টাপিনের পিঠে সেই প্রহারের চিহ্ন রয়ে গেল। এখনও মেঠো কাছিমের পিঠে সেই চাবুক মারার ফোঁটা ফোঁটা চিহ্ন দেখা যায়।
Published : 26 Dec 2024, 04:29 PM
এক দেশে এক ছিল মেঠো কাছিম। ওর নাম ছিল টাপিন। তার ছিল ছয় সন্তান। ওরা সবাই ছিল খুব ক্ষুধার্ত। তখন দেশটির সব মানুষ ছিল ক্ষুধার্ত, কারণ তখন ছিল দুর্ভিক্ষের সময়।
সে দেশে এক ঈগলও ছিল। সে মেঘের ভেতর লুকিয়ে থাকত। সে একদিন সাগর পাড়ি দিল সন্তানদের জন্য খাবার সংগ্রহ করতে। নানা জায়গায় খাবার খুঁজতে থাকলো। ঈগল খাবার সংগ্রহ করে আনে।
মেঠো কাছিম টাপিন তা দেখলো। তখন সে ঈগলকে থামিয়ে বলল, এখন আমরা কঠিন সময় পার করছি। তুমি তোমার সন্তানদের জন্য খাদ্য সংগ্রহ করতে কোথায় গিয়েছিলে? আমারও ছয় সন্তান আছে। আমাকেও ওদের জন্য খাদ্য সংগ্রহ করতে হবে। ঈগল বলল, আমি খাবারের জন্য সাগর পাড়ি দিয়েছিলাম।
টাপিন বলল, তোমার সংগৃহীত খাবার থেকে আমাকে কিছু খাবার দাও। আগামীবার খাবার সংগ্রহে আমি তোমার সঙ্গে যাব। ঈগল তখন বলল, ঠিক আছে, কোনো সমস্যা নেই। কখন তুমি যেতে চাও? টাপিন তাকে বলল, আগামীকাল খুব ভোরে।
টাপিন পরদিন ভোরের জন্য অপেক্ষা করল না। রাত তিনটা বাজতেই সে ঈগলের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করলো। ঈগলের বাড়ি গিয়ে মেঠো কাছিম টাপিন ডাকাডাকি শুরু করে দিল। ডাক শুনে ঈগল টাপিনকে বলল, বাড়ি গিয়ে ঘুমিয়ে থাক। ভোর হতে এখনও অনেক দেরি।
টাপিন তারপরও থামাল না। ডাকতেই থাকল। বিরক্ত ঈগল উঠে এসে জানতে চাইল, এখন তুমি কী চাও? টাপিন বলল, আমার এদিকে তিনটি পালক, আর ওইদিকে তিনটি পালক লাগিয়ে দাও। ঈগল তাই করল। তারপর বলল, যাও দেখি উড়ো!
মেঠো কাছিম টাপিন উড়তে গেল। অমনি একটা পালক খসে পড়লো। টাপিন বলল, ঠিক আছে। আমার আরও পাখা আছে। চল আমরা উড়তে শুরু করি। ঈগল আর টাপিন উড়তে লাগল। উড়তে উড়তে ওরা সমুদ্রের উপর এসে গেল। এরই মধ্যে টাপিনের সব পালক খসে পড়ে। টাপিন সমুদ্রের পানিতে পড়ে যাচ্ছিল। তখন ঈগল এসে তাকে ধরে পালকের নিচে ঢুকিয়ে নিল।
টাপিন বলল, ওয়াক! কেমন একটা বাজে গন্ধ লাগছে। ঈগল একথায় একটু রাগ করল। টাপিনকে পালকের নিচ থেকে বের করে দিল। সমুদ্রে ফেলে দিল। টাপিন পানির নিচে তলিয়ে গেল। ওখানে ছিল সমুদ্রের রাজা। রাজার সঙ্গে টাপিনের সাক্ষাৎ হলো।
রাজা মেঠো কাছিম টাপিনের কাছে জানতে চাইল, তুমি এখানে কেন? এখানে তুমি কী করছ? টাপিন তখন রাজাকে বলল, রাজা, আমরা পৃথিবীতে এখন খুব বিপদের মধ্যে আছি। আমরা অনাহারে আছি। আমি আমার ছয় ভূমিপুত্রকে কোনো খাবার খেতে দিতে পারিনি। ঈগল অবশ্য পারছে। ওরও তিনটি বৃক্ষসন্তান আছে। সে উড়াল দিয়ে সমুদ্র অতিক্রম করতে পারে। ফলে সে প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহ করতে পারছে। তুমি অনুগ্রহ করে আমার সন্তানদের জন্য কিছু খাবারের ব্যবস্থা করে দাও।
ভূগর্ভের রাজা বলল, ঠিক আছে...ঠিক আছে। রাজা টাপিনকে বিরাট একটি কাপ দিল। তারপর বলল, এটা তুমি নাও। যখন তোমার সন্তানের জন্য খাদ্যের দরকার হবে, তখন তুমি এ মন্ত্রটা বলবে, ‘বকন কোলেব/ বকন কাউবে/ বকন কাউবুবো/ লেবে লেবে।’
টাপিন সেই বিশাল হাতলওয়ালা জাদুর কাপটি নিয়ে বাড়ি ফিরল। তারপর সন্তানদের ডাকল। যখন সব সন্তান তার কাছে আসল তখন সে রাজার শিখিয়ে দেওয়া মন্ত্রটি বলল, ‘বকন কোলেব/ বকন কাউবে/ বকন কাউবুবো/ লেবে লেবে।’
সঙ্গে সঙ্গে নানা রকমের খাবার চলে আসল। টাপিনের সন্তানরা মহানন্দে ভোজন করল। তখন টাপিন মনে মনে বলল, আমি এই জাদুর কাপটি আমাদের রাজার কাছে বিক্রি করব। টাপিন কাপটি নিজেদের রাজাকে দেখাল। তারপর মন্ত্রটি বলল, ‘বকন কোলেব/ বকন কাউবে/ বকন কাউবুবো/ লেবে লেবে।’
সঙ্গে সঙ্গে নানা রকমের খাবার চলে এলো। রাজা তার লোকজনের ডাকল। সবাই খুব আনন্দ করে খাওয়া-দাওয়া করল। তারা মাংস, ফলসহ নানা রকমের খাবার খেল। সবার খাওয়া শেষ হলে টাপিন জাদুর কাপটি নিয়ে বাড়ি ফিরল। সন্তানদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে ওই জাদুমন্ত্রটি বলল। কিন্তু কোনো কাজ হলো না। বারবার চেষ্টা করেও বিফল হলো।
টাপিন বলল, ঠিক আছে। আমি আবার ভূগর্ভের রাজার কাছে যাব। তাকে জানাব এবং সমস্যার সমাধান করতে বলব। টাপিন তাই করল। টাপিন পানির নিচে রাজার কাছে গিয়ে বলল, রাজা, এটা কী হলো? জাদুর কাপ আমার সন্তানদের জন্য খাবার দিচ্ছে না কেন?
রাজা বলল, এই নাও, এই গো-চর্ম নির্মিত চাবুকটা নাও। যখন কোনো কিছুর দরকার হবে, তখন তুমি বলবে, সিট নাউন/ এন-জাকো/ নাউ ও কুআকু।
টাপিন ফিরে তা-ই করল। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে চাবুকটা টাপিনের ভূমিপুত্রদের মারতে আরম্ভ করল। আর বলতে লাগল, নামো। নামো। সবাই নামল বটে, কিন্তু অনেক ভূমিপুত্র মারা গেল, অনেকে অসুস্থ হয়ে গেল। টাপিন বলল, ঠিক আছে, আমি ভূগর্ভের রাজাকে এখানে ডাকব।
সে রাজা ও জনতাকে ডাকল। সবার উদ্দেশ্যে যা ঘটল বলল। বলার আগে চাবুকের মার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিজের জন্য একটা সুরক্ষা আবরণ তৈরি করে নিল। সে বালি আর চুন দিয়ে তৈরি সুরক্ষা আবরণের মধ্যে নিজেকে প্রতিস্থাপন করল। তারপর বলল, ‘সিট নাউন/ এন-জাকো/ নাউ ও কুআকু।’
সঙ্গে সঙ্গে গো-চর্ম নির্মিত চাবুকটি মারতে আরম্ভ করে দিল। চাবুকটি লাফিয়ে লাফিয়ে সবাইকে মারতে লাগল। এমনকি রাজাকেও বাদ দিল না। সুরক্ষা আবরণে প্রতিস্থাপিত টাপিনকেও প্রহার করল।
টাপিনের পিঠে সেই প্রহারের চিহ্ন রয়ে গেল। এখনও মেঠো কাছিমের পিঠে সেই চাবুক মারার ফোঁটা ফোঁটা চিহ্ন দেখা যায়। সে কারণেই সব জায়গায় এখনও মেঠো কাছিম দেখা যায় না। ওরা সবসময় আলাদা জায়গায় থাকে।