চিকিৎসা নিতে কেন এত মানুষ বিদেশে যায়, প্রশ্ন পরিকল্পনামন্ত্রীর

“আমি এমনও মানুষ দেখেছি, জমি-ভিটা বিক্রি করে, স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে, জীবনের শেষ সময়ে বিদেশ যাচ্ছে,” বলেন মন্ত্রী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2022, 11:30 AM
Updated : 30 Sept 2022, 11:30 AM

বাংলাদেশে ‘অনেক ভালো ও নামকরা’ চিকিৎসক থাকার পরও প্রতি বছর এত মানুষ কেন চিকিৎসা নিতে বিদেশ যায়, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

বিদেশে যাওয়া আসার সময় বিমানে যত বাংলাদেশি যাত্রী দেখা যায়, তাদের বেশিরভাগই চিকিৎসার জন্য যাতায়াত করে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, কোথাও একটি গলদ নিশ্চয় আছে।

শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে মেডিকেল অনকোলজি সোসাইটি ইন বাংলাদেশ (এমওএসবি) আয়োজিত ‘ঢাকা ক্যানসার সামিট-২০২২’ অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন মন্ত্রী।

তিনি বলেন, “হাজারে হাজারে আমাদের নাগরিকেরা চারপাশের দেশে যাচ্ছে। চেন্নাই, আগে নাম ছিলো মাদ্রাজ। দৈনিক ফ্লাইট যায়, প্যাকড, ভর্তি প্যাসেঞ্জার্স। দুই দিকে। যায়ও আমাদের লোক, আসেও আমাদের লোক। ব্যাংককেও তাই। যায়ও আমাদের লোক, আসেও আমাদের লোক। ব্যাঙ্গালোরেও।

“এবং বেশিরভাগ, ৮০% এর বেশি, আমাদের যারা চিকিৎসার জন্য যায়। আমাদের এত ভালো ভালো, বিখ্যাত, সুপরিচিত, পণ্ডিত, গবেষক, চিকিৎসক আছেন; তাহলে কোথাও নিশ্চয় একটা ফাঁক আছে।”

তরুণরা পড়ালেখার জন্য বা অন্য প্রয়োজনে বিদেশে যাবে, কিন্তু দেশে ‘সবরকম চিকিৎসা সুবিধা থাকার পরও’ প্রতিদিন এত মানুষ কেন চিকিৎসা নিতে বিদেশে যাবে সেই হিসাব মেলাতে পারছেন না মন্ত্রী।

“আমি যখন ঢাকার রাস্তায় বের হই, বিভিন্ন ধরনের ইন্সটিটিউট (চিকিৎসা কেন্দ্র) দেখি। এগুলো ৪০-৫০ বছর আগেও কিন্তু ছিল না। অথচ হাজারে হাজারে আমাদের নাগরিকেরা চারপাশের বিভিন্ন দেশে (চিকিৎসার জন্য) যাচ্ছে।”

মান্নান বলেন, মানুষের আয় বাড়লে সুযোগ বাড়ে, সেটা স্বাভাবিক।কিন্তু এমন মানুষও তিনি দেখেছেন, জমি-ভিটা বিক্রি করে, স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে, জীবনের শেষ সময়ে বিদেশ যাচ্ছে।

“এই বিষয়টা কেন, কোন জায়গায় আমাদের ঘাটতি? মানুষ যাবে, অবশ্যই যাবে। আমি যাওয়ার বিরুদ্ধে নই। কিন্তু কেন প্রতিনিয়ত মাদ্রাজে, ব্যাংককে, দিল্লিতে বিমান ভরে ভরে চিকিৎসার জন্য যাওয়া-আসা করবে? এখানে নিশ্চয় কোনো একটা বিষয় আছে।”

চিকিৎসকদের গবেষণায় আরও মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ঘাটতিগুলি খুঁজে বের করার তাগিদ দেন পরিকল্পনা মন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আপনারা দেখবেন, সেই ঘাটতি পূরণে আমাদের প্রধানমন্ত্রী কী করতে পারেন। কারণ তিনি করতে চান। আমি প্রতিনিয়ত তার সাথে কাজ করে দেখেছি, প্রতিটি জিনিসে তিনি স্বকীয় একটা অবস্থা চান। আমাদের এখানে গবেষণা হচ্ছে না, যার কারণে প্রধানমন্ত্রীও অনেকটা ক্ষুব্ধ। চিকিৎসকদের অন্যতম প্রধান কাজ গবেষণা। এর জন্য বিনিয়োগের প্রয়োজন হলে সরকার তা দেবে।”

কমিউনিটি হাসপাতালের সেবার মানোন্নয়নের কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ২৫-৩০ ধরনের ওষুধ এখন বিনামূল্যে দেওয়া হয়। সে কারণে গ্রামের মানুষ “হাসিমুখে ডাক্তারের কাছে সেবা নিতে আসেন এবং হাসিমুখে ফিরে যান”। তবে সব জায়গায় এখনও উন্নত চিকিৎসা পৌঁছেনি।

“আমার বিশ্বাস, ধীরে ধীরে যেভাবে আমরা সড়ক সেতু নির্মাণ করছি, বাতি দিচ্ছি, আমাদের আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের যে সুযোগ এসেছে, ২০৪০-৪১ সালে আমরা উন্নত রাষ্ট্রে যাব এবং গ্রামেও উন্নত চিকিৎসা পৌঁছাবে। তবে তার জন্য প্রয়োজন মাথা ঠাণ্ডা রেখে পরিশ্রম করা।”

‘ক্যানসারের প্রকোপ বেড়েছে’

ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. স্বপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যয় বলেন, গ্রাম-উপজেলা পর্যায়ে ক্যানসারের চিকিৎসা না থাকায় রোগীরা ঢাকামুখী হচ্ছে। আর যাদের সামর্থ্য আছে, তারা পাশের দেশগুলোতে বেশি যাচ্ছে।

“সাম্প্রতিক সময়ে ক্যান্সারের প্রকোপ বেড়েছে। গ্রামাঞ্চলে মুখের ক্যানসারসহ নানা ক্যানসারের রোগী দেখা যাচ্ছে। মানুষ বুঝতে পারে না কোথায় যাবে, কী করবে। এ জন্য বেশিরভাগ রোগী ঢাকামুখী হন। বিশেষ করে জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। স্থানীয় পর্যায়ে স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা থাকলে এটা কমিয়ে আনা সম্ভব।”

দেশে ভালো ল্যাবরেটরি প্রয়োজন জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, কখনও কখনও এমন হয় যে তারা (রোগী) এখানকার রিপোর্ট নিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসা করাতে গেছেন এবং পরে সেই রিপোর্টের জন্য আমাদের সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়। ভালো চিকিৎসকের পাশাপাশি ভালো মানের ল্যাবরেটরি সাপোর্টও দরকার।

“আমাদের কমন ধারণা, এটা (ক্যান্সার) শুধু বয়স্কদের হয়। কিন্তু না, কম বয়সীরাও আক্রান্ত হচ্ছে। এজন্য ডায়াগনোসিস বাড়ানোর বিকল্প নেই। ক্যানসার নির্ণয়ে ডায়াগনোসিস সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সংকট, আমাদের অবকাঠামো এখনও দুর্বল। কার্ডিয়াক অবস্থা অনেকটা ভালো। কিন্তু ক্যানসারে এখনও পিছিয়ে আমরা।”

দেশে ক্যানসার চিকিৎসায় রোডম্যাপ প্রয়োজন মন্তব্য করে তিনি বলেন, আগামী ৫ থেকে ১০ বছরে ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমরা আমাদের দেশকে কোন পর্যায়ে দেখতে চাই, তার জন্য একটি রোডম্যাপ ও সদিচ্ছা থাকা দরকার। আমাদের দেশ থেকে কোনো রোগী বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাবে না, সেটাই আমাদের প্রত্যয় হওয়া উচিত।”