৮ বছর পর সম্মেলনে সাংস্কৃতিক জোট, নেতৃত্বে আসছেন কারা?

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট জন্মকালের অঙ্গীকার থেকে সরে গেছে বলে অভিযোগ আসছে সংস্কৃতিকর্মীদের মধ্য থেকেই।

পাভেল রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Sept 2022, 03:45 PM
Updated : 8 Sept 2022, 03:45 PM

আট বছর পর সম্মেলনে বসছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, অথচ হওয়ার কথা ছিল দুই বছর পর পর।

‘সংস্কৃতির শক্তিতে জেগে উঠো বাংলাদেশ’ স্লোগানে শুক্রবার সকাল ১০টায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে সম্মেলন উদ্বোধন করবেন সমাজবিজ্ঞানী অনুপম সেন।

বৃহস্পতিবার জোটের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “অসাম্প্রদায়িক শোষণমুক্ত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় পরিপূরক সাংস্কৃতিক জাগরণ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে অনুষ্ঠিত হবে এবারের সম্মেলন।”

সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ২০১৪ সালে সবশেষ সম্মেলন হয়েছিল। এরপর এবার হচ্ছে।

প্রতি দুই বছর পর পর সম্মেলন হওয়ার রীতি থাকলেও সেটি কেন হয়নি- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “প্রতিবারই যখন সম্মেলনের সময় হয়েছে, তখনই আমি এবং সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত হাসান আরিফ সম্মেলন করার জন্য নির্বাহী পরিষদকে বলেছি। পরে জোটের প্রতিনিধিদের মতামতের ভিত্তিতে কমিটির মেয়াদ বাড়ানো হয়।”

সকালে জোটের সম্মেলন জাতীয় সঙ্গীত ও পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে উদ্বোধন হওয়ার পর আলোচনায় অংশ নেবেন রামেন্দু মজুমদার, আসাদুজ্জামান নূর, মামুনুর রশিদ, মফিদুল হক, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, সারা যাকের, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এবং সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মদ সামাদ ও সদস্য সচিব আহ্কাম উল্লাহ্। সভাপতিত্ব করবেন সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ।

দুপুরের পর শুরু হবে কাউন্সিল অধিবেশন। সেখানে হবে পরবর্তী নেতৃত্ব নির্বাচন।

এবারের সম্মেলনে সাত শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। তবে ৬৪ জেলার সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন না, বিভাগীয় প্রতিনিধিরা সম্মেলনে প্রতিনিধিত্ব করবেন। তারাই নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন।

জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ প্রয়াত হয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহ।

দুজন সহসভাপতি ফকির আলমগীর ও মান্নান হীরা এবং নির্বাহী সদস্য ইশরাত নিশাতসহ বেশ কয়েকজন মারা গেছেন।

জোটের অন্তত ১০ জন কেন্দ্রীয় নেতা এবং একাধিক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া গেছে, এবারের সম্মেলনে খুব বেশি পরিবর্তন আসবে না। তবে তরুণ অনেকে যুক্ত হবেন জোটের নেতৃত্বে।

গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে জোটের প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সারাদেশে সাংস্কৃতিক জাগরণ তৈরি করতে জোটকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে জোর দেওয়া হয়েছে সেখানে।

সাংস্কৃতিক জোট প্রতিষ্ঠার পর থেকে কখনোই নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি হয়নি। সংগঠনটির শুরু থেকেই প্রতিনিধিদের মতামতের ভিত্তিতে দেশের অগ্রজ সংস্কৃতিজনদের নিয়ে একটি উপকমিটি জোটের কেন্দ্রীয় কমিটি ঠিক করে। পরে কেন্দ্রীয় কমিটি ৬৪ জেলার কমিটিকে নিয়ে জাতীয় পর্ষদ গঠন করে। এবারও অগ্রজ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে একটি উপকমিটি করা হয়েছে। তারা সম্মেলনে নতুন কমিটির ঘোষণা দেবে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সভাপতি পদে গোলাম কুদ্দুছকে বহাল রেখে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহকে।

এছাড়া কমিটিতে বেশ কিছু তরুণ মুখ যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া টেলিভিশন নাটকের অভিনয় শিল্পীদের সংগঠন ‘অভিনয় শিল্পী সংঘ’ জোটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।

গোলাম কুদ্দুছ বলেন, “জোটের প্রতিনিধিদের মধ্যে যেহেতু চিন্তার ঐক্য আছে। তাই অগ্রজের সাথে আলাপের মধ্য দিয়েই সব সময়, প্রতিনিধিদের মতামতের ভিত্তিতে জোটের কমিটি হয়।”

ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহ বলেন, “এই সম্মেলনের পর আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় একটি জাতীয় সংস্কৃতি সমাবেশ করা হবে। এতে সারাদেশের সংস্কৃতিকর্মীরা অংশ নেবেন। সাংস্কৃতিক জোট আরও সক্রিয় হবে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার জন্য।”

প্রতিবাদী রূপ ফিরবে?

সামরিক শাসনামলে রাজনৈতিক সংগ্রামের পরিপূরক হিসেবে সংস্কৃতিকর্মীদের তৎপরতায় গড়ে উঠেছিল সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। তবে প্রতিবাদী সেই কণ্ঠ এখন স্তিমিত বলে অভিযোগ রয়েছে সংস্কৃতিকর্মীদের মধ্যে।

১৯৮৪ সালে সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিষ্ঠাকালে সভাপতি ছিলেন ফয়েজ আহমেদ। ১৯৯৫ পর্যন্ত জোটের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। ১৯৯৫ সালে তিনি জোট থেকে পদত্যাগ করলেও এক বছর তার পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি।

সংস্কৃতিকর্মীদের অনেকেই মনে করেন, সাংস্কৃতিক জোট জন্মের অঙ্গীকার থেকে দূরে সরে গেছে। হারিয়েছে প্রতিবাদী রূপ। দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক হামলার মতো ঘটনা ঘটলেও তেমন জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। পারেনি সারাদেশের সংস্কৃতিকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করতেও।

গত ২৩ জুলাই ‘সাধারণ নাট্যকর্মী’র ব্যানারে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে অভিনেতা ও নাট্যনির্দেশক আজাদ আবুল কালাম বলেছিলেন, “গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এক সময় সক্রিয় ছিল এবং তাদের একটি রাজনৈতিক পরিচয় ছিল। সেই পরিচয় আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে থাকে, যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে।”

“আমাদের সচেতন হতে হবে। প্রতিবাদ না হলে সম্মিলিত হওয়া যায় না,” বলেন তিনি।

জোটের কেন্দ্রীয় সম্মেলন নিয়ে আজাদ আবুল কালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি এখনও মনে করি, সাংস্কৃতিক জোট তার প্রতিবাদী রূপে নেই। আমি আসলে জানি না, এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে পরিবর্তন আসবে কি না? তবে সম্মেলন সব সময় নতুনের রূপ দেয়। হয়ত নতুন কিছু হতে পারে।”

সাংস্কৃতিক জোটকে কেমন দেখতে চান- প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি বলবো, ফয়েজ আহমেদের নেতৃত্বে সাংস্কৃতিক জোট যেমন ছিল, তেমনটা হওয়া উচিত। রাজপথে মানুষের অধিকার নিয়ে সরব থাকবে সাংস্কৃতিক জোট। সরকার কিংবা ক্ষমতাবানদের অন্যায় নিয়ে সমালোচনা করবে, প্রতিবাদ করবে। সব মিলিয়ে সাংস্কৃতিক জোটকে প্রতিবাদী রূপে দেখতে চাই।”

সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম রামেন্দু মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে কোনো সংকটে মানুষের অধিকার আদায়ের লড়ায়ে সাংস্কৃতিক জোট যেন সরব থাকে, এজন্য সাংস্কৃতিক জোটকে আরও সক্রিয় করা প্রয়োজন।”

জোটের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাম্প্রদায়িক হামলার মতো ঘটনার প্রতিবাদ এবং দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক জাগরণের জন্য জোটকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। এই সম্মেলনে নেতৃত্বে খুব বেশি পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না। তবে অনেক তরুণ মুখ হয়ত যুক্ত হবেন। আশা করবো জোট আরও সরব হবে।”