“স্বাস্থ্যখাত অবাধ বাণিজ্যের জায়গা না, সীমারেখার মাঝে থাকা উচিৎ,” বলেন আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন।
Published : 17 Aug 2023, 09:26 AM
“কী যে করে বুঝি না। খালি ব্লাড নেয়, আর স্যালাইন চলে। ওষুধ তো আমরা কিনে আনি। ওরা দুই-একটা যা দেয়, সেটার দাম রিলিজের সময় দেওয়া লাগবে। এখানে ডেইলি বেড ভাড়া ১১০০ টাকা। তারপর এই যে নার্স আসে, দুইবেলা ডাক্তার আসে, এই সার্ভিসগুলার চার্জ আছে।”
স্কুল পড়ুয়া ছেলে জুবায়েরের ডেঙ্গু চিকিৎসার খরচা নিয়ে বলছিলেন আফতাবনগরের বাসিন্দা মর্জিনা বেগম।
ঢাকার মগবাজারের হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সোমবার যখন তার সঙ্গে আলাপ হচ্ছিল, তখন জুবায়েরের শারীরিক অবস্থার খানিকটা উন্নতি হয়েছে।
পাঁচ দিন আগে অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া এ কিশোরকে বেসরকারি হাসপাতালটিতে ভর্তি করা হয়েছিল। চতুর্থ দিনে এসে ছেলে কিছুটা সুস্থ হলেও হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে অসন্তুষ্ট মর্জিনা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “গতকাল (রোববার) ওদেরকে বিল জিজ্ঞেস করছি। ওরা বললো তিন দিনে সাড়ে ১৫ হাজার টাকা বিল আসছে। বিল যে এইরকম হবে, সেটা জেনে বুঝেই আমরা আসছি।
“কিন্তু এত টাকা খরচ করার পরও এখানে নার্সদের ব্যবহার ভালো না। বিশেষ করে রাত্রে যারা ডিউটি করে, তাদের সাথে কথা বললে বিরক্তিবোধ করে। কিন্তু এখানে চাকরি তো তারা স্বেচ্ছায় করতে আসছে, তাহলে সেবা কেন দেবে না?”
জুবায়েরের বোন হাবিবা যোগ করেন, “তারা যে সেবাটা দিচ্ছে, তার জন্য পেমেন্টও তো পাচ্ছে। আর এখানের পেমেন্ট তো অন্যান্য জায়গার চেয়ে ডাবল। আর মশা এখানে অনেক।”
চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রকোপের মধ্যে রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকারি হাসপাতালগুলো। আসন না পাওয়া, হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দেওয়া কিংবা পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা না থাকার কারণে বেসরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেতে ‘বাধ্য হচ্ছেন’ ডেঙ্গু আক্রান্তদের অনেকেই।
আর সেখানকার সেবার ‘উচ্চ মূল্যের’ কারণে বিপুল সংখ্যক পরিবার আর্থিকভাবে চাপের মুখে পড়েছে, ধারদেনা করতে হচ্ছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষদের।
এইডিস মশাবাহিত রোগটি নিয়ে এবার মৃত্যুঝুঁকি বাড়ার খবরে প্রিয়জনকে সুস্থ ফিরে পেতে মোটা অঙ্কের খরচ গুনতে বাধ্য হওয়ার কথা জানাচ্ছেন রোগীর স্বজনরা।
ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকায় আক্রান্ত রোগীদের পরিবারে খরচের বোঝা বাড়ছে। যারা হাসপাতালে আসছেন তাদের তো বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। আবার যারা ডেঙ্গু নিয়ে বাসায় থাকছেন তাদেরও পরীক্ষা ও চিকিৎসক দেখানোসহ নানান বাড়তি খরচে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এসময়ে হিমশিম খাচ্ছেন সীমিত আয়ের মানুষ।
হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে মায়ের হাতে ভাত খাচ্ছিলেন ডেঙ্গু আক্রান্ত মাহমুদুল হাসান শাকিল। পেশায় গ্রাফিক ডিজাইনার শাকিল এর আগে ভর্তি ছিলেন ঢাকার মুগদা হাসপাতালে। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসার মান ও হাসপাতালের পরিবেশ মনঃপুত না হওয়ায় এক রাতের ব্যবধানে তাকে হলি ফ্যামিলিতে নিয়ে আসেন মা রাশিদা আক্তার।
তিনি বলছিলেন, “এখানে বেড ভাড়াই ৯০০ করে। সব ওষুধ কিনতে হচ্ছে। কিন্তু তার পরও আমরা ওকে প্রাইভেটে নিয়ে আসছি। কারণ এখানে খরচ পড়লে পড়ুক, সবার আগে আমার ছেলেটার সুস্থ হওয়া দরকার। ওর জ্বর আসছে আরও সাত দিন আগে, তখন ভাবছিলাম নরমাল জ্বর। কিন্তু তিন দিন আগে হঠাৎ বমি। তারপর খিদমাহতে নিয়ে ডেঙ্গু টেস্ট করলাম, টেস্টে পজেটিভ এল। প্লাটিলেট দেখাল ১৪ হাজার।
“সেখান থেকে ওরা বলছে যে তাড়াতাড়ি বড় কোনো হাসপাতালে ভর্তি করেন, কারণ ওর আইসিইউ লাগতে পারে। তারপরই তাড়াহুড়া করে মুগদায় নিয়ে গেলাম। ওখানে সিট পাইলেও অবস্থার কোনো পরিবর্তন হচ্ছিল না। সেজন্য প্রাইভেটে নিয়ে আসছি।”
রোগীদের অভিযোগের বিষয়ে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের ডেপুটি ডিরেক্টর (প্রশাসন) ডা. রুমানা নাজনীন বলেন, “যেকোনো প্যান্ডেমিকের সময় রোগীর চাপে নার্সরাও ওভার স্ট্রেসড হয়। এখানে অনেক সিস্টার আছেন, যারা জ্বর গায়ে প্যারাসিটামল খেয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন। সবাই তো মানুষ।
“আর যারা সরকারিতে সেবা নেয়, তারা ভাবে এটা ফ্রি অব কস্ট। কিন্তু ওখানেও কিন্তু অনেক খরচ আছে, ওষুধ কিনতে হয়, দালাল আছে। আর প্রাইভেটে ঢুকলে রোগীরা মনে করে, আমি যদি ৫ টাকা দেই, আমি ভিভিআইপি ট্রিটমেন্ট পাব। তাদের বুঝতে হবে, সবকিছুর সীমাবদ্ধতা আছে।”
তিনি জানান, এখন পর্যন্ত হাসপাতালটিতে সেবা নিয়েছেন ১৪০৮ জন ডেঙ্গু রোগী। এর মধ্যে মারা গেছেন তিনজন।
কোথায় কেমন খরচ
দক্ষিণ বনশ্রীর বাসিন্দা মজিবুর রহমান খান ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ৬ জুলাই ভর্তি হন ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের সিরাজ-খালেদা মেমোরিয়াল হাসপাতালে। এ হাসপাতালের কেবিনে আট দিন থাকার পর তার বিল আসে ২০ হাজার টাকা।
ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের চাকুরে এ রোগীর ছেলে তৌকির আহমেদ বলছিলেন, “ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডে যারা চাকরি করেন, তাদের জন্য এখানে চিকিৎসা খরচ অর্ধেক। এখানে ভর্তি করলে ভালো ট্রিটমেন্টের পাশাপাশি খরচও অর্ধেক হবে।
“সেজন্যই বনশ্রীর দিকে কোথাও ভর্তি না করে এখানে ভর্তি করাইছি আব্বুকে। এই স্পেশাল সুবিধা থাকায় আমাদের মোট ৩০,০০০ টাকা গেছে, সাধারণ রোগীদের ক্ষেত্রে খরচ দ্বিগুণ হয়।”
মোহাম্মদপুরের আল-মানার হাসপাতালে গত ২৯ জুলাই ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন সদ্য বিবাহিত ইশরাত জাহান সায়মা। এ হাসপাতালে তিন দিনে তার জন্য গুনতে হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা।
“আমি কেবিনে ছিলাম। এই ৩৫ হাজার টাকা শুধু হসপিটাল চার্জ। এর বাইরে আবার মেডিসিন খরচ আছে। এই তিন দিনে সবমিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা চলে গেছে।”
সাধারণভাবে বাসাতে থেকেই ডেঙ্গুর চিকিৎসা সম্ভব। কোন পরিস্থিতিতে বেসরকারি হাসপাতালে যেতে হয়েছিল তার বর্ণনা দিচ্ছিলেন সায়মা।
“ডেঙ্গু ধরা পড়ার পর আমি প্রথম তিন দিন বাসাতেই ছিলাম, ভেবেছিলাম যে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আমার প্লাটিলেট যখন এক লাখের নিচে নামতে শুরু করল, তখন ভর্তির সিদ্ধান্ত নিলাম।
“আমি সরকারি সব হাসপাতালে খোঁজ নিয়েছি, কোথাও সিট ছিল না। এমনকি ইবনে সিনা, পপুলার ও ল্যাবএইডেও খোঁজ নিয়েছি, কোথাও পাইনি। মহাখালীর একটা হাসপাতালে সিট ছিল, কিন্তু সেটা আমার বাসা থেকে দূরে হওয়ায় সেখানে আর ভর্তি হইনি।”
মোটা অঙ্কের টাকা গুনতে হলেও বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসাও যে সন্তোষজনক নয় সেই সংকটেরও কথা বললেন তিনি।
“প্রথম দুই দিন ভালো সেবা পাইনি, মাঝামাঝি ছিল। হিউজ পেশেন্ট ছিল আসলে। তবে শেষ দিন ওদের (অথরিটি) সাথে ওদের সার্ভিস নিয়ে সামান্য কথা কাটাকাটি হওয়ার পর ভালো সেবা পেয়েছি।”
আপাতত সুস্থ হলেও পরিবারের হঠাৎ এ খরচ সামলে উঠতে সময় লাগবে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমার দুই বছর আগে একবার ডেঙ্গু হয়েছিল, তখন বাসায়ই ছিলাম। আমার কোভিডও হয়েছিল। কিন্তু কোনোবারই এতটা কষ্ট পাইনি আমি- যতটা এবারের ডেঙ্গুতে পেয়েছি। তবে আপাতত সুস্থ হয়েছি, কিন্তু এই সময়ে হুট করে এতটা খরচ সামলে উঠতে সময় লাগবে কিছুটা।”
গত মাসের শেষে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্রথমে শাহজাহানপুরে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সাংবাদিক শেখ আবদুল্লাহ। পরে তাকে শাহবাগের বারডেমে স্থানান্তর করা হয়। দুই হাসপাতাল মিলিয়ে পাঁচ দিনে তার খরচ হয়েছে ৬৭ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, “ডেঙ্গু হওয়ার পর প্রথম তিন দিন আমি ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ছিলাম। এই সময় আমার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় চার ব্যাগ রক্ত লাগে, হাসপাতাল থেকেই সেটা দিয়েছিল। তো সবমিলিয়ে এই তিন দিনে আমার বিল আসে ২৫ হাজার টাকা।
“কিন্তু তিন দিনেও সুস্থ না হলে ওরা আমায় বলে, আইসিইউ আছে- এমন কোথাও শিফট করতে। তখন বারডেমে আইসিইউ পাই। আইসিইউতে ৩০ ঘণ্টা ছিলাম আমি, শুধু এখানেই খরচ গেছে ৩৪ হাজার ৭০০ টাকা। পরদিন একটু সুস্থ হলে ওরা আমায় সাধারণ বেডে ট্রান্সফার করে, সেখানে যায় ৮ হাজার টাকা।”
সেবার মান নিয়ে এই সাংবাদিক বলেন, “যেহেতু আইসিইউতে থাকতে হয়েছে, সেহেতু খরচ বেশি হবেই। কিন্তু যদি সাধারণ সেবার কথা বলি, তবে দুই হাসপাতালের সেবার মানে খুব একটা পার্থক্য নেই। তবে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে একজন সিনিয়র ডাক্তারের কনসালটেন্সি ফি বাবদ আমায় ৪৫০০ (১৫০০ করে প্রতিদিন) টাকা দিতে হয়েছে। এই ফি অনেক বেশি মনে হয়েছে।”
স্বাস্থ্যখাতে ‘অবাধ বাণিজ্য’ ঠেকাবে কে?
“বাংলাদেশের প্রাইভেট হাসপাতালের খরচ সাধারণ মানুষের জন্য এমনিতেই বেশি। কারণ আমাদের চিকিৎসকের ফি, বেড ভাড়া, ওষুধের দাম- সবকিছু বেড়ে গেছে। তার থেকেও বড় কথা, বাংলাদেশে চিকিৎসা খরচটা মানুষের আয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না। আমরা মধ্যবিত্তরা যা আয় করি, বেতন পাই; সেই তুলনায় এই খরচের পরিমাণ অনেক বেশি।
“যারা বেশি আয়ের মানুষ, তাদের ক্ষেত্রে খরচটা ঠিক আছে। কিন্তু তার পরও তো মানুষ অসুস্থ হলে একপ্রকার বাধ্য হয়ে প্রাইভেটে যায়। ঋণ করে হলেও চিকিৎসা খরচ ম্যানেজ করে।”
ডেঙ্গুর কারণে বাড়তি চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে বলছিলেন সাংবাদিক আবদুল্লাহ। তার মতো এত টাকা ব্যয় মেটানো যে সাধারণ মানুষের জন্য কষ্টকর হচ্ছে, সে কথা বলেন আল-মানার হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া সায়মাও।
“চিকিৎসার খরচ দিয়েছে আমার হাজব্যান্ড। ও ঢাকার বাইরে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করে, যেখানে ওর মাসিক বেতন ৩০/৩২ হাজার টাকা। অথচ এই একটা ডেঙ্গুর জন্য এক ধাক্কায় ওর ৫০ হাজার টাকা চলে গেল। এটা বহন করা আমাদের মতো মানুষের জন্য কষ্টকর।”
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, “স্বাস্থ্যখাত হল নাগরিকের জন্য অত্যাবশ্যকীয় খাত। আন্তর্জাতিক ও জাতীয় আইনকানুন পর্যালোচনা করে সরকারের এই খাতের ওপর মনোযোগ দেওয়া উচিত, যাতে এই ব্যবসা বন্ধ হয়।
“ডেঙ্গুর গাইডলাইন অনুসরণ করে চিকিৎসা দিলে এত খরচ হওয়ার কথা না। আর সেটাও যদি বাদ দেই, ডেঙ্গু হল এখন একটা মহামারী। যেকোনো মহামারীর সময় সার্বিক চিকিৎসা ব্যায়ের দায়িত্ব রাষ্ট্রের নেওয়া উচিৎ; সরকারি বা বেসরকারি- সব হাসপাতালের রোগীকে দেখা উচিৎ।
“কোভিডের সময় যেমনটা করছে সরকার। তখন বেসরকারি হাসপাতালের সেবা কিনে নিছে সরকার। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রেও সেটা হতে পারে। বিনামূল্য বা নামমাত্র মূল্যে সেবা দেবে।”
দেশের স্বাস্থ্যখাতের ওপর তেমন নিয়ন্ত্রণ নেই উল্লেখ করে ড. মুশতাক বলেন, “স্বাস্থ্যখাত অবাধ বাণিজ্যের জায়গা না, সীমারেখার মাঝে থাকা উচিৎ। ব্যক্তিগতভাবে আমি স্বাস্থ্যখাত এবং শিক্ষাখাতের ওপর বাণিজ্যের পক্ষেই না। আমাদের এখানে যারা দাতব্য চিকিৎসালয় খুলেছিল- সেটা বাণিজ্যের জন্য না, স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নের জন্য।
“স্বাস্থ্যখাত থেকে ব্যবসা করা যাবে না, এটা অধিকাংশ দেশ অনুসরণ করে। কারণ এটার মনিটর করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু আমাদের এখানে অনেকে ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান খুলে হাসপাতালের নামে অপ্রয়োজনীয় চিকিৎসা, ওষুধ, টেস্ট দিচ্ছে। তবে এটা যে শুধু প্রাইভেটে হচ্ছে- তেমন না; সরকারি হাসপাতালেও অবাধে অনিয়ম চলে।”