“মশা যখন কামড়াবে তখন কে মেয়র, কে কাউন্সিলর, কারা বিশেষজ্ঞ এসব কিছুই দেখবে না”, বলেন ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম।
Published : 05 Feb 2024, 07:20 PM
ঢাকায় ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এইডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ৬ ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে বলে জানিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।
সোমবার গুলশানে ডিএনসিসি নগরভবনে ডেঙ্গু মোকাবিলায় প্রস্তুতি ও করণীয় বিষয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকে এই বিষয়টি তুলে ধরে নগর সংস্থাটি।
ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস চৌধুরী লিখিত বক্তব্যে বলেন, “অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জনসচেতনতা ও জনসম্পৃক্ততার ঘাটতি, নির্মাণাধীন ভবনে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের জ্ঞানের অভাব ও অসহযোগিতা, পরিত্যক্ত ও অপরিকল্পিত ছাদবাগান, বাড়ির বেইজমেন্টের পার্কিংয়ে জমাকৃত পানি এবং ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সংখ্যার তথ্যে অপ্রতুলতা এইডিস মশা নিয়ন্ত্রণে চ্যালেঞ্জ।”
মেয়র আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে এই সভায় সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং সাংবাদিকরা অংশ নেন।
মেয়র বলেন, “ডেঙ্গু মোকাবিলা করা একটি চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সবাই একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এজন্য ডিএনসিসি সবাইকে ডেকেছে। সবার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে কীভাবে এইডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা যায় তার প্রস্তুতি নেওয়া হবে।”
“মশা যখন কামড়াবে তখন কে মেয়র, কে কাউন্সিলর, কারা বিশেষজ্ঞ এসব কিছুই দেখবে না” মন্তব্য করে তিনি বলেন, “মশা নিধনে আমরা কী করছি, এগুলো ঠিক আছে কি না, আর কী কী করা যায় সেই সম্পর্কে আপনাদের জানাব।
“আমাদের প্রস্তুতিগুলো জানাব। সেই সঙ্গে আপনাদের কাছ থেকে পরামর্শগুলো শুনব। আর কী কী করা যায়, তার গাইডলাইন আপনারাও আমাদের জানাবেন। সব মিলিয়ে আমরা একটা সিদ্ধান্ত নেব।”
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বেনজির আহমেদ বলেন, “মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু এর লক্ষ্য, উদ্দেশ্য নেই, অভাব রয়েছে কীটতাত্ত্বিক সক্ষমতার এবং প্রশিক্ষিত লোকের।
“তাই এখন থেকেই কীটতাত্ত্বিক সক্ষমতার প্রশিক্ষণ দিয়ে কীটতত্ত্ববিদ বাড়ানো প্রয়োজন। মশা নিয়ন্ত্রণে একটি কারিগরি কমিটি, ওয়ার্ডভিত্তিক ডেঙ্গু জরিপ করতে হবে। ল্যাব বাড়াতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, “এই মুহূর্তে ডেঙ্গুর টিকা আসার কোনো সম্ভাবনা নাই। কাজেই ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা এবং মশা নিধনের কোনো বিকল্প নেই।
“এরই মধ্যে অনেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। দ্বিতীয়বার বা তৃতীয়বার আক্রান্ত হলে রোগীর অবস্থা খারাপ হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। কাজেই ঘরে ঘরে গিয়ে মশা মারা সম্ভব না। দায়িত্ব সবাইকে নিতে হবে।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং ডিএনসিসি মেয়রের উপদেষ্টা অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, “এইডিস মশার সঙ্গে কিউলেক্স মশাকে মেলালে হবে না, দুটো মশাকে আলাদা করে তা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে হবে।
“এখন ৯৯ শতাংশ কিউলেক্স মশা, এটা পাবলিক নুইসেন্স তৈরি করে, আর এক ভাগ এইডিস মশা পাবলিক হেলথ সমস্যা তৈরি করে। আর ৪৩ শতাংশ এইডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে বহুতল ভবনের বেসমেন্টে। সেখানে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা প্রবেশ করতে পারে না, সেখানে জনগণ দায়িত্ব নেবে।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে ২০২৪ সালে সোমবার পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ১৩২ জন রোগী, মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২০০০ সাল থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর তথ্য রাখে। এর মধ্যে ২০২৩ সালেই সবচেয়ে বেশি ৩ লাখ ২১ হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৭০৫ জন মারা যায় গত বছর।
এ বছর জানুয়ারিতে যত রোগী পাওয়া গেছে, অতীতে এই সময় এত রোগী এবং মৃত্যু দেখা যায়নি।