আমি গর্বিত, আমি ধন্য। কেননা আমি এমন একটি দেশে জন্মেছি যার মাটি, আকাশ-বাতাস, প্রতিটি ধূলিকণা স্বাধীন, মুক্ত।
Published : 26 Dec 2021, 08:03 PM
ঠিক ৫০ বছর আগে পাকিস্তানি হায়নাদের কবল থেকে আমাদের দেশ মুক্ত হয়। আমাদের পূর্বপুরুষদের এক নদী রক্তের বিনিময়ে পৃথিবীর মানচিত্রে খচিত হয় এক স্বাধীন ভূখণ্ড।
যার জন্য আজ আমরা মুক্ত আকাশে ওড়ার স্বপ্ন বুনতে পারি, মুক্ত আকাশে বুক ভরে শ্বাস নিতে পারি। মায়ের ভাষায় গল্প, ছন্দ, কবিতা রচনা করতে পারি।
আমরা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ই ডিসেম্বর বিজয়ের উৎসব দেখিনি। কিন্তু যুদ্ধের এতদিন পর সেই গল্প, সেই কাহিনী, সেই ইতিহাস শুনে গর্বে হৃদয়টা ভরে উঠে।
কী দীপ্ত সাহস!
কী অদম্য ইচ্ছাশক্তি!
কী দীপ্ত প্রেরণা!
৭ ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বীর বাঙালি। স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর ছিল তাদের প্রত্যেকটি হৃদয়। স্বপ্ন ছিল এ দেশ স্বাধীন হবে। ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত একটি সোনার দেশ হবে। তাদের অনবদ্য ইচ্ছাশক্তি আর এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বিজয় আর আজ পালিত হচ্ছে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী।
বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তীর এই দিনে কিছু অপ্রাপ্তিও আছে বলে আমার মনে হয়। কেননা এই স্বাধীন বীর সেনানীদের দেশে এখনও হাজার হাজার শিশু পথে-ঘাটে অনাদরে পড়ে রয়েছে। যারা ঠিকমতো পায় না দুবেলা দুমুঠো ভাত, যারা শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে সব ধরনের মৌলিক অধিকার থেকে প্রায় বঞ্চিত। স্নেহ মায়া মমতা কখনোই যাদের কপালে জোটে না। যারা জানেই না স্বাধীনতা কী, বিজয় কী, মুক্তিযুদ্ধ কী! এটা অপ্রাপ্তি বটে।
এখনো গ্রামেগঞ্জে অসংখ্য মেধাবী বালিকা অভাবের তাড়নায় বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছে, অকালেই ঝরে যাচ্ছে তাদের হৃদয়ের লালিত স্বপ্ন। এভাবেই তাদের স্বপ্নগুলো বিজয়ী হবার আগেই পরাজিত হয়ে যায় বারবার।
এখনো কিশোরী মেয়েটা রাস্তার ধারের সেই বখাটেদের ভয়ে স্কুলে যেতে ভয় পায়। বাধ্য হয়ে ছাড়তে হয় স্কুল। এখনো দেশের সর্বত্র শিশুশ্রম বেড়েই চলছে। করোনাকালীন স্কুল থেকে ঝরে গেছে অনেক শিশু। বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে অসংখ্য শিশু শ্রমজীবিরা নিয়োজিত। তাদের কাছে দিন শেষে এক মুঠো পেট পুরে ভাত খাওয়াই বিজয়।
তাই বিজয়ের এই সুবর্ণ জয়ন্তীর এই আনন্দে প্রত্যাশা হচ্ছে পথশিশুরা পাক নিরাপদ আশ্রয়। তাদের জন্য নিশ্চিত হোক সব ধরনের মৌলিক অধিকার। তারা জানুক আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের ইতিহাস, আমাদের বিজয়। এই দেশ হোক বাল্যবিয়ে মুক্ত, পূরণ হোক প্রতিটি বালিকার হৃদয়ের লালিত স্বপ্ন। হোক বখাটে আর মাদকমুক্ত একটা স্বপ্নের দেশ।
প্রতিটি শিশু ফিরে যাক স্কুলে, ফিরে পাক স্বপ্ন পূরণের অদম্য ইচ্ছে। আর শিশুর হৃদয়ের লালিত স্বপ্ন পূরণ হওয়ার মাধ্যমেই সার্থক হবে বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তীর আনন্দ উৎসব। সার্থক হবে মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ।