হ্যালোর যুগপূর্তি
'আমি আদিবাসীদের নানা কথা বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছি হ্যালোর মাধ্যমে।'
Published : 31 Mar 2025, 02:57 PM
বিশ্বে শিশু সাংবাদিকতার প্রথম বাংলা সাইট হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আমার পথচলার পুরোটা শেখা আর নিজেকে সাহসী করে তোলার এক গল্প।
আমার মা ২০২২ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে হ্যালোতে শিশু সাংবাদিকতা করার জন্য নিবন্ধন করে দেন। এরপর আমি সেখান থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পাই।
প্রথমে একটু প্রশিক্ষণ নিয়ে দ্বিধা কাজ করছিল। কেমন হবে, বিরক্ত লাগবে কি না ইত্যাদি। এরপর মায়ের উৎসাহে অংশ নিলাম আর সেই যে হ্যালোর সঙ্গে যাত্রা শুরু, তা আজও আমাকে মুগ্ধ করে যাচ্ছে।
কীভাবে খবর লিখতে হয়, ভিডিও প্রতিবেদন তৈরি করতে কী কী প্রয়োজন, কণ্ঠ দিতে হয় কীভাবে, মাঠে গিয়ে তথ্য সংগ্রহের মত নানা জিনিস আমি সেখান থেকে শিখেছি। এরপর থেকে ধীরে ধীরে আমার আত্মবিশ্বাস বাড়তে শুরু করে।
আমি আদিবাসীদের নানা কথা বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছি হ্যালোর মাধ্যমে। বৈসাবি উৎসব নিয়ে করেছি প্রতিবেদন। আমার সবচেয়ে বেশি ভয় লাগত প্রতিবেদনে কণ্ঠ দেওয়া। মনে হত আমার বাংলা উচ্চারণ খারাপ, দর্শক কী ভাববে। কিন্তু, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভয় দূর হয়ে গেছে।
হ্যালোতে আমার প্রতিবেদন প্রকাশ পাওয়ার পর আদিবাসী ছোট ভাইবোনরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করে। তারা জানতে চায় হ্যালো কী, কীভাবে কাজ করে, ওরা কীভাবে নিবন্ধন করবে ইত্যাদি।
আমার কাছে যখন কেউ জানতে চায় কীভাবে হ্যালোতে যুক্ত হবে আমি তাদের বিস্তারিত খুলে বলি। আমার কাছ থেকে জেনে অনেকেই যুক্ত হয়েছে, যা আমাকে খুবই গর্বিত করে। তাদের সঙ্গে আমি শিশু অধিকার, বাল্যবিয়ে, শিশুশ্রমসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করি—যা আমি হ্যালো থেকেই জেনেছি।
সবচেয়ে ভালো লাগে, যখন কেউ জানতে চায়, তুমি পড়াশোনার পাশাপাশি আর কী করো? তখন গর্ব করে বলি, আমি চিত্রাঙ্কন আর নাচ করি এবং একজন শিশু সাংবাদিক। এটা শুনে অনেকেই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে!
শিশু সাংবাদিকরা কী কী বিষয়ে কাজ করে, এটা জানলে তো আরও হতবাক হয়ে যায়। অনেকেই এগুলো জানার পর উৎসাহ দেয়, এবং অবশ্যই ভালোবাসাও দেয়।
হ্যালো আমাকে শুধু শিখিয়েছে না, দিয়েছে বড় সুযোগ। একজন আদিবাসী শিশু হিসেবে আমি জাতীয় সংসদ ভবনে সংসদ সদস্যদের সঙ্গে জাতীয় বাজেট নিয়ে আলোচনায় অংশ নিয়েছি। ইউনিসেফ আয়োজিত সেই অনুষ্ঠানে পাহাড়ের শিশুদের অধিকার আর সমস্যা নিয়ে কথা বলেছি।
সেই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের পর আমার পরিচিতরা খুবই প্রশংসা করেছেন। রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারকদের কাছে আমাদের অঞ্চলের কথা তুলে ধরায় তারা বেশ খুশি হয়েছেন।
যে প্ল্যাটফর্ম আমাকে এত উচ্চতায় নিয়ে গেছে, সেই প্রতিষ্ঠানটির জন্মদিন সোমবার। তাই হ্যালোর মাধ্যমেই প্রিয় হ্যালোকে যুগপূর্তির শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৭। জেলা: খাগড়াছড়ি।