকগুলো সম্পর্কে জানা, বিকাশে সহায়তা করা, শিশুকে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য প্রস্তুত করা, শিশুকে সঠিক অর্থে একজন স্বাবলম্বী ও কর্মী মানুষ হয়ে উঠতে সাহায্য করা, দেশ-সমাজ ও রাষ্ট্র সম্পর্কে সচেতন করা। সর্বোপরি শিশুকে অর্থনৈতিকভাবে ও সামাজিকভাবে অবদান রাখার মতো একজন উপযুক্ত মানুষ হিসেবে প্রস্তুত হতে সাহায্য করা, গাইডলাইন দেওয়া, পাশে থাকা।”
ঘরের ভেতরেই কীভাবে সৃজনশীল সময় কাটানো যায়, এ বিষয়ে বলা হয়েছে, “আউটডোর খেলাগুলোর কিছু আমরা ইনডোর বা ঘরের মধ্যে খেলতে পারি। কারণ চাইলেও প্রতিদিন বাইরে খেলতে যাবার সুযোগ হয় না। খেলাগুলোর মধ্যে প্রথমেই হপস্কচ বা ফোরস্কয়ার-এর নাম বলা যায়। আমরা যাকে এক্কা-দোক্কা বলে থাকি। ঘরের ভেতরেই চক বাদ দিয়ে ফ্লোরে মাস্কিং টেপ লাগিয়ে খেলার ঘরগুলো তৈরি করা যায়।”
নারী ও পুরুষের সমান অধিকারের প্রশ্নে একজন নারী যখন কর্মজীবী হয় তখন আসলে আর বিস্ময় প্রকাশের কোনো অবকাশ থাকে না! একুশ শতকের নারী ও পুরুষ উভয়ই চাকরি করবে এই তো স্বাভাবিক। কিন্তু শঙ্কা থেকে যায় একটা বিষয়েই যে, সন্তানের কী হবে? কার কাছে থাকবে? কার কাছ থেকে শিখবে? এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে ‘সন্তানের জন্য সবচাইতে বড় উপহার হলো সময়’ নামে প্রবন্ধে।
বইটি সম্পর্কে লেখক ফারহানা মান্নান বলেন, “শিশুদের সঙ্গে সৃজনশীলভাবে সময় কাটানোর নানা রকমের আইডিয়া আছে এতে। ইতিবাচক অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে চমৎকার দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করবে এ বই।”