মাছগুলো সব ব্যাঙ হয়ে গেলো

একদিন স্কুল থেকে ফিরে দেখি, আমার বিছানায় একটা ব্যাঙ লাফিয়ে বেড়াচ্ছে!

ফাহিমা কানিজ লাভাফাহিমা কানিজ লাভা
Published : 4 Nov 2023, 05:43 AM
Updated : 4 Nov 2023, 05:43 AM

আমি বুড়ো হয়ে গেছি। এমনকি আমার নাতি নাতনিও আছে। কিন্তু তবু মনে হয়, এই তো সেদিনের কথা।

একদিন স্কুল থেকে ফিরে দেখি, আমার বিছানায় একটা ব্যাঙ লাফিয়ে বেড়াচ্ছে! ভাবছো, ব্যাঙ লাফানো দেখে এত অবাক হওয়ার কী আছে? তাহলে শোনো, সেই গল্পটা বলি।

ওইদিন আমি মাত্র স্কুল থেকে বাসায় এসেছি। নিজের ঘরে ঢুকব কী, দেখি একটা ব্যাঙ আমারই বিছানায়! আমি চিৎকার দিয়ে মাকে বলি, ‘ও মা, দেখে যাও, আমার বিছানায় একটা ব্যাঙ!’ মা অবশ্য জানতেন যে আমি এমনটাই বলব।

তিনি এই ভেবে খুশি হলেন যে তার ছেলে প্রকৃতির একটা রহস্য নিজের চোখের সামনে দেখতে পেরেছে এবং নতুন কিছু আবিষ্কার করেছে। এমনটা সবার সঙ্গে ঘটে না। তিনি বললেন, ‘বাহ্, দারুণ ব্যাপার। দেখে খুব খুশি হলাম।’

হয়েছিল কি জানো তো, বসন্তের শুরুর দিকের ঘটনা। আমার বয়স তখন মাত্র ৬ বছর। পুকুর পাড়ে খেলতে গিয়ে দেখি কালো কতগুলো ছোট ছোট মাছ সাঁতার কেটে বেড়াচ্ছে। আমি আগে কখনো কোনো প্রাণিকে পুষিনি। মাছগুলোকে দেখে আমার মনে হলো, এগুলোকে আমি পুষবো, অনেক আদর করে বড় করব। তাই মাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ওগুলোর একটিকে আমি আনতে পারি কিনা।

বাসায় এসে দেখি, মা মাছের জন্য একটা কাচের পাত্রে পানি ভরে আমার পড়ার টেবিলের এক কোণে রেখে দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে মা আমাকে অনেক কথাই বললেন। মাছ ধরে নিয়ে আসার পর আমার অনেক দায়িত্ব পালন করতে হবে, পোষা প্রাণির যত্ন নিতে হবে ইত্যাদি। আমি সব ঠিকমতো পালন করব বলার পর মা আমাকে মাছ ধরে আনার অনুমতি দিলেন। মা আমাকে একটা গামলা দিলেন এবং অল্প কটা মাছ ধরতে বললেন।

এই সময়ের মধ্যে মা মাছের জন্য একটা ঘর ঠিক করে রাখবেন বলে জানালেন। আমি খুব খুশি হয়ে বেরিয়ে গেলাম। ওই কালো কালো ছোট মাছগুলো পুকুরে ঝাঁকে ঝাঁকে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। সেগুলোর মধ্যে থেকে কয়েকটা ধরে ফেলা ছিল পানির মতোই সহজ ব্যাপার।

আমি দ্রুতই কয়েকটা মাছ ধরে গামলার পানিতে রেখে দৌড়ুতে দৌড়ুতে বাসায় চলে এলাম। বাসায় এসে দেখি, মা মাছের জন্য একটা কাচের পাত্রে পানি ভরে আমার পড়ার টেবিলের এক কোণে রেখে দিয়েছেন। তিনি আমার মাছগুলো দেখতে চাইলেন।

আমি তাকে দেখালে তিনি হেসে বললেন, ‘ব্যাঙাচি, ওয়াও! সামনে তোমার জন্য নতুন বিস্ময় অপেক্ষা করছে তাহলে।’ আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ব্যাঙাচি কী ধরনের মাছ মা?’ তিনি শুধু বললেন যে আমাকে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে আর মাছগুলোর বড় হওয়া দেখতে হবে।

কয়েক সপ্তাহ পর আমি কিছু পরিবর্তন দেখতে পেলাম। আমি উত্তেজিত হয়ে মাকে বললাম, ‘মা, এদিকে এসো। দেখ, আমার মাছগুলোর পা গজাচ্ছে।’ মা ঘরে এলেন এবং ব্যাপারটা দেখে হাসলেন। তিনি আবারও আমাকে আরো কিছুদিন ধৈর্য ধরে দেখতে বললেন। 

আমি উত্তেজনায় চেঁচিয়ে বললাম, ‘মা, আমার ঘরে আসো। আমার মাছগুলো একদম অন্যরকম হয়ে গেছে!’

আরো কয়েক সপ্তাহ পর আরো কিছু পরিবর্তন দেখা গেল। আবারো আমি উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করে মাকে ডাকলাম, ‘মা, দেখে যাও। আমার মাছগুলোর চারটা পা হয়েছে আর তাদের লেজগুলো যেন ছোট হয়ে যাচ্ছে।’ মা ঘরে এসে সব দেখেশুনে হাসলেন এবং আবারও আমাকে ধৈর্য ধরে দেখতে বললেন।

আরো সপ্তাহখানেক পরের ঘটনা। আমি ঘুম থেকে উঠে অবাক হয়ে গেলাম। আরো কিছু পরিবর্তন হয়েছে আমার মাছগুলোর। ওগুলোর লেজগুলো আর নেই, আর পাগুলো আগের চেয়ে আরো বড় হয়ে গেছে। তারচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, বসন্তের শুরুতে যে ছোট কালো মাছগুলোকে আমি ধরে এনেছিলাম, এগুলোকে আর কিছুতেই তেমনটা লাগছে না।

আমি উত্তেজনায় চেঁচিয়ে বললাম, ‘মা, আমার ঘরে আসো। আমার মাছগুলো একদম অন্যরকম হয়ে গেছে!’ মা এলেন এবং সব দেখলেন। বিজ্ঞের মতো হেসে তিনি জানালেন যে অত্যাশ্চার্য ব্যাপারটা এবার দ্রুতই দেখতে যাচ্ছি আমি। ওইদিন আমি স্কুল থেকে বাসায় এসে রীতিমতো হা হয়ে গেলাম! চিৎকার দিয়ে বললাম, ‘আমার বিছানায় ব্যাঙ লাফাচ্ছে!’

মা বললেন, ‘এটা তোমার জন্য সারপ্রাইজ। তুমি তোমার চোখের সামনে একটা অত্যাশ্চার্য ঘটনা দেখলে। মাছ বদলে গিয়ে ব্যাঙ হয়ে গেছে। এখন তুমি এই ব্যাঙটাকে এবং ব্যাঙ হতে চলা ওই মাছগুলো নিয়ে গিয়ে পুকুরে ছেড়ে দাও। আমি কাল সকালে আবারো এমন ৫০টা সারপ্রাইজ চাই না।’

আমি মায়ের কথামতো ব্যাঙগুলোকে পুকুরে ছেড়ে দিলাম।