মুহাম্মদ ইকবালের কবিতা: তরুণদের প্রতি

'ঝকমকে রাজপ্রাসাদ তো তোমার ঘর নয়/ তুমি ঈগল— ঘর বাঁধবে সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ের উপর।'

রাব্বী আহমেদরাব্বী আহমেদ
Published : 6 March 2023, 10:31 AM
Updated : 6 March 2023, 10:31 AM

মুহাম্মদ ইকবাল [৯ নভেম্বর ১৮৭৭ – ২১ এপ্রিল ১৯৩৮]  ছিলেন অবিভক্ত ভারতবর্ষের কবি। ‘আসরার-ই-খুদি’, ‘শিকওয়া ও জওয়াব-ই-শিকওয়া’ তার বিখ্যাত কবিতার বই। তিনি দেশাত্মবোধক গান 'সারে জাঁহাসে আচ্ছা হিন্দুস্তাঁ হামারা'-র রচয়িতা।

তোমার সোফা ইউরোপের আর কার্পেট ইরানের,
আমার বুক ফেটে কান্না আসে
যখন কোনো তরুণকে এমন বিলাস
আর আয়েশের মধ্যে থাকতে দেখি। 

যদি খসরুর রাজত্বের মতো বিপুল সম্পদের
মালিকও তুমি হও,
কিন্তু আলীর মতো দুরন্ত সাহস
আর সোলায়মানের মতো
নির্মল প্রশান্তি তোমার হৃদয়ে না থাকে,
       তাতে লাভ কী বলো?  

আজকের সভ্যতার জমকালো এ জীবন
তুমি খুঁজতে যেও না,
বিশ্বাসের চূড়ান্ত সীমায়—
      একই পরিতৃপ্তি তুমি পাবে।

তরুণ-হৃদয়ে যখন ঈগল-স্পৃহা জাগে
তখন সে তার গন্তব্য দেখতে পায়— জান্নাতে।

কখনও হতাশ হয়ো না, কারণ হতাশা
জ্ঞান হ্রাস করে; ডেকে আনে আত্মার বিপর্যয়।

যে বিশ্বাস করে, এবং আশায় বুক বাঁধে
সে-ই স্রষ্টার অন্যতম আস্থাভাজন বন্ধু।

ঝকমকে রাজপ্রাসাদ তো তোমার ঘর নয়,
তুমি ঈগল— ঘর বাঁধবে সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ের উপর।

তুমি উড়বে; ওড়াই তোমার কাজ
তোমার সীমানা এক নয়— অনেক আকাশ।

 [কবিতাটি বাল-ই-জিব্রিল (১৯৩৫) গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত] 

হে বিশ্বাসী তরুণ,
কখনও কি চিন্তা করেছো গভীর ও গুরুতর বিষয় নিয়ে?
এই পৃথিবীটা আসলে কী? 
যেখানে তুমি শুধুই একটি বিচ্ছিন্ন তারা।

এমন অনেক একাকী নক্ষত্রের উপর
নির্ভর করে কোনো দেশের ভবিষ্যৎ।
দেশ কখনও এগোতে পারে না
যদি না সে তার প্রত্যেক তরুণকে
পরিপূর্ণ বিকাশের সুযোগ করে দেয়।
কাজে লাগায় পৃথক-প্রতিভাকে।

একেকটি তরুণ একেকটি উদীয়মান নক্ষত্র,
তাদের হাতেই রাষ্ট্রের নিয়তি,  
যদি তারা পরিপূর্ণ পুষ্টি পায়,
তবেই পরিপক্ক হয় দেশ।


একজন তরুণ একা কিছুই করতে পারে না,
যদি না রাষ্ট্র পাশে থাকে তার,
বিচ্ছিন্ন নক্ষত্র মিলেই তৈরি হয়
অপূর্ব আলোর সমাহার।

দেশের ভবিষ্যৎ কী, তা কেউ জানে না
কিন্তু চারদিকে— অজস্র নিদর্শন,
হে তরুণ জেগে ওঠো, বাঁচাও এ দেশ
উদাসীন যদি থাকো তবে নিশ্চিত পতন।

হৃদয়কে করো ইস্পাতের মতো কঠিন
আস্থা রাখো নিজের উপর, ভাই
যদি আসে যুদ্ধ আবার, কলম ধরো—
তরবারির কোনো প্রয়োজন নেই।

বাজপাখির নেই ওড়ার কোনো ক্লান্তি,
কিংবা কখনও লুটিয়ে পড়ে না মাটিতে।
পরিশ্রান্ত দুডানায় কী যে শক্তি,
সঞ্চার করে ছোটে ক্ষিপ্র গতিতে।

শিকারির ভয়ে কখনো সে
বন্ধ করে না ওড়া,
পুরো পৃথিবী-ই গৃহ তার
রাজত্ব আকাশ জোড়া।

পাখির মতো স্বাধীন হও,
আকাশের মতো উন্মুক্ত,
সাহসী হৃদয়ে নীরবে ফলাও
ভালোবাসার মুক্তো।

সূত্র: আল্লামা ইকবাল ডটকম