গল্প
বেড়াতে যাওয়ার আগে নিনিতের দুই জোড়া মোজার একজোড়াও পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই মিলে চালালেন মোজা খোঁজার অভিযান। খুঁজে খুঁজে সবাই ব্যর্থ, ক্লান্ত।
Published : 18 Aug 2024, 07:03 PM
নিনিতের দুই জোড়া মোজা। নিনিত এই মোজাগুলোর মালিক হয়েছে উত্তরাধিকার সূত্রে। মোজাগুলো তার বড় বোন নিবিড়ের।
নিবিড়ের বয়স তিন বছর, নিনিতের চার মাস। নিবিড়ের পুরোনো মোজা দিয়েই চলে যাচ্ছে নিনিতের। সে যদি বুঝতো, বড় বোনের মোজা তাকে পরানো হচ্ছে নিশ্চিত সে বিদ্রোহ করতো। বলতো, আমারও নতুন মোজা চাই।
শীতের বিকেল। নিবিড় আর নিনিত মা-বাবার সঙ্গে বেড়াতে যাচ্ছে নানুর বাড়িতে। বেড়াতে যাওয়ার খবর নিবিড় দুপুরেই জেনেছে। তখন থেকেই চলছে নিরবচ্ছিন্ন সাজগোজ। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঠোঁটে মেখেছে ‘লিপি’। লিপিস্টিককে নিবিড় বলে ‘লিপি’। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কয়েকবার লাগাতে হয়েছে লিপিস্টিক। বারবার সে চেষ্টা করছে কারো সঙ্গে কথা না বলে ঠোঁট একত্রিত রেখে লিপিস্টিক অক্ষুণ্ন রাখতে। সেটা সম্ভব হচ্ছে না। সাজগোজের জন্য বিভিন্ন প্রয়োজনে একে ওকে ডাকতে হচ্ছে। ইশারা ইঙ্গিতে অনেক কিছুই বোঝানো সম্ভব হচ্ছে না। মুখ খুলতে হচ্ছে।
পছন্দের জামা কাপড় পরে, সেজেগুজে নিবিড় একপ্রকার তৈরি। গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছে দরজায়। পিপ পিপ হর্ন দিচ্ছেন ড্রাইভার। মা-বাবাও তৈরি। বারবারের মতো শেষ মুহূর্তে কী যেন একটা খুঁজে পাচ্ছেন না মা। এখানে ওখানে তন্নতন্ন করে খুঁজে না পেয়ে বিষয়টি জানালেন ঘরের সবাইকে। নিনিতের দুই জোড়া মোজার একজোড়াও পাওয়া যাচ্ছে না।
নানুবাড়ি পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যা হবে। বাইরে ফিনফিনে বাতাস। সন্ধ্যায় বাতাস আরও বাড়বে। খোলা গাড়িতে পায়ে বাতাস লাগলে নিশ্চিত নিনিতের ঠান্ডা লেগে যাবে। বাবা, দাদা, দাদি, ফুফু সবাই মিলে চালালেন মোজা খোঁজার অভিযান। খুঁজে খুঁজে সবাই ব্যর্থ, ক্লান্ত।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। অপেক্ষা করতে করতে ড্রাইভারও বিরক্ত। ভাড়া না নিয়েই সে চলে যাবে এমন পরিস্থিতি। মোজা না পাওয়ায় শেষে সিদ্ধান্ত হলো, ঠান্ডা থেকে বাঁচাতে নিনিতের পায়ে মোটা তোয়ালে মুড়িয়ে দেওয়া হবে।
খাটের ওপর পা ছড়িয়ে বসে আছে নিবিড়। নিজের সাজগোজ নিয়ে ব্যস্ত থাকায়, ঘরে যে মোজা খোঁজার অভিযান হয়ে গেছে সে তার কিছুই খেয়াল করেনি। সবাই গাড়িতে উঠে যাচ্ছে বুঝতে পেরে, তড়িঘড়ি খাট থেকে থেমে জুতো পরতে গিয়ে সে এক দারুণ সমস্যায় পড়লো। পা ঢুকছে না জুতোর ভেতর।
বারবার চেষ্টা করেও নিবিড় পা দুটো জুতোর ভেতর ঢোকাতে পারছে না। নিবিড়ের দেরি দেখে এগিয়ে এলেন বাবা। তাড়াহুড়োর ভেতর বাবাও চেষ্টা করলেন কয়েকবার। না পেরে চাইলেন ঠেসে ঢুকিয়ে দিতে। ব্যথায় উঁহ করে উঠলো নিবিড়। বাবা-মেয়ের ব্যর্থতায় এগিয়ে এলেন মা।
নিবিড় যে মোজা পরে বসে আছে, ব্যস্ততায় কারণে এতক্ষণ মা সেটা খেয়ালই করেননি। নিবিড়ের পায়ে নিনিতের মোজা দেখেই মা বুঝে ফেললেন আসল ঘটনা। বাচ্চাদের কাপড়চোপড়ের খবর মায়ের চেয়েও বেশি কেউ জানে না। নিবিড়ের এক জোড়া, নিনিতের দুই জোড়া। মোট তিন জোড়া মোজা ছিলো ওয়্যারড্রোবের নিচের ড্রয়ারে। ড্রয়ারটা নিবিড় প্রায়ই খোলে, বন্ধ করে।
নিনিতের সমস্যার সমাধান মিললো। নিবিড়ের পা থেকে খুলে মোজাগুলো পরাতে হবে নিনিতের পায়ে। মোজা জোড়া খুলতেই জুতোর ভেতর পা না ঢোকার কারণটাও আঁচ করতে পারলেন মা। দেখলেন, নিবিড়ের পায়ে আরও এক জোড়া মোজা। দুই জোড়া মোজা পরায় জুতায় পা ঢুকছিল না। মা ভাবলেন। এক জোড়া খোলা হয়েছে। এবার ঢুকবে। জুতোর ভেতর পা ঢুকাতে গিয়ে মা দেখলেন, এবারও ঢুকছে না।
জুতো জোড়া ছোট হয়ে গেছে নাকি? মা ভাবলেন। মোজা খুলে নিলে কোনোমতে খালি পা ঢুকে যাবে। নিবিড়ের পায়ে থাকা দ্বিতীয় জোড়া মোজা খুলে মা অবাক! ভেতরে আরও এক জোড়া মোজা! তিন জোড়া মোজা পরে বসে আছে নিবিড়। মা হাসবেন, না রাগ করবেন বুঝতে পারছেন না। নিবিড়ের মুখের দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হেসে ফেললেন শেষ পর্যন্ত। মায়ের হাসির শব্দ শুনে ছুটে এলেন ঘরের সবাই। দেখলেন নিবিড়ের মোজা কাণ্ড।
নিবিড়ের পা এবার সহজেই ঢুকে গেলো জুতোর ভেতর। পা দুটোর উপর খুব ধকল গেছে এতক্ষণ। অল্প অল্প ব্যথা করছে।