হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করা না হলে সোমবার রাত ৮টার পর আবার শাটডাউনে যাওয়ার ঘোষণা।
Published : 01 Sep 2024, 09:31 PM
দিনভর বন্ধ থাকার পর রোববার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি সেবা দেওয়া শুরু করেছেন চিকিৎসকরা। তবে বহির্বিভাগে সেবা আপাতত বন্ধ থাকবে।
আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের নেতা বলেছেন, আগামী সাত দিন সারাদেশেই হাসপাতালে বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা বন্ধ থাকবে।
নিরাপত্তা নিয়ে চিকিৎসকদের উদ্বেগের মধ্যে রাত সোয়া ৭টার দিকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের ভেতরে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। বিজিবি সদস্যরা মোতায়েন আছেন হাসপাতালে বাইরেও।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান রোববার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাত ৮টার দিকে জরুরি বিভাগে ফিরেছেন চিকিৎসকরা। তারা কাজে যোগ দিয়েছেন। এতে আমাদের হাসপাতালের ইমার্জেন্সি সার্ভিসগুলো চালু হয়েছে।
“ইমার্জেন্সি ক্যাজুয়ালিটি, নিউরো সার্জারি এগুলো হচ্ছে আমাদের ইমার্জেন্সি সার্ভিস। এছাড়া এইচডিইউ, আইসিইউ, ইনডোরে যারা এরই মধ্যে ভর্তি আছেন; জরুরি অপারেশন, সিসিইউ এসব সার্ভিস চালু হয়ে গেছে। পাশাপাশি জরুরি বিভাগের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক্সরে, সিটিস্ক্যানও চালু হয়েছে।”
বহির্বিভাগে রোগী দেখা আপাতত বন্ধ থাকবে বলেও জানান তিনি।
দুর্ঘটনায় আহত একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এবং কিডনি রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইন্টার্ন চিকিৎসককে মারধর এবং একটি ওয়ার্ডে ঢুকে দুটি পক্ষের মারামারির ঘটনায় রোববার সকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা।
তাদের এই কর্মসূচিতে অন্য চিকিৎসকরা সংহতি জানানোয় রোববার সকাল থেকে হাসপাতালের সব বিভাগে সেবা দেওয়া বন্ধ রয়েছে। ফলে নিদারুণ ভোগান্তিতে পড়েছেন দেশের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে আসা রোগী ও স্বজনরা।
দুপুরে তিন দফা দাবিতে সারাদেশের হাসপাতালগুলোয় ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা দেন চিকিৎসকরা। সে সময় সচিবালয়ে এক সভায় চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেওয়ার অনুরোধ জানান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূর জাহান বেগম।
পরে বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। ওই বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কারী আবুল হাসনাত এবং সারজিস আলমও উপস্থিত ছিলেন।
ঘণ্টাখানেক ধরে চলা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের উপদেষ্টা বলেন, চিকিৎসকরা কর্মবিরতি স্থগিত করতে রাজি হয়েছেন।
“তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তিনটা দাবি তাদের: হামলাকারীদের গ্রেপ্তার, চিকিৎসকদের নিরাপত্তা দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন, চিকিৎসা সুরক্ষা আইন করতে হবে।
“তাদের দাবি শুনেছি, কথা বলেছি। আক্রমণকারীদের কালকের মধ্যে গ্রেপ্তার করা হবে। বাকি দাবিগুলো ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। এরপর তারা আপাতত কর্মসূচি স্থগিত করেছেন।”
তবে উপদেষ্টার বক্তব্যের সময়ই পেছন থেকে হট্টগোল শুরু করেন চিকিৎসকরা।
পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক চিকিৎসক মো. আব্দুল আহাদ বলেন, উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে দেশের সব হাসপাতালের চিকিৎসকদের নিরাপত্তা চেয়েছিলেন তারা। কিন্তু স্বাস্থ্য উপদেষ্টা তাদের জানিয়েছেন শুধু বিভাগীয় হাসপাতালে নিরাপত্তা দেওয়ার মত জনবল আছে। এ কারণে তারা কর্মসূচি শর্তসাপেক্ষে স্থগিত করেছেন।
“তার মানে হলো একজন চিকিৎসকের নিরাপত্তার জন্য একজন পুলিশ, বিজিবি বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দিতে হবে। যেসব হাসপাতালে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে সেসব হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আমরা চিকিৎসা সেবা দেওয়া শুরু করব, জরুরি অস্ত্রোপচার হবে। কোনো ধরনের রুটিন সেবা, আউটডোর সেবা চালু থাকবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে না ততক্ষণ ইমার্জেন্সি চালু করা হবে না।"
২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসকদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি তুলে তিনি বলেন, “যদি ওই সময়ের মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করে জনসম্মুখে না আনা হয়, তাহলে আগামীকাল রাত ৮টার পর আবার শাটডাউন চলবে।”
আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী সাত দিন সারাদেশের সব হাসপাতালের আউটডোর বন্ধ থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, “এই সাত দিনের মধ্যে আমাদের আরও দুটি দাবি ছিল, এগুলো পূরণ করতে হবে। এর একটা হল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতায় স্বাস্থ্য পুলিশ নিয়োগ দিতে হবে। চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় চিকিৎসক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে।”