নার্সিংয়ে ‘সরাসরি’ শিক্ষক নিয়োগের তাগাদা, ‘অভিজ্ঞদের’ কী হবে?

“বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করে কষ্ট করে কেউ নবম গ্রেডে যাবে, আর কেউ কেউ ধানাই-পানাই করে নবম গ্রেডে চলে যাবে- এটা হতে পারে না,” বলেন অধ্যাপক দেবব্রত বণিক।

শাহরিয়ার নোবেলবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 March 2023, 07:11 PM
Updated : 22 March 2023, 07:11 PM

“পিএইচডি করে আমার কী লাভ হল তাহলে? আমি শুধু নার্সিংই করে যেতাম। নতুন নিয়ম হলে আমার তো আর প্রভাষক হওয়া হবে না। আমি তো উচ্চশিক্ষা নিলাম ইনস্ট্রাক্টর থেকে শিক্ষক হব বলে। নতুন যে নিয়ম করার চেষ্টা হচ্ছে, তাতে দেখা যাবে- আমি যাদের পড়াচ্ছি, তারা প্রভাষক হবে, আর আমি তাদের নিচে পড়ে থাকব। আমার আর প্রমোশন হবে না।”

আক্ষেপ করে বলছিলেন ঢাকার একটি নার্সিং কলেজের এক ইনস্ট্রাকটর। সরকারি চাকরি করেন বলে নাম পরিচয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করতে চাইলেন না। জানালেন, নার্সিংয়ে চার বছরের ডিপ্লোমা করে এ পেশায় এসেছিলেন তিনি। পরে দুই বছরে বিএসসি এবং আরও দুই বছরে মাস্টার্স করেন। নার্সিং কলেজের প্রভাষক নিয়োগে অগ্রাধিকার পেতে থাইল্যান্ড থেকে করেছেন পিএইচডি, লেগেছে প্রায় পাঁচ বছর।

কর্মজীবনে এসে ৯ বছর পড়াশোনা করার পর যখন স্বপ্ন পূরণের কাছাকাছি বলে ভাবছেন এই ইনস্ট্রাক্টর, ঠিক তখনই তার কপালে ভাঁজ পড়েছে পদোন্নতির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধের ‘উদ্যোগের’ খবর শুনে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নার্সিং শাখার ২০১৬ সালের নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী নার্সিংয়ে সরাসরি প্রভাষক হওয়ার সুযোগ নেই। নবম গ্রেডে শিক্ষকতা করতে সিনিয়র স্টাফ নার্স/স্টাফ নার্স বা পাবলিক হেলথ নার্স পদে ন্যূনতম ৫ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সেই সঙ্গে পাবলিক হেলথ নার্সিং বা নার্সিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে।

এই বিধিমালা অনুযায়ী সব যোগ্যতাই আছে আক্ষেপ করা পিএইচডিধারী সেই নার্সের। কিন্তু তার স্বপ্নে ভয় ধরাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কিছু নথি, যাতে নার্সিংয়ে সরাসরি প্রভাষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিতে বলা হচ্ছে।

কী সেই নথি

২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বাস্তবায়ন অনুবিভাগ থেকে সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ স্বাক্ষরিত এক পত্রে ঢাকার শের-ই-বাংলা নার্সিং কলেজ ও মানিকগঞ্জ নার্সিং কলেজের জন্য ১৮৮টি পদের বেতন গ্রেড নির্ধারণে সম্মতি দেওয়া হয়। সেখানে ইংরেজি, কম্পিউটার বিভাগের পাশাপাশি নার্সিংয়েও প্রভাষক পদে সরাসরি নিয়োগের কথা বলা হয়।

কিন্তু ২০১৬ সালের নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী ইংরেজি ও কম্পিউটার বিষয়ে সরাসরি নিয়োগের বিধান থাকলেও নার্সিংসহ বেশ কিছু পদ যে পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ হওয়ার কথা- তা অর্থ মন্ত্রণালয়কে স্মরণ করিয়ে দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের উপসচিব শামছুল আলম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বিষয়টি সংশোধনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়।

এক বছর বাদে ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হায়াত মো. ফিরোজ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগকে জানানো হয়, সিনিয়র স্টাফ নার্স ও সমমানের পদে কর্মরতদের পদোন্নতির মাধ্যমে প্রভাষক (নার্সিং) হিসেবে নিয়োগের সুযোগ নেই।

পরের বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি অর্থ বিভাগের বাস্তবায়ন অনুবিভাগ থেকে উপসচিব নাসিমা পারভীন স্বাক্ষরিত আরেক চিঠিতে সরাসরি নিয়োগ দিতে নিয়োগ বিধিমালাতেই সংশোধনী আনতে বলা হয়।

জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, “এটা আমি ফাইল না দেখে বলতে পারব না, তবে আমি এই ব্যাপারে কনসার্ন কর্মকর্তাও না, কারণ আমি বাস্তবায়ন শাখা চারে কর্মরত। হয়ত চারের কোনো কর্মকর্তা না থাকায় আমি স্বাক্ষর করেছি।”

এ বিষয়ে তিনি বাস্তবায়ন শাখা-৩ এর কর্মকর্তা উপসচিব এস এম আবদুল্লাহ আল মামুন সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।

মামুনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “এসব সিদ্ধান্ত অনেক পর্যায় থেকে হয়, কোনো পদের ব্যাপারে প্রস্তাব এলে সংশ্লিষ্ট সব কাগজ দেখে, তাদের নিয়োগবিধি, জনপ্রশাসনের প্রস্তাব, ব্যয় ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রস্তাব-এই সবকিছু মিলিয়েই এই সিদ্ধান্তগুলো হয়।

“অনেক সময় দেখবেন আমাদের নবম গ্রেডের যেসব পদ আছে, সেগুলোতে সরাসরি নিয়োগ থাকে; আবার কোথাও পদোন্নতি থাকে, কোথাও আবার ভাগ করা থাকে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ভিন্ন ভিন্ন পদে ভিন্ন ভিন্ন যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগের শর্ত নির্ধারণ করে থাকে। আরেকটি বিষয় হলো সরকারের উদ্দেশ্য থাকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। দেশে অনেক বেকার, এখন যদি সব জায়গায় যারা আছে- তারাই আসে, তাহলে নতুনরা কোথায় যাবে? তাদের কথাও তো সরকারকে ভাবতে হয়।”

তবে ঠিক কী কারণে নার্সিং প্রভাষক পদে সরাসরি নিয়োগের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা টেলিফোনে জানাতে পারেননি তিন বছর আগের পত্রে সই করা উপসচিব নাসিমা পারভীন। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা তো অনেক আগের নথি, এখন বলা যাবে না। আমাকে দেখে বলতে হবে।” 

এরইমধ্যে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের অভ্যন্তরীণ একটি নথি দেখেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি উপসচিব নাসরিন পারভীন স্বাক্ষরিত ওই পত্রে নার্সিং প্রভাষক পদে সরাসরি নিয়োগের কথা বলা আছে। যোগ্যতা হিসেবে বলা হয়েছে, প্রথম শ্রেণির মাস্টার্স ডিগ্রি অথবা দ্বিতীয় শ্রেণির স্মাতকসহ (সম্মান) দ্বিতীয় শ্রেণির মাস্টার্স ডিগ্রি থাকতে হবে।

উপসচিব নাসরিন পারভীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা পেয়েই আমরা এই নথি দিয়েছি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছিল সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে প্রভাষক হবে, পদোন্নতির মাধ্যমে হবে না। যারা সিনিয়র নার্স বা স্টাফ নার্স আছেন, তাদের অন্য জায়গায় পদোন্নতির সুযোগ থাকছে। তারপরও এটা ফাইনাল না।

“অর্থ মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিয়েছে বলে- আমরা দিয়েছি। আমরাও (সরাসরি নিয়োগ) চাচ্ছি না, সেই ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়কে আমরা চিঠিও দিয়েছি। আমরা বলছি আমাদের মন্ত্রণালয়েরও এখানে ব্যাপার আছে, তার জন্যই আমরা চিঠি চালাচালি করছি। অন্তত ৫০ শতাংশ পদোন্নতি আর ৫০ শতাংশ সরাসরি এমনটা হোক।“   

উচ্চশিক্ষা নেওয়া অভিজ্ঞ নার্সরা দিশেহারা

সরাসরি নিয়োগ পদ্ধতি চালু হলে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমার কারণে উচ্চশিক্ষা নেওয়া অভিজ্ঞ কোনো নার্স আবেদনই করতে পারবেন না বলে মনে করছেন তারা।

পিএইচডি সম্পন্ন করা ওই নার্স বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সারাদেশে তার মত এমন পিএইচডি ডিগ্রিধারী নার্স আছেন ৪১ জন, মাস্টার্স ডিগ্রিধারী আছেন প্রায় তিন হাজার আর বিএসসি ডিগ্রি নিয়েছেন প্রায় ১০ হাজার।

উচ্চশিক্ষাধারী নার্সদের হিসাব টেনে তিনি বলেন, “আমার মত এমন প্রায় হাজারখানেক নার্স ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে বিভিন্ন নার্সিং কলেজে কর্মরত আছেন। যারা সবাই সিনিয়র স্টাফ নার্স পদমর্যাদার এবং দশম গ্রেডে আছেন। এতদিন নার্সিং কলেজে প্রভাষক পদে পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগের যে বিধিমালা ছিল, তাতে আমাদের পদোন্নতি পেয়ে ওই পদে নবম গ্রেডে যাওয়ার সুযোগ ছিল। এই নতুন নিয়মের ফলে যারা নার্সিং শিক্ষা দেয় তাদের নার্সিং শিক্ষকতায় আর উপরে যাওয়ার সুযোগ থাকবে না।”

এই ইনস্ট্রাক্টরের ভাষ্য, “অর্থ মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ বিধি পরিবর্তনের এই চিন্তা ও প্রক্রিয়া অযৌক্তিক। এসব নথির মাধ্যমে ২০১৬ এর নিয়োগ বিধিমালা পালটে ফেলার চেষ্টা চলছে। সরাসরি নিয়োগের ফলে প্রভাষক পদে আমার যে স্টুডেন্টরা আছে, তারা এসে নিয়োগ পাবে।

“আমরা সেখানে পড়াব, কিন্তু আমাদের আর পদোন্নতি হবে না, আমি যাদের পড়াব তারা এসে আমার উপরে বসবে, আমাদের তাদের অধীনে কাজ করতে হবে। এটা অনেকের জন্য বিব্রতকর, কাজ ও উচ্চশিক্ষার প্রতি অনাগ্রহ চলে আসবে।”

নার্সিং প্রভাষক পদে সরাসরি নিয়োগ শুরু হলে বেসরকারি নার্সিং শিক্ষার ‘বাণিজ্যিকীকরণ’ হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যখন নার্সিংয়ে পাস করে সরাসরি প্রভাষক পদে প্রথম শ্রেণির পদে নিয়োগ পাওয়া যাবে, তখন ডিমান্ড বেড়ে যাবে। এটা বাণিজ্যিক আকার পাবে।

“সরকারিতেই (কলেজ) তো পর্যাপ্ত শিক্ষক-লাইব্রেরি নই। বেসরকারিতে কী হবে তা তো ধারণাই করা যায়। তারা শিক্ষার্থী নেবে আর সার্টিফিকেট দেবে। সেসব সার্টিফিকেটধারী এসে সরকারি কলেজের শিক্ষক হবে। তাতে অদক্ষ লোক তৈরি হবে, সেবার মান কমবে।”

নার্সিং পেশায় তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক দুই ধরনের জ্ঞানের প্রয়োজন আছে মন্তব্য করে এক সিনিয়র নার্স বলেন, “যারা পড়াবেন, তাদের যদি নার্সিংয়ের কোনো অভিজ্ঞতা না থাকে, তাহলে তিনি বাস্তবতার সাথে তত্ত্বের মিল রেখে পড়াতে পারবেন না।

“একজনকে ডাক্তার হলে বা পড়াতে হলেও তো ইন্টার্ন করতে হয়। কিন্তু এই বিধিমালায় (প্রস্তাবিত) তো বাস্তব জ্ঞানের কোনো জায়গাই নেই।”

খাত সংশ্লিষ্টরা যা বলছেন

বর্তমানে স্নাতক শেষ করা শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ মনে করেন, নার্সিংয়ে সেবা দিয়ে অভিজ্ঞ হয়ে তারপর শিক্ষকতায় আসা উচিত। আবার কেউ কেউ বলছেন, পড়াশোনা চলাকালে তারা মাঠপর্যায়ের জ্ঞান নেন, ফলে সরাসরি প্রভাষক নেওয়াই ভালো।

একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নার্সিং বিভাগ থেকে ২০২২ সালে স্নাতক শেষ করে নার্স লাইসেন্স পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে থাকা লতা আক্তার বললেন, “অবশ্যই চার বছরের স্নাতক শেষ করার পর, মাস্টার্স লাগবে, এসবের পর অবশ্যই তার অন্তত দুই বছরের হাসপাতালে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা উচিত। মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা ছাড়া কারও নার্সিংয়ের কোনো বিষয় পড়ানো (শিক্ষকতা) উচিত না।“

তবে ময়মনসিংহ নার্সিং কলেজ থেকে স্নাতক পাস করা খাইবার হোসাইন আকাশ বলেন, “আমরা যারা বিএসসি-মাস্টার্স করছি- তারা দেখা যায়, বিএসসিতে চার বছরের ক্লিনিক্যাল অভিজ্ঞতা অর্জন করে, ছয় মাসের ইন্টার্নশিপ করে, মাস্টার্সের দুই বছরেও তারা এনজিও বা হাসপাতালে মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা নেয়। সেক্ষেত্রে নার্সিংয়ে যোগ দিয়ে পাঁচ বছর কাজ করে প্রভাষক হতে হবে, আমি এর পক্ষপাতী না।

“বিএসসি-মাস্টার্স করতে করতেই ৬-৭ বছরে ক্লিনিক্যাল অভিজ্ঞতা হয়ে যায়। সরাসরি নিয়োগের এই পদ্ধতিই ভালো, কিন্তু আমার চাওয়া নার্সিং কলেজে নার্সরাই আসুক।”

তবে সরাসরি নিয়োগের কিছু ক্ষেত্রে আপত্তি আছে আকাশেরও। তার কথায়, “সরাসরি নিয়োগে ইংরেজি, কম্পিউটারের মতো বিষয় আছে, এগুলোতে সরাসরি নিয়োগ দিতে গেলে সেখানে নার্সিং কলেজে না পড়া বাইরের অনেকেও আসতে পারছে। তারা একটা সময় দেখা যাবে নার্সিংয়ের প্রিন্সিপাল হচ্ছেন, তখন একটা বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে।”

বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব জামাল উদ্দিন বাদশা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা এ বিষয়ে এর আগে কথা বলেছি, আমাদের যারা যোগ্যতাসম্পন্ন আছে- তাদের থেকে এই পদগুলো দিতে হবে। এখন মন্ত্রণালয় এখানে সরাসরি নিয়োগের কথা বলছে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমরা যারা স্টেকহোল্ডার আছি- তাদের নিয়ে একটি সভা হওয়ার কথা ছিল।

“কিন্তু আমাদের সাথে আলোচনা না করে তারা এই সিদ্ধান্ত দিয়েছে। আমাদের নার্সিংয়ে এখন নতুন ডিজি এসেছেন, তার সাথে আলোচনার কথা আছে, সেই আলোচনায় আমরা কীভাবে- কী হবে তা ঠিক করব।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নার্সিং ও মেডিক্যাল টেকনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বণিক বলেন, “যারা পদোন্নতির মাধ্যমে প্রভাষক হবে, তাদের বিএসসি থাকতে হবে; পাঁচ বছর চাকরি করতে হবে। আর যাদের সরাসরি নিয়োগ দেবে, তাদের অভিজ্ঞতা থাকার দরকার আছে। তাদের এমএসসি থাকতে হবে।

“আবার যারা এখন চাকরি করছেন, এমএসসি করেছেন সরাসরি নিলে তারা কী করবে, তারা কি পদোন্নতি নেবে না? অভিজ্ঞতাধারীদের নবম গ্রেডে নিয়োগ কম হতে পারে, তবে একেবারেই অভিজ্ঞতা তুলে দেওয়াটা মানা যায় না।”

দেশের সরকারি নার্সিং কলেজ থেকে নার্সিং এবং পাবলিক হেলথে বিএসসি ডিগ্রি নেওয়ার সুযোগ আছে, কোথাও কোথাও মাস্টার্সও করা যায়। আর সরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউট থেকে নেওয়া যায় ডিপ্লোমা ডিগ্রি। এর বাইরে বেসরকারি ইনস্টিটিউট, মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিপ্লোমা, বিএসসি ও মাস্টার্স পর্যায়ে পড়াশোনা করা যায়। তবে বেসরকারি বিপুল সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের মান নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন।

অধ্যাপক দেবব্রত বণিক বলেন, “এখানে নানা জায়গায় নার্সিং কলেজ খুলে রেখেছে, সেখানে কিছুই নেই, ভালো শিক্ষক নেই, কারিকুলাম নেই।

“বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করে কষ্ট করে কেউ নবম গ্রেডে যাবে, আর কেউ কেউ ধানাই-পানাই করে নবম গ্রেডে চলে যাবে- এটা হতে পারে না।”

কেবল সরাসরি নিয়োগ পদ্ধতি চালু হলে এ খাতে কর্মরতদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেলিন চৌধুরী।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এমনিতেই চিকিৎসাখাতে নার্সিংয়ের জায়গাটিতে লোকবল বাড়েনি, কাঠামোটি দৃঢ় নয়। এখানে আবার প্রচলিত নিয়মের বাইরে গিয়ে নতুন কিছু করতে চাইলে, সেখানে যদি খাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়ায়- তাহলে যারা কাজ করবেন, তাদের মধ্যে উষ্ণ সম্পর্ক তৈরি হবে না।

“যার ফলে শেষমেষ আমাদের চিকিৎসাখাতই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যিনি শিক্ষা দেবেন, তার অবশ্যই অভিজ্ঞতার দরকার আছে। শুধু তত্ত্বীয় জ্ঞান দিয়ে নার্সিং পড়ানো যুক্তিযুক্ত নয়।”

কর্তাব্যক্তিদের কী ভাষ্য?

নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সহকারী পরিচালক (শিক্ষা) মোছাম্মৎ সুরাইয়া জেবীন বলেন, “নিয়োগ হলে ২০১৬ সালের নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী পদোন্নতির মাধ্যমেই নিয়োগ হতে হবে। এখানে সরাসরি নিয়োগের প্রশ্নই আসে না।”

যোগাযোগ করা হলে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অতিরিক্ত সচিব মাকসুরা বলেন, “এখানে ফিফটি-ফিফটি হওয়াই ভালো। যারা অভিজ্ঞ ডিগ্রিধারী তাদের অভিজ্ঞতাকে আমাদের যেমন কাজে লাগাতে হবে, ঠিক তেমনি নতুন যারা মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী বের হচ্ছে তাদেরও আমাদের সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু এখনও সরাসরি নিয়োগ সংক্রান্ত কিছু বাস্তবায়ন হয়নি। নিয়োগ আগের প্রক্রিয়াতেই হচ্ছে।”