নুরুল ইসলাম হাসিব
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
ঢাকা, অক্টোবর ০৩ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- দেশকে পোলিওমুক্ত করার লক্ষ্য ‘অর্জিত হওয়ায়’ প্রতিবছর পোলিও টিকা দিবস পালন বন্ধ করে দেয়ার কথা ভাবছে সরকার।
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির ইপিআই) তথ্য অনুযায়ী, কেবল ২০০৫ সাল ছাড়া প্রতি বছরই প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে জাতীয় টিকা দিবস (এনআইডি) পালিত হয়ে আসছে।
নিয়মিত টিকা দেওয়ার পরও ২০০৬ সালে দুই হাজার শিশুর দেহে পোলিও সনাক্ত হওয়ায় এই কর্মসূচির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। যেখানে নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচি আওতায় ৯৫ শতাংশ শিশু টিকা নিতে পারে, সেখানে আলাদাভাবে এই পোলিও টিকা খাওয়ানোর কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া উচিৎ কি না তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক এ বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আলোচনা করে আমরা এটা বন্ধ করব।
“যদি প্রয়োজন না হয়, তাহলে এতো ব্যয় করে আমরা এটা চালাব না,” যোগ করেন তিনি।
গ্লোবাল পোলিও ইরাডিকেশন ইনিশিয়েটিভের ওয়েবসাইটে বলা হয়, “পোলিও নির্মূলে সাধারণত তিন থেকে পাঁচ বছর জাতীয় টিকা দিবস কর্মসূচির প্রয়োজন হয়। তবে যেসব দেশে নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচির আওয়তায় কম সংখ্যক শিশুরা আসে, সেখানে আরো বেশি সময় প্রয়োজন।”
পোলিও ইরাডিকেশন ইনিশিয়েটিভ সরকারি-বেসরকারি অংশিদারিত্বে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও), রোটারি ইন্টারন্যাশনাল, ইউএস সিডিসি ও ইউনিসেফের নির্দেশনায় পরিচালিত একটি সংস্থা।
পোলিও টিকা দিবস পালনের আগে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পোলিওমুক্তির সনদ পেতে হলে এ দিবস পালন অব্যাহত রাখতে হবে। প্রতিবেশী ভারত পোলিওমুক্ত হয়নি- এ বিষয়টিও যুক্তি হিসাবে তুলে ধরা হয়েছিল সে সময়।
অবশ্য নির্দিষ্ট একটি দেশের ক্ষেত্রে ‘পোলিওমুক্ত’ সনদ দেয়ার কোনো ব্যবস্থা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেই। পোলিও ইরাডিকেশন ইনিশিয়েটিভের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পোলিওমুক্তির সনদ দেয় অঞ্চল ভিত্তিতে, নির্দিষ্ট কোনো দেশকে নয়।
এখন পর্যন্ত ছয়টি ডব্লিউএইচও অঞ্চলের মধ্যে তিনটি এই সনদ পেয়েছে। তিনবছর ধরে ৩৫টি সদস্য রাষ্ট্র পোলিওমুক্ত থাকার পর ১৯৯৪ সালে আমেরিকা অঞ্চল এই সনদ পায়, ২০০০ সালে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২৭টি দেশের অঞ্চলটি সম্মিলিতভাবে সনদ পায় এবং ২০০২ সালে এই সনদ পায় ইউরোপের ৫২টি রাষ্ট্র।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে ভুটান গত ২৬ বছর ধরে পোলিওমুক্ত থাকলেও অন্যান্য দেশ পোলিওমুক্ত না হওয়ায় সনদ পায়নি এ অঞ্চল।
ডব্লিউএইচওর বৈশ্বিক সনদ মান অনুযায়ী, এ অঞ্চলের ১১টি দেশ বর্তমানে পোলিওমুক্ত। তবে এই অবস্থান ধারাবাহিকভাবে তিনবছর ধরে রাখতে পারলেই সনদ দেয়া হয়।
জাতীয় টিকা দিবস পালনের কারিগরি কমিটির সদস্য জাতীয় অধ্যাপক এমআর খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভারত যেহেতু পোলিওমুক্ত হয়ে গেছে, সেহেতু আমাদের আর জাতীয় টিকা দিবস পালন করার দরকার নেই।”
এটা এতোদিন চালানোর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ভারত পোলিওমুক্ত না হওয়ায় এটার দরকার ছিল।”
সনদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্দিষ্ট কোনো দেশ ডব্লিওএইচওর পোলিওমুক্তির সনদ পায় না।
“এটা আঞ্চলিক সনদ। যদি পুরো অঞ্চল তিন বছরের জন্য পোলিওমুক্ত থাকে, তখন সনদ দেয়া হয়।”
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির অন্তত চার কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বাংলাদেশ ছাড়া এ অঞ্চলের ১১টি দেশের কোনো কোথাও এখন আর জাতীয় টিকা দিবস পালন করা হয় না।
নতুন করে পোলিও ধরা পড়লে আক্রান্তস্থলের আশপাশের ২০০ পরিবারকে টিকা দেওয়ার পদ্ধতি বাংলাদেশে চালু আছে বলে জানান তারা।
ইপিআই’র তথ্য অনুযায়ী, ২০০৬ সালে ২৩ ডোজ পোলিও টিকা খাওয়ানোর পরও দেশে শিশুরা পোলিওতে আক্রান্ত হয়েছিল। সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ভারত থেকে পোলিও ভাইরাস এসে থাকতে পারে। এছাড়া ২০০৫ সালে টিকা দিবস পালিত না হওয়ার নতুন করে সংক্রমণ ঘটে থাকতে পারে।
তবে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতে আসা নথিতে দেখা যায়, ২০০৬ সালে পোলিও টিকার ২৩টি ডোজ নেয়ার পরও এক শিশু পোলিও ভাইরাসে আক্রান্ত হয়।
চলতি বছর ৯ জানুয়ারি ও ১১ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ জাতীয় টিকা দিবস পালন করা হয়। জাতীয় টিকা দিবসের আওতায় পাঁচ বছরের কম বয়সী একটি শিশুকে একমাসের ব্যবধানে দুই ডোজ করে দুইবার পোলিও টিকা খাওয়ানো হয়।
বর্তমানে বিশ্বে তিনটি দেশে- আফগানিস্তান, নাইজেরিয়া ও পাকিস্তানে পোলিও মহামারি আকারে বিরাজ করছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এনআইএইচ/এইচএএইচ/জেকে/১০০৫ ঘ.