পাহাড় অনেক বড়ো
তারচে বড়ো কে?
নিজের ভেতর মৌনতার
পাঠ নিয়েছে যে।
সাগর অনেক বড়ো
তারচে বড়ো কে?
চোখের ভেতর সাত সমুদ্র
আটকে রাখে যে।
আকাশ অনেক বড়ো
তারচে বড়ো কে?
মনের ভেতর শুভ্রতাকে
ধারণ করে যে।
ঠিকানা আমার রঘুনাথপুর গাঁও
ঠিকানা আমার পাল তোলা ডিঙি নাও
ঠিকানা আমার গড়াই নদীর চর
ঠিকানা আমার ছোটো এক কুঁড়েঘর
ঠিকানা আমার সবুজ ধানের মাঠ
ঠিকানা আমার বাংলার পথঘাট
ঠিকানা আমার দোয়েল পাখির গান
ঠিকানা আমার শাপলা ফুলের ঘ্রাণ
ঠিকানা আমার মায়ের দীঘল চুল
ঠিকানা আমার রবিনাথ নজরুল
ঠিকানা আমার শতো নদী বহমান
ঠিকানা আমার মুজিবুর রহমান
ঠিকানা আমার রূপসী রঙিন দেশ
ঠিকানা আমার ঠিকানা বাংলাদেশ
বই পড়তে লাগে না ভালো।
ভালো লাগে ওই তারার আলো।
ভালো লাগে ওই থৈ থৈ নদী।
আহা আমি জল হতাম যদি।
ভালো লাগে ওই আঁকাবাঁকা পথ।
মায়ের নাকের স্বর্ণালি নথ।
ভালো লাগে ওই পাখির উড়াল।
ভালো লাগে ওই হুলো বিড়াল।
ভালো লাগে ওই চাঁদের আলো।
বই পড়তে লাগে না ভালো।
বই পড়া বাদ দিয়ে চলো আজকে
চাঁদের আলোতে পড়ি বটগাছকে।
ইচ্ছে আমার পাখি হবো,
কিচিরমিচির কথা কবো।
ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ যাবো উড়ে,
বনের সবুজ দৃশ্য ফুঁড়ে।
ইচ্ছে আমার হবো আকাশ,
আর্দ্র স্বরে কথার প্রকাশ।
যখন তখন মেঘ গুড় গুড়,
বৃষ্টি হবো ঝুর-ঝুর-ঝুর।
ইচ্ছে আমার নদী হবার,
ছলাৎ ছলাৎ কথা কবার।
মাঠ ভাসিয়ে ঘাট ভাসিয়ে,
যাবোই ব'য়ে কলকলিয়ে।
ইচ্ছে ডানা মেলে আমি
যাচ্ছি আকাশ পারে,
তুলোর মতো মেঘখণ্ড
উড়ছে সারে সারে।
হঠাৎ দেখি অনেক দূরে
নীল পরীদের দল,—
ইচ্ছে ডানা ইচ্ছে ডানা
পরীর দেশে চল।
আমায় দেখে নীল পরীরা
করলো কলহাস,
বললো, বাবু, কী চাও তুমি
কীসের অভিলাষ?
আমি বললাম, দাও চমচম
মিষ্টি মাখন সব।
একটা পরী বললো, আজ
মিষ্টির উৎসব।
হাজার রকম মিষ্টি এলো
কোনটা বলো খাই?
এমনতরো মিষ্টি আমি
কোথাও দেখি নাই।
মিষ্টি খেলাম অনেক আমি
পেট হ'লো খুব ভারি,—
ভালো থেকো পরীস্থান
এবার যেতে পারি।
উড়ছি আবার মেঘের ভেতর,
কোন দেশেতে যাই?—
হঠাৎ দেখি আমার পিঠে
ইচ্ছে ডানা নাই!
ভয় হ'লো খুব এবার আমি
মরবো নিচে প'ড়ে,—
পড়ছি নিচে দেখছি সবাই
যাচ্ছে দ্রুত স'রে।
ঠিক তখনই ঘুম ভেঙে যায়
ধড়ফড়িয়ে উঠি,—
আরে! মা ঘুমিয়ে আমার পাশে
ভয় যে গেলো টুটি।
কুলটিয়া পার হয়ে
দখখিন দিকে
দেখবে পথের মোড়ে
বুড়িগাছটিকে,
বুড়িগাছ থেকে ঠিক
সোজা বরাবর
হেঁটে গেলে গ্রাম অই
সুজাইনগর।
তারই পাশে আমাদের
বাঘমারা বিল,
বিলের উপরে ওড়ে
ছাই-রঙা চিল।
মাছ লোভী মাছরাঙা
আর লোভী বক,
সারাদিন ছোটো মাছ
খায় পকা পক।
মাঝ দিয়ে বিলটার
ছোটো এক খাল,
চ’লে গেছে বহুদূর
নাম কাজিয়াল।
বরষায় কাজিয়াল
জলে ভরপুর,
আমরা সাঁতরে যাই
রঘুনাথপুর।
রঘুনাথপুর থেকে
ফিরে আসি ফের
এইভাবে জলকেলি
চলে আমাদের,—
আর চলে পানিউড়ি
পাখিদের ঝাঁক,
জলে ভাসা হাসগুলি
ডাকে পাঁক পাঁক।
একপাশে বিলটার
বাবলার গাছ,
ধানক্ষেত চারিধার
উজলায় মাছ।
এলোমেলো ফুটে আছে
শাপলার দল,
কোথাও বা হাঁটু পানি
কোথাও বা তল।
এইভাবে বাঘমারা
চিরকাল ঠায়,—
শীতের শুরুতে বিলে
জল কমে যায়
তখন সকলে মিলে
শিং কই ধরি
সারাদিন কাদাজলে
খাই গড়াগড়ি।
একদিন সারাদিন
বনে বনে ঘুরে,
সন্ধ্যার কিছু আগে
আসি পাখিপুরে।
পাখিরা তখন ভাত
রাঁধছিলো নীড়ে,
আমাকে স্বাগত তারা
জানালো কুটিরে।
কিচিরমিচির ক’রে
বললো, সোহাগ,
এইখানে ক্যানো তুমি
কী-বা চাও ভাগ?
আমি বলি, ভাগ নয়—
এসেছি হঠাৎ,
তোমাদের সাথে শুধু
রবো এক রাত।
তারপর চ’লে যাবো
পাখিপুর থেকে
যেই পথ বহুদূর
গেছে এঁকেবেঁকে,—
এসেছি দেখতে শুধু
শিল্পীর ঘর,
কুটো দিয়ে গড়া এর
কারু পত্তর।
আমাকে শিখিয়ে দাও
তোমাদের গান,
কিচিরমিচির এই
মধু কলতান।
ঢাউশ ঘুড়ি ঢাউশ ঘুড়ি
করবে তুমি আকাশ চুরি।
ঢিলেমিলে চিলে তুমি
লেজ থেকে যায় মাটি চুমি।
লেজ খসিয়ে হবে কি ভাই ফটিং?
ও ফটিং ভায়া, গোত্তা খায়া
ওড়ো তুমি তিরিং বিরিং।
দ্যাখো দ্যাখো ফিঙে ঘুড়ি
নীল আকাশে উড়ি উড়ি—
ঘুড়ির গায়ে মেঘের সাদা নুড়ি।
গো গো গো গানে গানে
কৈরো ঘুড়ি সুতা টানে।
হিম বাতাসে মেঘ গলে
সাপা ঘুড়ি কথা বলে—
ঘর বেঁধেছি শূন্য ঠিকানায়
আহা, কখন যেনো টান পড়ে সুতায়।
ওই দ্যাখো, ওই দ্যাখো,
কী সুন্দর একখান ঘুড়ি—
কৈতরখোঁপায় ঘুমায় চাঁদের বুড়ি।
ঘুড়ির গায়ে মেঘের সাদা নুড়ি।