প্রতিটি রোগীর জন্য গড়ে সরকারের খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা।
Published : 27 Aug 2023, 09:49 PM
স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় চাপ ফেলা ডেঙ্গুর প্রভাব যে অর্থনীতিতেও পড়ছে, তা বেরিয়ে এল স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের দেওয়া এক হিসাব থেকে।
তিনি জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় সরকার প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। প্রতিটি রোগীর জন্য গড়ে খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা।
রোববার ‘ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় গোলটেবিল বৈঠক’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তিনি খরচের এই হিসাব দেন।
এইডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু দেশে এবার ভয়াবহ রূপ নিয়ে এসেছে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ছাড়িয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ৫ শতাধিক জনের। ভর্তি এবং মৃত্যুর এই সংখ্যাও অতীতের যে কোনো বছরের চেয়ে বেশি।
মতবিনিময় সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, চলতি মৌসুমে এই পর্যন্ত ১ লাখ ১২ হাজার ১৮৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ লাখ ৩ হাজার ৪১১ জন। মারা গেছেন ৫৩৭ জন। এখনও হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৮২৩৬ জন।
হাসপাতালে ভর্তি মোট ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ৭০ শতাংশ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং বাকি ৩০ শতাংশ বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
জাহিদ মালেক বলেন, “সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনামুল্যে ডেঙ্গুর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। প্রতি রোগীর জন্য গড়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। সেই হিসাবে চলতি মৌসুমে সরকার প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে।”
রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সরকার এরই মধ্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি বেঁধে দিয়েছে। সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষার ফি ৫০ টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। বেসরকারিতে লাগছে ৩০০ টাকা।
মন্ত্রী বলেন, “চলতি মৌসুমে ডেঙ্গু রোগী বাড়লেও এখন পর্যন্ত এই রকম হয় নাই যে কেউ বিনা চিকিৎসায় বা চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন। আমরা চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছি।”
স্যালাইন ব্যাগের সঙ্কটের বিষয়ে তিনি বলেন, “স্যালাইন যাতে বেশি করে উৎপাদন হয়, সমস্ত শিল্পকে আমরা সেই বার্তা পৌঁছিয়েছি। প্রয়োজন হলে যাতে বিদেশ থেকে আমদানি হতে পারে সেই নির্দেশনাও আমরা দিয়েছি।”
ডেঙ্গু রোগীর জন্য দ্রুত চিকিৎসার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি চিকিৎসক এবং হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার নির্দেশনাও দেন।
এবছর ডেঙ্গু রোগীদের ৬৫ ভাগ পুরুষ এবং ৩৫ শতাংশ নারী- এই তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, “কিন্তু যারা মারা যাওয়ার চিত্রে উল্টো দেখা যাচ্ছে। যেসব রোগী মারা গেছেন, তাদের মধ্যে প্রায় ৬৫ ভাগ নারী এবং বাকি ৩৫ ভাগ পুরুষ।”
এজন্য নারীদের আক্রান্ত হওয়ার প্রথম দিকে হাসপাতালে না আসাটা কারণ হতে পারে বলে মনে করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
আলোচনায় অংশ নেওয়া সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা ঢাকা শহরে সারা বছর কীটনাশক ছিটানোসহ ডেঙ্গু প্রতিরোধে সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনার পরামর্শ দেন।
স্বাস্থমন্ত্রী বলেন, “কারও একার পক্ষে ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব নয়। তাই আমরা পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের উদ্যোগ নিয়েছি।”
বনানীর শেরাটন হোটেলে এই মতবিনিময় সভয় স্বাস্থ্য সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মো. খুরশিদ আলম উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।